নামায শিক্ষা

নামায শিক্ষা

ফরয নামায

ইসলাম মুসলমানদের উপর দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছে। আর এগুলো হল, ফজরের নামায, যোহরের নামায, আসরের নামায, মাগরিবের নামায এবং এশার নামায।

১। ফজরের নামায: ফজরের নামায দুই রাকাত। এর সময় ফজরেসানী অর্থাৎ রাতের শেষাংশে, পূর্বাকাশে, শ্বেত আভা প্রসারিত হওয়া থেকে নিয়ে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত।

২। যোহরের নামায: যোহরের নামায চার রাকাত। এর সময় মধ্যকাশ থেকে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর মূল ছায়া ব্যতীত প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার সমান হওয়া পর্যন্ত।

৩। আসরের নামায: আসরের নামায চার রাকাত। এর সময় যোহরের সময় শেষ হবার পর আরম্ভ হয় যাওয়ালের ছায়া ছাড়া প্রত্যেকটি জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত। (এটি সবচে উত্তম ওয়াক্ত) আর জরুরী ওয়াক্ত সূর্য নিস্তেজ হয়ে রোদের হলুদ রং হওয়া পর্যন্ত।

৪। মাগরিবের নামায: মাগরিবের নামায তিন রাকাত। এর সময় সূর্যাস্তের পর থেকে শফক্বে আহমার অর্থাৎ পশ্চিম আকাশে লোহিত রং অদৃশ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত।

৫। এশার নামায: এশার নামায চার রাকাত। এর সময় মাগরিবের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। অথবা রাতের প্রথম অর্ধাংশ পর্যন্ত।

নামায যেভাবে আদায় করবেন

উল্লিখিত বিবরণ অনুযায়ী নামাযের স্থান ও শরীরের পবিত্রতা অর্জনের পর নামাযের সময় হলে নফল অথবা ফরয, যে কোন নামায পড়ার ইচ্ছা করুন না কেন, অন্তরে দৃঢ়সংকল্প নিয়ে কিব্‌লা অর্থাৎ পবিত্র মক্কায় অবস্থিত কাবা শরীফের দিকে মুখ করে একাগ্রতার সাথে দাঁড়িয়ে যাবেন এবং নিম্নবর্ণিত কর্মগুলো করবেন:

১। সেজদার জায়গায় দৃষ্টি রেখে তাক্‌বীরে তাহ্‌রীমা (আল্লাহু আকবার) বলবেন।

২। তাকবীরের সময় কান বরাবর অথবা কাঁধ বরাবর উভয় হাত উঠাবেন।

৩। তাকবীরের পর নামায শুরুর একটি দু’আ পড়বেন, পড়া সুন্নাত। দু’আটি নিম্নরূপ:

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلا إلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।

অর্থ: “প্রশংসা এবং পবিত্রতা বর্ণনা করছি আপনার হে আল্লাহ! বরকতময় আপনার নাম। অসীম ক্ষমতাধর ও সুমহান আপনি। আপনি ভিন্ন আর কোন উপাস্য নেই”।

ইচ্ছা করলে উক্ত দু’আর পরিবর্তে এই দোআ পড়া যাবে:

“اَللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اَللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اَللَّهُمَّ اغْسِلْنِي مِنْ خَطَايَايَ بِالْمَاْءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ”

উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা বাইদ্‌ বাইনী ওয়া বাইনা খাতাইয়াইয়া কামা বা’আত্‌তা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্‌কিনী মিন খাতাইয়াইয়া কামা য়ুনাক্‌কাছ ছাওবুল আবইয়াযু মিনাদ্‌দানাসি, আল্লাহুম্মাগ্‌সিল্‌নী মিন্‌ খাতাইয়াইয়া বিল মায়ি ওয়াছ্‌ ছালজি ওয়াল বারাদি”।

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাকে ও আমার গুনাহের মাঝে এতটা দূরত্ব সৃষ্টি করুন যতটা দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ঠিক ঐভাবে পাপমুক্ত করুন যেভাবে সাদা কাপড় ময়লামুক্ত হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহসমূহকে পানি দিয়ে ও বরফ দিয়ে এবং শিশির দ্বারা ধুয়ে দিন”। (বুখারী ও মুসলিম)

৪। তারপর বলবেন:

