নামজারী (Mutation) যে কারণে করবেন

নামজারী (Mutation) যে কারণে করবেন

নামজারী (Mutation) যে কারণে করবেন

নামজারী (Mutation) এর সংজ্ঞা

কোন ব্যক্তি কোন জমির মালিকানা লাভ করার পর তার নাম সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে অন্তর্ভূক্ত করা বা তার নিজ নামে নতুন খতিয়ান খোলার যে কার্যক্রম তাকে নামজারী বা মিউটেশন (Mutation) বলে । সাধারণত দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জরিপের মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। ফলে দুই জরিপের মধ্যবর্তী সময়ে উত্তরাধিকারের মাধ্যমে জমি প্রাপ্তির ফলে কিংবা দলিলের মাধ্যমে জমি হস্তান্তরের ফলে ভূমি মালিকানার পরিবর্তনে খতিয়ান হালনাগাদকরন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পরে। এক্ষেত্রে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নামজারী বা মিউটেশনের মাধ্যমে খতিয়ান হালকরনের কাজ করে থাকে।

আপনি যে কারণে নামজারী করবেন

১।  যে কোনো সময় জমি বিক্রয় করা যাবে (রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ৫২এ ধারা এবং সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৫৩সি ধারা অনুসারে, দলিলমুলে প্রাপ্ত জমির নামজারী খতিয়ান না থাকলে সে জমি বিক্রয় করা যায় না)।

২। ভূমির মালিকানা হালনাগাদ হবে।

৩। ভূমি উন্নয়ন কর আদায়/প্রদান করা সহজ হবে।

৪। খতিয়ান হালনাগাদ থাকার ফলে জরিপ কাজে সুবিধা হবে।

৫। সরকারের খাস জমি সংরক্ষণে সুবিধা হবে।

৬। নদী পয়স্তিজনিত কারনে রেকর্ড সংশোধন হবে।

৭। মূল ভূমি মালিকের মৃত্যুতে উত্তরাধিকারগণের মালিকানার নির্দিষ্ট অংশ সম্বলিত খতিয়ান প্রস্তুত হবে।

৮। রেজিস্ট্রিকৃত দলিলমূলে জমি হস্তান্তরের কারণে ক্রেতা বা গ্রহিতার নামে খতিয়ান প্রস্তুত হবে।

সর্বোপরি যে কোন বিতর্কের সময় মালিকানা বা দখল প্রমাণের ক্ষেত্রে নামজারি সংক্রান্ত কাগজাপত্রাদি গুরুত্বপূর্ন কাগজ হিসাবে বিবেচিত হবে।

নামজারী (Mutation) এর ধাপ সমুহ

১। সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন দাখিল। (ভূমি অফিসের নির্ধারিত ফরমে অথবা www.minland.gov.bd এই ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে ফরম ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়)।
২। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক সরেজমিন তদন্তের জন্য আবেদনটি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরণ।
৩। ইউনিয়ন ভূমি অফিস কর্তৃক প্রস্তাব/প্রতিবেদন সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে প্রেরণ।
৪। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে শুনানীর জন্য নোটিশ প্রদান।
৫। নোটিশ প্রাপ্তির পর যাবতীয় মুল কাগজ-পত্র সহ আবেদনকারী কর্তৃক শুনানীতে অংশ গ্রহন।
৬। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক আদেশ প্রদান।

বিভিন্ন ধরনের নামজারী ও এর সময়সীমা

নামজারী তিন ধরনের হয়ে থাকে
১। শুধু নামজারী বা নামপত্তনঃ
কোন রেকর্ডিয় মালিকের নামের পরিবর্তে ঐ একই খতিয়ানে পরবর্তী গ্রহীতা ও ওয়ারিশগণের নামভূক্ত হলে, তা শুধু নামজারী বা নামপত্তন হিসেবে পরিচিত। রাস্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ ধারা মতে এ ধরনের নামজারী বা নামপত্তন হয়ে থাকে।

