গ্রেফতার হলে কি করবেন?

গ্রেফতার হলে

কিভাবে গ্রেফতার করতে হয়?
কথা বা কাজের দ্বারা হেফাজতে আত্মসমর্পণ না করলে পুলিশ অফিসার অথবা গ্রেফতারকারী অন্য কোনো ব্যক্তি গ্রেফতার করার সময় যাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তার দেহ স্পর্শ বা আটক করবেন।

জোর বা বলপূর্বক গ্রেফতারের প্রতিরোধ করবেন কি?
না। কারণ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬(২) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বলপূর্বক তাকে গ্রেফতারের চেষ্টায় বাধা দেয় অথবা গ্রেফতার এড়াতে চেষ্টা করেন, তা হলে পুলিশ অফিসার অথবা অন্য ব্যক্তির গ্রেফতার কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পন্থা অবলম্বন করতে পারবেন।

মহিলাদের দেহ তল্লাশির পদ্ধতি
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫২ ধারায় মহিলাদের তল্লাশির পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো স্ত্রীলোকের দেহ তল্লাশি করার প্রয়োজন হলে শালীনতার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে তা অন্য একজন স্ত্রীলোক দিয়ে করাতে হবে।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির অধিকারসমূহ
বাংলাদেশের সংবিধনের ৩৩(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে :
* গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের স্থান থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত এর অতিরিক্ত সময় আটক রাখা যাবে না।
* সংবিধানের ৩৩(১)অনুচ্ছেদে : গ্রেফতারের কারণ জানানো, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শের সুযোগ দান ও আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
* সংবিধানের ৩৩(৪) অনুচ্ছেদে : কোনো অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না।
* অভিযোগ সংক্রান্ত সকল কাগজের নকল পাওয়া।
* পুলিশ গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়গণকে গ্রেফতারের কারণ ও স্থান জানাবেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী পুলিশ বিনা পরোয়ানায় কোনো ব্যক্তিকে আটক করতে পারে। তবে তা অবশ্যই আমলযোগ্য অপরাধ হতে হবে।
আমলযোগ্য অপরাধ কী? ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪(চ) অনুযায়ী এটি সেই সমস্ত অপরাধ যার জন্য পুলিশ বিনা পরোয়ানায় কোনো ব্যক্তিকে আটক করতে পারে। যেমন, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, রাহাজানি, অপহরণ ইত্যাদি।

যে সকল কারণে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে
* কোনো আমলযোগ্য অপরাধের সাথে জড়িত কোনো ব্যক্তি অথবা অপরাধের সাথে জড়িত বলে যুক্তিসঙ্গত বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আছে।
* আইনসঙ্গত কারণ ব্যতীত তার কাছে ঘর ভাঙ্গার কোনো সরঞ্জাম রয়েছে।
* সরকারের আদেশ দ্বারা যাকে অপরাধী ঘোষণা করা হয়েছে।
* চোরাইকৃত কোনো মালামাল বহন বা তার এ সম্পর্কে কোনো অপরাধ রয়েছে বলে যুক্তি সন্দেহ কারন রয়েছে।
* কোনো পুলিশের কাজে বাধা দানকারী বা আইনসঙ্গত হেফাজত থেকে পলায়ন বা পালানোর চেষ্টা।
* বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী থেকে পলায়নকারী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
* বাংলাদেশের বাইরে কোনো অপরাধ করেছেন, যা বাংলাদেশের আইনেও অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত।
* যাকে গ্রেফতারের জন্য অন্য কোনো পুলিশের কাছ থেকে অনুরোধ পাওয়া গেছে।
* নাম ও বাসস্থান জানাতে অস্বীকৃতি জানালে।
* কোনো ভবঘুরে ব্যক্তি বা অভ্যাসগত চোর বা ডাকাত হলে।

পুলিশ গ্রেফতার করলে করণীয়:

—পুলিশের নিকট নাম, ঠিকানা ও পেশাসহ পরিচয় তুলে ধরতে হবে।

—পেশজীবি বা ছাত্র হলে পরিচয়পত্র প্রদর্শন করা যেতে পারে। একারণে সবসময় পরিচয়পত্র সাথে রাখা উচিত।

—এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পরিচিত আইনজীবির ফোন নম্বর সাথে রাখা যেতে পারে এবং গ্রেফতারের পর দ্রুত আইনজীবিকে বিষটি জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা উচিত। অন্তত আত্নীয় বা বন্ধুকে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।

—ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে নেয়া হয়, আর যে কোন থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে সংশ্লিষ্ট থানায় নেয়া হয়।