أَعُوْذُ باللهِِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

উচ্চারণ: “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম”।

অর্থ: “আমি আশ্রয় চাচ্ছি আল্লাহর নিকট অভিশপ্ত শয়তান থেকে। আরম্ভ করছি দয়াবান কৃপাশীল আল্লাহর নামে।”
এর পর সূরা ফাতিহা পড়বেন:

)الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ * الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ * مَلِكِ يَوْمِ الدِّينِ * إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ * اهدِنَا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ * صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ ( آمين

অর্থ: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সৃষ্টিকুলের রব। পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। বিচার দিবসের মালিক। আপনারই আমরা ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাই। আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত দিন। তাদের পথ, যাদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন। যাদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয় নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।”

৫। তারপর কুরআন হতে মুখস্থ যা সহজ তা পড়বেন। যেমন:

)إِذَا جَاء نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ * وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا * فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا(

অর্থ: “যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার পালককর্তার পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল।”

৬। তারপর আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সবচেয়ে বড়) বলে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর উত্তোলন করে দুই হাত হাঁটুর উপর রেখে পিঠ সোজা ও সমান করে রুকু করবেন এবং বলবেন

سُبْحَانَ رَبِّيِ الْعَظِيمِ

উচ্চারণ: “সুবহানা রাব্বিয়্যাল আযীম (পবিত্র মহান রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি)
এটি তিনবার অথবা তিনের অধিকবার বলা সুন্নত।

তারপর বলবেন:

“سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه”

“সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” (আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে শুনলেন যে তাঁর প্রশংসা করল)
বলে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে, ইমাম হোক অথবা একাকী হোক, সোজা দাঁড়িয়ে গিয়ে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর উত্তোলন করে বলতে হবে:

“رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْداً كَثِيراً طَيِّباً مُبَارَكاً فِيهِ مِلْءَ السَّماَوَاتِ وَمِلْءَ الأَرْضِ وَمِلْءَ ما بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ”

উচ্চারণ: রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু হামদান কাসীরান তাইয়্যেবান মুবারাকান ফীহ, মিল্‌ আস্‌সামাওয়াতি ওয়া মিলআলআরযি, ওয়ামিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শী’তা মিন শাইয়িন বা’দু”।

অর্থ: ” হে আমার প্রতিপালক! প্রশংসা আপনারই জন্য, প্রচুর প্রশংসা, যে প্রশংসা পবিত্র-বরকতময়, আকাশ ভরে, যমীন ভরে এবং এ উভয়ের মধ্যস্থল ভরে, এমনকি আপনি যা ইচ্ছে করেন তা ভরে পরিপূর্ণরূপে আপনার প্রশংসা”।

আর যদি মুক্তাদী হয় তাহলে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে উপরোল্লেখিত দু’আ رَبَّنَا ولَكَ الْحَمْد …. (রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদু…) শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

৮। তারপর اللهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবর) বলে বাহুকে তার পার্শ্বদেশ থেকে এবং ঊরুকে উভয় পায়ের রান থেকে আলাদা রেখে সেজদা করবেন। সেজদা পরিপূর্ণ হয় সাতটি অঙ্গের উপর, কপাল-নাক, দুই হাতের তালু, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের অঙ্গুলির তলদেশ। সেজদার অবস্থায় তিনবার অথবা তিন বারেরও বেশি এই দুআ পড়বেন।

سُبْحَانَ رَبِّيَ الاَعْلَى

উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা (পবিত্রতা ঘোষণা করছি আমার মহান প্রতিপালকের)
বলবেন এবং ইচ্ছা মত বেশী করে দু’আ করবেন।

৯। তারপর اللهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) বলে মাথা উঠিয়ে পা খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসে দুই হাত, রান ও হাঁটুর উপর রেখে বলবেন,

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَعَافِنِي وَارَزُقْنِي وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِيْ

উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মাগর্ফি‌লী ওর্য়া‌হামনী ওয়া আফিনী ওয়ারজুকনী ওয়াহ্‌দিনী ওয়াজবুরনী”।

অর্থ: ” হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন, নিরাপদে রাখুন, জীবিকা দান করুন, সরল পথ দেখান, শুদ্ধ করুন”।

১০। তারপর اللهُ أَكْبَر (আল্লাহু আকবার) বলে দ্বিতীয় সেজদা করবেন এবং প্রথম সেজদায় যা করেছেন তাই করবেন।

১১। তারপর اللهُ أَكْبَر (আল্লাহু আকবার) বলে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়াবেন। (এই ভাবে প্রথম রাকাত পূর্ণ হবে।)