২। নাম পত্তন ও জমা খারিজঃ
কোন দাগের জমি বিক্রয় বা অন্য কোন প্রকার হস্তান্তরের মাধ্যমে বিভক্ত হলে এবং ঐ বিভক্তির জন্য পৃথক হিসাব বা হোল্ডিং খুলে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের আদেশ দিলে তা নামপত্তন ও জমা খারিজ নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে জমির মালিকানার পরিবর্তন হবে এবং পৃথক খতিয়ান এবং হোল্ডিং নম্বর পড়বে। রাস্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ ও ১১৭ ধারা মতে নামপত্তন ও জমা খারিজ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়ে থাকে।

৩। নাম পত্তন ও জমাখারিজ একত্রিকরণঃ
কোন ব্যক্তির একই মৌজার ভিন্ন ভিন্ন খতিয়ানে জমি থাকলে, উক্ত খতিয়ানগুলোর মাধ্যমে প্রাপ্ত জমি একই খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন খতিয়ান প্রস্তুত করলে, তাকে নামপত্তন ও জমা একত্রীকরণ করা বলা হয়। রাস্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ ও ১১৬ ধারা অনুসারে এ প্রক্রিয়া সম্পদিত হয়।

সময়সীমা

১। মহানগরের ক্ষেত্রে ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) কর্মদিবস।

২। অন্যান্য ক্ষেত্রে ৩০ (তিরিশ) কর্মদিবস।

নামজারী নিষয়ক পরামর্শ ও আইনী প্রতিকার

পরামর্শ

১। ক্রয়মূলে বা অন্য কোন দলিলের মাধ্যমে জমি প্রাপ্তির পর মূল দলিল পেতে দেরি হলে উক্ত দলিলের নকল (সার্টিফাইড কপি) সংগ্রহ করে দ্রুত নামজারী করুন।

২। মূল মালিকের মৃত্যুর পর সকল ওয়ারিশ একত্রে বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রি করুন এবং প্রত্যেকে পৃথকভাবে নামজারী করুন।

৩। নামজারী খতিয়ান এবং ডিসিআর প্রাপ্তির সাথে সাথে আপনার নামে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হিসাব খোলা নিশ্চিত করুন এবং ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করে দাখিলা নিন।
৪। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও যে কোন অভিযোগের ক্ষেত্রে সরাসরি সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর সাথে যোগাযোগ করুন।
৫। ভূমি অফিসের নির্ধারিত ফরমে অথবা www.minland.gov.bd এই ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে ফরম ডাউনলোড করে নামজারীর আবেদন করুন।

আইনী প্রতিকার

দলিল-দস্তাবেজে কোন ত্রুটির কারণে বা অন্য যে কোনো কারণেই নামজারির আবেদন নামঞ্জুর হতে পারে। আবেদন নামঞ্জুর হলে প্রতিকারের সুযোগও রয়েছে। নামজারীতে আপনার অধিকার ক্ষুন্ন হলে এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে তার যথাযথ প্রতিকার না পেলে আপীল, রিভিশন বা রিভিউ এর মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারেনঃ

১। নামজারীর বিষয়ে কোন ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের নিকট আপীল করতে হবে, জেলা প্রশাসক কর্তৃক আদেশের বিরুদ্ধে ৬০ দিনের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের নিকট আপীল করতে হবে এবং বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের মধ্যে ভূমি আপীল বোর্ডে আপীল করতে হবে।

২। এ ছাড়া রিভিশনের পথও খোলা রয়েছে। অসন্তুষ্ট ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে কিংবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা তাঁর নিজের ইচ্ছায় নথি তলব করে সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন।

৩। যদি আপীল বা রিভিশন না করা হয়, তবে রিভিউ এর পথ খোলা থাকবে। রিভিউ মানে হচ্ছে পুনর্বিবেচনা করা। যে কর্মকর্তা আদেশ দিয়েছেন, তাঁর বরাবরে রিভিউ এর জন্য আবেদন করতে হবে। আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ এর জন্য আবেদন করতে হয়। সৌজন্যেঃ ল্যান্ডরেজিস্ট্রেশনবিডি