‘আমরা দেখছি দেশে কর্মসংস্থান বাড়লেও আয় কমছে। অর্থাৎ দেশ আয়হীন কর্মসংস্থানে পরিণত হয়েছে।’ এছাড়া বর্তমানে দেশে ব্যাংকিং খাতের কোনো অভিভাবক নেই বলে মনে করেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তার দাবি, দেশের ব্যাংকিং খাত বিকলাঙ্গে পরিণত হয়েছে।
সিপিডির ফেলো বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম ২০১৭ সাল ব্যাংকিং কেলেঙ্কারির বছর। এবার আমাদের মনে হচ্ছে ব্যাংকিং খাত নিতান্তই এতিমে পরিণত হয়েছে।’, ‘ব্যাংকের রক্ষকরাই ভক্ষক হিসেবে কাজ করছে। ফলে আমাদের অর্থনীতি এখন একটা ভ্রমের মধ্যে রয়েছে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের সুপারিশ তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির পক্ষে এসব কথা বলেন দেবপ্রিয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংবিধিবদ্ধ জমা বা সিআরআর এক শতাংশ কমানোর সমালোচনা করেন সিপিডির এই ফেলো। বলেন, ‘দেশের সমস্ত ব্যাংকের মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অথচ দেশের প্রধান ব্যাংকটিই তাদের ঘোষিত মুদ্রানীতি মানে না। ফলে এই খাতকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিকলাঙ্গ করে রেখেছে।’
সিআরআর কমিয়ে দিয়ে মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা সফল হবে না বলেও মনে করেন দেবপ্রিয়। বলেন, ‘তারল্য ঘাটতি একটি রোগের উপসর্গ, এটা কোনো রোগ না। রোগ হলো আপনি (সরকার) একটি বিকলাঙ্গ ব্যাংকিং ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছেন।’, ‘মুদ্রানীতি ও ব্যাংকিং খাতে সংযত থাকার দরকার আছে। একই রকমভাবে মুদ্রা বিনিময় হারে সংযত থাকার দরকার আছে। আপনি এটাকে গতিশীল ও স্থিতিশীল করবেন। বিনিময় হারে হয় তো ডলারের দাম বাড়বে। কিন্তু এমনভাবে মজুদ বাড়িয়ে সামাল দিতে হবে যাতে আমদানি ব্যয় উস্কে না দেয়। সুদের হার, বিনিময় হার, ঋণের প্রবাহ সংযতই রাখতে হবে।’
চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব ঘাটতি ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলেও পূর্বাভাস দেন দেবপ্রিয়।
সিপিডির দাবি, ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ তিন বছর স্থবিরতা দেখা দেয়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি সরকারি বিনিয়োগে হচ্ছে। ফলে দেশে আয়হীন কর্মসংস্থান দেখা যাচ্ছে। এতে করে প্রবৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছে না। দেবপ্রিয় বলেন,‘প্রবৃদ্ধি, উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও আয় এই চারটির মধ্য সামঞ্জস্য আছে কি না দেখতে হবে। সামঞ্জস্য না থাকলে বুঝতে হবে সমস্যা আছে।’
রোহিঙ্গাদের জন্য আট হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পেছনে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটে সরকারের এক বিলিয়ন ডলার ব্যয় (৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা) ধরার প্রস্তাব দিয়েছে সিডিপি।
রোহিঙ্গাদের মৌলিক সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, ‘যদিও সরকার রোহিঙ্গাদের ভাষানচরে আবাসন নির্মাণসহ নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তারপরও রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, পুষ্টি ও নিরাপত্তায় আসছে বাজেট এক বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখতে হবে।’