১২। তারপর দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও কুরআনের কিছু অংশ পড়ে রুকু করবেন এবং দুই সেজদা করবেন, অর্থাৎ পুরোপুরিভাবে প্রথম রাকাতের মতোই করবেন।

১৩। তারপর দ্বিতীয় রাকাতের দুই সেজ্‌দা থেকে মাথা উঠানোর পর দুই সাজ্‌দার মাঝের ন্যায় বসে তাশাহ্‌হুদের এই দু’আ পড়বেন:

“اَلتَّحِيَاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، اَلسَّلامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِاللهِ الصَالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وأَشهدُ أَنَّ مُحَمَّداً عبْدُهُ وَرَسُولُهُ”

উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্‌সলাওয়াতু ওয়াত্‌তাইয়েবাতু, আস্‌সালামু আলাইকা আইয়ুহান্‌নাবিয়্যু ওয়া রহ্‌মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আস্‌সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্‌ সলেহীন, আশ্‌হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ”।

অর্থ : “সকল তাযীম ও সম্মান আল্লাহর জন্য, সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভাল কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপানার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের উপরে এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।”

তবে নামায যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট হয়। যেমন: ফজর, জুমআ, ঈদ তাহলে আত্‌তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ….. পড়ার পর একই বৈঠকে এই দরূদ পড়বেন:

“اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، وَ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ”

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্‌রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্‌রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ, ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাক্‌তা আলা ইব্‌রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্‌রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।

অর্থ: ” হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত সম্মানিত।”

আপনি মুহাম্মাদ ও তার বংশধরদের উপর বরকত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইব্‌রাহীম ও তার বংশধরদের উপর বরকত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত, সম্মানিত”।

তারপর চারটি জিনিস থেকে এই বলে পানাহ চাইবেন:

“اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ”

উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন আযাবি জাহান্নামা ওয়া মিন আযাবিল্‌ ক্বাবরি ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহ্‌ইয়া ওয়াল্‌মামাতি ওয়া মিন ফিত্‌নাতিল মাসীহিদ্‌দাজ্জাল”।

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি অবশ্যই আপনার নিকট জাহান্নাম ও কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। দজ্জালের ফিত্‌না এবং জীবন মৃত্যুর ফিত্‌না থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।”

উক্ত দু’আর পর ইচ্ছেমত দুনিয়া ও আখিরতের কল্যাণ কামনার্থে মাস্‌নুন দু’আ পড়বেন। ফরয নামায হোক অথবা নফল সকল ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি প্রযোজ্য। তারপর ডান দিকে ও বাম দিকে (গর্দান ঘুরিয়ে)

“اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ”

উচ্চারণ: “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলবেন।

আর নামায যদি তিন রাকাত বিশিষ্ট হয়, যেমন মাগরিব। অথবা চার রাকাত বিশিষ্ট হয়, যেমন যোহর, আসর ও এশা, তাহলে দ্বিতীয় রাকাতের পর (সালাম না ফিরিয়ে) “আত্‌তাহিয়্যাতু লিল্লাহি…. পড়ার পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর উত্তোলন করে সোজা দাঁড়িয়ে গিয়ে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে প্রথম দু’ রাকাতের মত রুকু ও সাজদা করতে হবে এবং চতুর্থ রাকাতেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। তবে (শেষ তাশাহ্‌হুদে) বাম পা, ডান পায়ের নীচে রেখে ডান পা খাড়া রেখে মাটিতে নিতম্বের (পাছার) উপর বসে মাগরিবের তৃতীয় রাকাতের শেষে এবং যোহর, আসর ও এশার চতুর্থ রাকাতের শেষে, শেষ তাশাহ্‌হুদ (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ……, ও দরূদ পড়বেন। ইচ্ছে হলে অন্য দু’আও পড়বেন। এরপর ডান দিকে (গর্দান) ঘুরিয়ে (আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলবেন। আর এভাবেই নামায সম্পন্ন হয়ে যাবে।

জামাআতের সহিত নামায

আল্লাহ তাআলা বলেন:

)وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ( (سورة البقرة: ৪৩)

অর্থ: “তোমরা নামায সুপ্রতিষ্ঠিত কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।” সূরা আল বাকারা, আয়াত: ৪৩

