গাজায় শীঘ্রই অস্ত্রবিরতি ও বন্দি মুক্তি হতে যাচ্ছে: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শীঘ্রই একটি অস্ত্রবিরতি এবং বন্দি মুক্তির চুক্তি সম্পন্ন করতে চলেছেন তিনি। ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আমরা আপনাদের এ বিষয়ে আজ দিনের মধ্যেই, কিংবা হয়তো আগামীকাল জানাবো এবং আমাদের মনে হচ্ছে এর একটা সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে হামাস বলেছে তারা এখনও বৃহস্পতিবারের (২৯ মে) মার্কিন প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে।

জানাগেছে হামাস অন্যান্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করছে, যেমন প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ। হামাস প্রস্তাব নিয়ে হতাশ কারণ এতে ইসরায়েলকে সাময়িক অস্ত্রবিরতির শেষে পুনরায় যুদ্ধে ফেরার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছেন।

গত দুই সপ্তাহ ধরে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইসরায়েলি শীর্ষ কর্মকর্তাদের, যার মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও উপদেষ্টা রন ডারমার, এবং দোহায় ফিলিস্তিনি-আমেরিকান ব্যবসায়ী বিশারা বাহবাহের মাধ্যমে হামাস নেতাদের সাথে আলোচনা চালাচ্ছেন।

এর আগে হামাস দাবি করে ৬০ দিনের অস্ত্রবিরতি এবং ধাপে ধাপে বন্দীদের মুক্তির মার্কিন প্রস্তাবে তারা সম্মত হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, আর উইটকফ বলেছিলেন হামাস মার্কিন প্রস্তাবকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে এবং তাদের অবস্থান হতাশাজনক এবং অগ্রহণযোগ্য।

আগের ব্যর্থতা সত্ত্বেও, মঙ্গলবার (২০ মে) আলোচনা আবার শুরু হয়। বাহবাহ দোহায় শীর্ষ হামাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান, আর উইটকফ ওয়াশিংটনে রন ডারমারের সঙ্গে দেখা করেন। বুধবার (২১ মে) হামাস ঘোষণা করে, তারা উইটকফের সঙ্গে একটি সাধারণ কাঠামো নিয়ে কাজ করছে, যা স্থায়ী অস্ত্রবিরতি, গাজা থেকে ইসরায়েলের পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার, মানবিক সাহায্য পুনরায় শুরু এবং গাজার প্রশাসনের জন্য একটি প্রযুক্তি ভিত্তিক কমিটি গঠনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত। প্রস্তাবে দশজন জীবিত বন্দী ও মৃত বন্দীদের কঙ্কাল মুক্তির বিনিময়ে একটি নির্ধারিত সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের গ্যারান্টি অন্তর্ভুক্ত।

হামাসের এই বিবৃতি প্রকাশের দুই ঘণ্টার মধ্যেই উইটকফ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ওভাল অফিসে উপস্থিত হয়ে নতুন একটি চুক্তি খসড়া ট্রাম্পের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করেন।

একজন সিনিয়র ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসের নতুন খসড়া আগের সংস্করণের থেকে তেমন ভিন্ন নয়, কেবল কিছু শব্দ পরিবর্তনের মাধ্যমে ইসরায়েল ও হামাসের সম্মতি অর্জনের চেষ্টা করা হয়েছে। মূল পরিবর্তনগুলো হামাসের দাবি অনুযায়ী স্থায়ী অস্ত্রবিরতির ব্যাপারে গুরুতর আলোচনার নিশ্চয়তার কথাকে জোর দিয়েছে, যাতে ৬০ দিনের সাময়িক অস্ত্রবিরতির সময় ইসরায়েল একতরফা অস্ত্রবিরতি ভঙ্গ না করে—যেমনটি মার্চ মাসে হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন ভাষা খুঁজছে যা হামাসকে আশ্বস্ত করবে যে সাময়িক অস্ত্রবিরতি স্থায়ী অস্ত্রবিরতিতে পরিণত হবে, তবে একই সঙ্গে ইসরায়েলও নিশ্চিত থাকবে যে যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে পূর্বনির্ধারিত কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

ইসরায়েল চায় দশজন জীবিত বন্দী অস্ত্রবিরতির প্রথম দিনে মুক্তি পাবে, কারণ তারা আশঙ্কা করে হামাস পরে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারে। অপরদিকে হামাস ধাপে ধাপে মুক্তির পক্ষে, যাতে নিশ্চিত হতে পারে ইসরায়েল ৬০ দিনের মধ্যে অস্ত্রবিরতি ভঙ্গ করবে। ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভাষা নিয়ে খুব বেশি আপস করার জায়গা নেই, তারা আশা করছেন হামাস চাপের মধ্যে কিছুটা ছাড় দেবে এবং নেতানিয়াহু বন্দি মুক্তির সময়সীমা নিয়ে নমনীয় হবেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রকৃত পরীক্ষা এখনো বাকি রয়েছে।

সূত্র : এক্সিওস, টাইমস অব ইসরায়েল