—গ্রেফতারের পর কাউকে লকআপে রাখার আগে তার বিভিন্ন জিনিসপত্র যেমন, কাগজ, মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা ও ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি থাকলে তার কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হয়। তবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার সেগুলোর একটি তালিকা তৈরী করে আটককৃত ব্যক্তির সাক্ষর নেয়। এই সাক্ষর দেবার সময় তালিকাটি পড়ে নেয়া উচিত।

—পুলিশ অফিসারের নিকট কোন বিবৃতি দিলে তা পাঠ করে বা বিবৃতির ভাষ্য অবগত হয়ে তাতে স্বাক্ষর করা উচিত।

—গ্রেফতারের পর আইনজীবী বা পরিবারের কাউকে গ্রেফতারের বিষয়টি জানাতে না পারলে আদালতে হাজির করার পর ম্যাজিস্ট্রেটকে সরাসরি বিষয়টি জানানো উচিত। এতে আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

—গ্রেফতারের পর কোন পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার হলে বা  অসুস্থ হলে  আদালতের মাধ্যমে বা নিজ উদ্যোগে মেডিকেল চেকআপ করিয়ে নিতে নেয়া যায়। চেকআপ করালে এ রিপোর্টটি সংগ্রহে রাখা উচিত। চেকআপকারী ডাক্তারের পরিচয় জেনে রাখা উচিত কারণ তা পরবর্তীতে প্রয়োজন হতে পারে।

—পুরনো কোন মামলায় গ্রেফতার হলে দ্রুত ঐ মামলার নম্বরসহ কাগজপত্র নিয়ে আদালতে গিয়ে জামিন শুনানীর চেষ্টা করা যেতে পারে।

—নতুন কোন মামলায় বা কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার হলে একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে জামিন শুনানীর চেষ্টা করা যেতে পারে।

—সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, পুলিশের প্রশ্নে আপনার উত্তর কী হবে?

—পুলিশের মৌখিক প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে আপনাকে সাবধান হতে হবে। আপনাকে প্রশ্ন করা হবে স্বাভাবিক এবং বন্ধুত্বসুলভ, তবে উত্তর দিতে আপনার থেকে সচেতনভাবে। প্রশ্ন হতে পারে আজকের আবাহাওয়া বা আপনার পরিবার সম্পর্কে। কিন্তু উত্তরগুলি দেওয়ার আগে আপনি অবশ্যই চিন্তা করবেন যেন এই উত্তরগুলিকে আদালাতে আপনার বিপক্ষে উত্থাপন করা না হয়। মনে রাখবেন, পুলিশের উদ্দেশ্য আপনাকে চালান দেওয়ার জন্য কারন খুঁজে বের করা। ফৌজদারি বিধি ৩৩ (১) ধারা মতে আপনি আলোচনা বা পরামর্শের জন্য আপনার সুবিধামত যেকোন আইনজীবীর সাথে কথা বলতে পারেন।

—যদি কোন পুলিশ আপনার কোনো বর্ণনা জানতে চায়, তবে আপনি শুধু আপনার পরিচয় নাম ঠিকানা ইত্যাদি দিবেন এবং উক্ত পুলিশ অফিসারের নাম যেনে নিন। অন্য যেকোন প্রশ্নের উত্তর আপনি আপনার আইনজীবীসহ কোর্টে ছাড়া দিবেন না, এটা আপনার অধিকার। ফৌজদারি বিধি ৩৩(১) ধারা মতে আপনি আলোচনা বা পরামর্শের জন্য আপনার সুবিধামত যেকোন আইনজীবীর সাথে কথা বলতে পারেন। আপনি পুলিশের সাথে নিকট যা-ই বলুন না কেন, তা আপনার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে। অন্য যে কোন প্রশ্নের উত্তর নিবোক্তভাবে দিতে পারেন।

প্রশ্নঃ আপনার নাম?
উত্তরঃ কামাল উদ্দিন

প্রশ্নঃ আপনার পিতার নাম?
উত্তরঃ জামাল উদ্দিন

প্রশ্নঃ আপনাকে তো ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বিকেলে ধানমন্ডির কোথায় ছিলেন?
উত্তরঃ আমি শুধু কোর্টেই এই প্রশ্নের উত্তর দেব।

প্রশ্নঃ আপনি বিকেলে কীভাবে ধানমন্ডি গিয়েছিলেন?
উত্তরঃ- আমি শুধু কোর্টেই এই প্রশ্নের উত্তর দেব।

আপনি বাসা থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন?
উত্তরঃ- আমি শুধু কোর্টেই এই প্রশ্নের উত্তর দেব।