জামাআতের সাথে নামায পড়ার আগ্রহ ও উৎসাহ প্রদানে এবং তার ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, অপর দিকে জামাআত বর্জন ও জামাতের সাথে নামায আদায়ে অবহেলাকারীর বিরুদ্ধেও তার অবহেলার ক্ষেত্রে সতর্কতকারী হাদীস এসেছে।

ইসলামের কিছু ইবাদত একত্রিত ও সম্মিলিতভাবে করার বিধান রয়েছে। এ বিষয়টি ইসলামের উত্তম বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি বলা যায়। যেমন, হজপালনকারীরা হজের সময় সম্মিলিতভাবে হজ পালন করেন, বছরে দু’বার ঈদুল ফিত্‌র ও ঈদুল আযহায় (কুরবানী ঈদে) মিলিত হন এবং প্রতিদিন পাঁচবার জামাআতের সাথে নামায আদায় করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হন।

নামাযের জন্য এই দৈনিক সম্মিলন মুসলিমদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ, সহযোগিতা এবং সুন্দর সম্পর্ক স্থাপনের প্রশিক্ষণ দেয়। এটি মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, সহযোগিতা, পরিচিতি, যোগাযোগ এবং প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

জামাআতের সহিত নামায মুসলিমদের মধ্যে সাম্য, আনুগত্য, সততা এবং প্রকৃত ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। কেননা ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা, ছোট-বড় একই স্থানে ও কাতারে দাঁড়ায়, যা দ্বারা আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়। দ্বন্দ্ব, বিচ্ছিন্নতা, বর্ণ-জাতি, স্থান ও ভাষাগত গোঁড়ামি বিলুপ্ত হয়।

জামাআতের সহিত নামায কায়েমের মধ্যে রয়েছে মুসলিমদের সংস্কার, ঈমানের পরিপক্কতা ও তাদের মধ্যে যারা অলস তাদের জন্য উৎসাহ প্রদানের উপকরণ। জামাতের সাথে নামায আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীন প্রকাশ পায় এবং কথায় ও কর্মে মহান আল্লাহর প্রতি আহ্বান করা হয়, জামাআতের সাথে নামায কায়েম ঐ সকল বৃহৎ কর্মের ন্তর্ভুক্ত যা দ্বারা বান্দাগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং এটি মর্যাদা ও নেকি বৃদ্ধির কারণ।

জুমআর নামায

দ্বীন ইসলাম একতাকে পছন্দ করে। মানুষকে একতার প্রতি আহ্বান করে। বিচ্ছিন্নতা ও ইখতেলাফকে ঘৃণা ও অপছন্দ করে। তাই ইসলাম মুসলমানদের পারস্পরিক পরিচিতি, প্রেমপ্রীতি ও একতার এমন কোন ক্ষেত্র বাদ রাখেনি যার প্রতি আহ্বান করেনি। জুমআর দিন মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। তারা সেদিন আল্লাহর স্মরণ ও গুণকীর্তনে সচেষ্ট হয় এবং দুনিয়াবী কাজ-কর্ম ও ব্যস্ততা পরিত্যাগ করে আল্লাহ প্রদত্ত অপরিহার্য বিধান ফরয নামায আদায় করার জন্য এবং সাপ্তাহিক দারস তথা জুমআর খুতবা -যার মাধ্যমে খতীব ও আলিমগণ কল্যাণমুখী জীবনযাপনের পন্থা ও পদ্ধতি বয়ান করে থাকেন, সমাজের নানা সমস্যা তুলে ধরে ইসলামের দৃষ্টিতে তার সমাধান কী তা উপস্থাপন করেন – শোনার জন্য আল্লাহর ঘর মসজিদে জমায়েত হয়।

আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

)يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ * فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ(

অর্থ: “হে মুমিনগণ! জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এসো এবং বেচা-কেনা বন্ধ কর, এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর যাতে তোমরা সফলকাম হও”। (সূরা জুমআ, আয়াত: ৯-১০)

জুমআ প্রতিটি মুক্বীম (বাড়ীতে অবস্থানকারী), আযাদ (স্বাধীন). বালিগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) মুসলমানের উপর ওয়াজিব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত জুমআর নামায আদায় করেছেন এবং তিনি জুমআ পরিত্যাগকারী সম্পর্কে কঠোর উক্তি পেশ করে বলেছেন:

لَيَنتَهِيَنَّ أَقْوامٌ عَنْ وَدْعِهِمْ الجمعاتِ أو لَيختُمَنَّ الله على قُلوبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُونَنَّ من الغافِلِينَ (مسلم).

