পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা সংক্ষেপে আইএসআই (ISI)। এটি ছাড়াও পাকিস্তানে আরো দু’টি গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। ধারনা করা হয় ওয়ার্ল্ডের সব থেকে বিতর্কিত গোয়েন্দা সংস্থা এটি। সংস্থাটি ‘সরকারের ভিতরে সরকার’ পাকিস্তানের মাটিতে এই নামে বহুল পরিচিত ও সবচেয়ে ক্ষমতাধর।
১৯৪৮ এর মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত অস্ট্রোলীয় বংশদ্ভূত ব্রিটিশ আর্মি অফিসার ও পাকিস্তান সেনা বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল রবার্ট চাওথামের পরামর্শে ও তত্বাবধানে আইএসআই তৈরি হয়।
প্রাথমিকভাবে এর কাজ তিন বাহিনীর প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে সমন্নয় সাধন করা হলেও ১৯৫০ সাল থেকে একে আদালা করে শুধুমাত্র পাকিস্তান রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্বার্থ রক্ষা ও অখন্ডতা বজায় রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়।
দেশে-বিদেশে সংস্থাটির সম্ভাব্য সদস্য সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি এবং এর মধ্যে অনেক তথ্য প্রদানকারীও রয়েছে। এই সংস্থার প্রধান কাজ পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ও অখন্ডতা রক্ষা করা।
যে সকল ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান, বৈদেশিক গোয়েন্দাসংস্থা রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে যারা কাজ করে তাদের উপর নজরদারি করা ও প্রয়োজনে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা করা। বিদেশে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
ভারতের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধে কৌশলগত ভাবে নিজেদের অগ্রবর্তী রাখার উদ্দেশ্যে প্রতিবেশী সব দেশকে প্রভাবিত করা। সরকার ও সেনা বাহিনীকে বাইরে ও ভিতর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা। সরকারের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করা।
তিনজন ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেলের অধীনে তিনটি কোর বিষয়ের জন্য ৭ টি বিভাগ কাজ করে। ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স এর সব কাজ মুলত ৭টি ডাইরেক্টরেটে দ্বারা পরিচালিত হয়।
আইএসআই কর্মীরা সাধারণত সেনাবাহিনীর এসএসজি, নৌ বাহিনীর ও বিমান বাহিনী থেকে আসে। তবে নিচু স্তরের কর্মীদের অনেক সমইয় প্যারা মিলিটারি ও পুলিশ বাহিনী থেকেও নেয়া হয়।
সংস্থাটির মূল প্রতিদ্বন্দ্বি র এবং মোসাদ। বিখ্যাত মিশন গুলো হচ্ছে- সোভিয়েত বিরোধী আফগান যুদ্ধ, কার্গিল যুদ্ধ, ওয়ার অন টেরর ওয়াজিরিস্তান, বালুচিস্তান এ আকবর বুগাতি হত্যা।
আইএসআই সম্পর্কে আরোও তথ্য
আফগানিস্তানে মুজাহিদিন গেরিলাদের হাতে পশ্চিম থেকে আসা অস্ত্র এবং অর্থ পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করেছিল আইএসআই। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে (ডিসেম্বর ১৯৭৯ থেকে ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯) গেরিলাদের হাতে অস্ত্র যেত আইএসআই-এর হাত ধরেই। রুশ সেনার বিপুল ক্ষতি করেছিল আইএসআই। এই বিদ্রোহী গেরিলাদের থেকেই জন্ম তালিবানের।
এ পর্যন্ত কোন আইএসআই এজেন্ট ধরা পড়েননি। এটি একটি মিথ। কেননা, আইএসআই এজেন্ট সন্দেহে যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের কারও দায় পাকিস্তান সরকার কোনও দিন নেয়নি। সাধারণত কোনও দেশের সরকারই গুপ্তচরবৃত্তির দায় নেয় না। তাই আইএসআই চর ধরা পড়েননি, সে কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।
আইএসআই আল কায়দা এবং তালিবান জঙ্গিদের গ্রেফতার করে না বলে শোনা যায়। যদিও বাস্তব হিসাব বলছে, একাধিক তালিবান এবং আল কায়দা নেতা ধরা পড়েছে আইএসআই-এর হাতে। আমেরিকার সিআইএ-র হাতে হাত মিলিয়ে আইএসআই কাজ করেছে। রামজি ইউসেফ, আবদুল গণি বরাদর, আহমেদ ওমর সইদ শেখের মতো জঙ্গি নেতারা ধরা পড়েছে আইএসআই-এর তৎপরতায়।
আইএসআই-এর এজেন্ট নাকি অসংখ্য। কোথায়, কে আইএসআই এজেন্ট, তা নাকি বলা দুঃসাধ্য। আইএসআই-এর রিক্রুটমেন্ট সেল খুব পোক্ত। রিক্রুটমেন্টের তালিকায় সাধারণ চাকুরে থেকে উচ্চপদস্থ আধিকারিক— শোনা যায় তালিকা নাকি দীর্ঘ।