
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কর্মকাণ্ড সীমিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন সংক্রান্ত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের অনুসন্ধান দলটি জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং সমস্যার মূল উৎস খুঁজে বের করতে ৫০টির মতো সুপারিশ করেছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, নিরপেক্ষভাবে কার্যকর, পক্ষপাতহীনতার সঙ্গে সব বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের ঘটনার তদন্ত করতে হবে। র্যাব ও এনটিএমসিকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এনটিএমসিকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংস্থাটি নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা খর্ব করেছে।
অন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাহিনীর কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকলে নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো; বিজিবি, ডিজিএফআইসহ গোয়েন্দা সংস্থার আইনি ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরা; আনসার, বিজিবিকে সামরিক বাহিনী থেকে মুক্ত রাখা; অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সামরিক বাহিনী অভ্যন্তরীণ যেকোনো পরিস্থিতিতে কতটা সময় কাজ করবে এবং মাঠে থাকবে, তা নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে জাতিসংঘ মূলত ৫টি খাতে জরুরি ভিত্তিতে ও ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ করেছে, সেগুলো হলো জবাবদিহি ও বিচারব্যবস্থা, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী, নাগরিক পরিসর, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক সুশাসন। সংস্থাটি বলছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে সবার আগে এসব খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।
গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত আন্দোলনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর গত ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ককে গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে তদন্ত করার জন্য একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পাঠানোর অনুরোধ করে বাংলাদেশ সরকার।
আগস্টে জাতিসংঘের প্রাক-তদন্ত দল ঢাকা আসে। আর সেপ্টেম্বরে মূল তদন্ত কাজ শুরু হয়। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন গত ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।