অর্থ: “যারা জুমআ পরিত্যাগ করে তাদের অবশ্যই ক্ষান্ত হওয়া উচিত, অন্যথায় আল্লাহ নিশ্চয় তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেবেন। ফলে তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হবে নিশ্চিতরূপেই”। (মুসলিম)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন:

“مَنْ تَرَكَ ثلاثَ جَمَعٍ تَهَاوَناً طَبَعَ الله عَلى قَلْبِهِ”

অর্থ: “যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুম্‌আ পরিত্যাগ করবে আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেবেন”।

জুমআর নামায দুই রাকাত। জুমআর ইমামের পিছনে একতেদা করে জুমআর এ দু’রাকাত নামায আদায় করতে হবে।

জুমআর নামাযের জন্য জামে মসজিদ হওয়া শর্ত। অর্থাৎ যে মসজিদে জুমআর নামায আদায় করা হয়, যেখানে মুসলমানরা একত্রিত হয় এবং তাদের ইমাম তাদেরকে সম্বোধন করে কথা বলেন, নসীহত-উপদেশ দেন, সরল পথ দেখান।

জুম্‌আর খুতবা চলাকালীন কথা বলা হারাম। এমনকি যদি কেউ তার পাশের ব্যক্তিকে বলে, ‘চুপ থাক’ তাহলেও সে কথা না বলার বিধান ভঙ্গ করল বলে পরিগণিত হবে।

মুসাফিরের নামায

আল্লাহ তাআলা বলেন:

) يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ (

অর্থ: “আল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন চান না।” (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫)

ইসলাম একটি সহজ ধর্ম। আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোন দায়িত্ব অর্পন করেন না এবং এমন কোন আদেশ তার উপর চাপিয়ে দেন না, যা পালনে সে অক্ষম। তাই সফরে কষ্টের আশংকা থাকায় আল্লাহ সফর অবস্থায় দুটো কাজ সহজ করে দিয়েছেন।


এক:
 নামায কসর করে পড়া। অর্থাৎ চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামায দু’রাকাত করে পড়া। অতএব, ( হে প্রিয় পাঠক পাঠিকা) আপনি সফরকালে যোহর, আসর এবং এশার নামায চার রাকাতের পরিবর্তে দু’রাকাত পড়বেন। তবে মাগরিব ও ফজর আসল অবস্থায় বাকি থাকবে। এ দুটো কসর করে পড়লে চলবে না। নামাযে কসর আল্লাহর তরফ থেকে রুখসত তথা সহজিকরণ। আর আল্লাহ যা সহজ করে দেন তা মেনে নেয়া ও সে অনুযায়ী আমল করা আল্লাহর কাছে পছন্দের বিষয়। যেরূপভাবে তিনি পছন্দ করেন আযীমত (আবশ্যিক বিধান) যথার্থরূপে বাস্তবায়িত হওয়া।

পায়ে হেঁটে, জীব-জন্তুর পিঠে চড়ে, ট্রেনে, নৌযানে, প্লেনে এবং মোটর গাড়িতে সফর করার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। সফরের মাধ্যম যাই হোক না-কেন, নামায কসর করে পড়ার ক্ষেত্রে এর কোন প্রভাব নেই। অর্থাৎ শরীয়তের পরিভাষায় যাকে সফর বলা হয় এমন সকল সফরেই চার রাকাতবিশিষ্ট নামায কসর করে পড়ার বিধান রয়েছে।

দুই: দুই নামায একত্র করে আদায় করা।

মুসাফিরের জন্য দুই ওয়াক্তের নামায এক ওয়াক্তে জমা করা বৈধ। অতএব, মুসাফির যোহর ও আসর একত্র করে অনুরূপভাবে মাগরিব ও এশা একত্র করে পড়তে পারবে। অর্থাৎ দুই নামাযের সময় হবে এক এবং ঐ একই সময়ে দুই ওয়াক্তের নামায আলাদা আলাদাভাবে আদায় করার অবকাশ রয়েছে। যোহরের নামায পড়ার পর বিলম্ব না করে আসরের নামায পড়বে। অথবা মাগরিবের নামায পড়ার পরেই সাথে সাথে এশার নামায পড়বে। যোহর-আসর অথবা মাগরিব-এশা ছাড়া অন্য নামায একত্রে আদায় করা বৈধ নয়। যেমন ফজর, যোহর অথবা আসর মাগরিবকে জমা করা বৈধ নয়।

মাসনূন যিকরসমূহ

নামাযের পর তিন বার ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি), পড়া সুন্নাত। তারপর এই দোয়া পড়বে:

“اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلامُ ومِنْكَ السَّلامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الجِلالِ وَالإِكْرَامِ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اَللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الجَدُّ “

উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা আনতাস্‌সালামু ওয়া মিনকাস্‌ সালামু তাবারাকতা ইয়া যাল্‌জালালি ওয়াল ইকরাম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর। আল্লাহুম্মা লা মানিয়া’ লিমা আ’তাইতা, ওয়া লা মু’তিয়া লিমা মানা’তা, লা ইয়ানফাউ যালজাদ্দি মিনকালজাদ্দু”।

অর্থ, হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়, আপনার কাছ থেকেই শান্তি আসে। আপনি বরকতময় হে প্রতাপশালী সম্মানের অধিকারী! আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই। তাঁরই বিশাল রাজ্য এবং তাঁরই সমস্ত প্রশংসা। আর তিনিই সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আপনি যা দান করতে চান তা কেউ রোধ করতে পারে না। আপনার শাস্তি হতে কোন ধনীকে তার ধন রক্ষা করতে পারে না”।

তারপর ৩৩ বার করে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা, প্রশংসা বর্ণনা এবং তাকবীর পড়বে। অর্থাৎ ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلحَمْدُ لِلَّهِ(আলহামদুলিল্লাহ) এবং ৩৩ বার اَللهُ أَكْبَرْ (আল্লাহু আকবার) পড়বে। সবগুলো মিলে ৯৯ বার হবে অতঃপর একশত পূর্ণ করার জন্য বলবে,

“لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ”

উচ্চারণ: “লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর”।

অর্থ: “আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক তাঁর কোন অংশীদার নেই। তাঁর বিশাল রাজ্য এবং সমস্ত প্রশংসা। আর তিনিই যাবতীয় বস্তুর উপর শক্তিমান”।

তারপর “আয়াতুল্‌ কুরসী”, (قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ) “কুল হুয়াল্লাহু আহাদ”, (قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ) “কুল আউযুবি রব্বিল ফালাক”, (قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ) “কুল আউযুবি রব্বিন নাস” পড়বে।

কুলহু আল্লাহু আহাদ, ফালাক, নাস এই তিনটি সূরা ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর তিন বার করে পড়া মুস্তাহাব।

উপরে উল্লেখিত যিক্‌র ছাড়া ফজর ও মাগরিবের পর এই দু’আ দশ বার পড়া মুস্তাহাব।

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِ وَ يُمِيْتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

উচ্চারণ: ” লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর”।

অর্থাৎঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই। তাঁরই রাজত্ব এবং তাঁরই সমস্ত প্রশংসা। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। আর তিনিই সকল বস্তুর উপর শক্তিমান”।

এ সমস্ত যিকর ফরয নয়, সুন্নাত।

সুন্নত নামায

সফর ছাড়া বাড়ীতে অবস্থান কালে বারো রাকআত সুন্নাত নামায নিয়মিত আদায় করা সকল মুসলিম নর নারীর জন্য মুস্তাহাব। আর তা হল যোহরের পূর্বে চার রাকাত ও পরে দু’রাকাত। মাগরিবের পরে দু’রাকাত। এশার পর দু’ রাকাত ও ফজরের আগে দু’রাকাত।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর অবস্থায় যোহর, মাগরিব ও এশার সুন্নত ছেড়ে দিতেন। তবে ফজরের সুন্নত ও বিতরের নামায সফর অবস্থায়ও নিয়মিত আদায় করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। ইরশাদ হয়েছে:

)لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ (

অর্থ: “নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদশ।” (সূরা আল আহযাব, আয়াত :২১)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

صَلُّوا كَما رَأَيْتُمُوني أُصَلِّي

অর্থ: “তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখেছ ঠিক সেভাবে নামায পড়”। (বুখারী)

আল্লাহই তাওফিক দাতা।

وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.

আমীন

সংকলন: ড. আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ আলী আযযাইদ

সম্পাদক: আবু শুআইব মুহাম্মাদ সিদ্দীক

সূত্র: ইসলাম, ওয়াকফ, দাওয়াহ ও ইরশাদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সৌদী আরব