ঈদকে সামনে রেখে পুলিশ-র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগে রাজধানীর অলি-গলিতে মাদক বেচাকেনা চালানো হচ্ছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, জুরাইন, হাজারিবাগ ও আনন্দবাজার, লালবাগ, চকবাজার, চানখারপুর, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে মাদক ব্যবসার তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, ঈদে বাড়তি আয়ের লক্ষ্যমাত্র নিয়ে মাঠে নেমেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযানের ফলে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের দাম দ্বিগুন, তিনগুন হলেও কোথাও একেবারে বন্ধ হয়নি। এসব এলাকায় পাইকারি ও খুচরা সব ধরনের বেচাকেনা চলছে। নগরীর কদমতলীর মুরাদপুর, জুরাইন রেলগেইট, যাত্রাবাড়ীর কাজলামোড়, কুতবখালী, ধোলাইপাড় এলাকায় প্রকাশ্যেই ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল বিক্রির তথ্য নিশ্চিত করেছেন এলাকার বাসিন্দারা।
কদমতলীর মুরাদপুরের এক বাসিন্দা বলেন, এই এলাকায় থানার সোর্সরা আসামি ধরার নামে পুলিশের সঙ্গে গাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। তারাই টাকার বিনিময়ে মাদক ব্যবসার সুযোগ করে দেয়। আবার কেউ মাদক বিক্রিতে বাধা দিলে সোর্সরা তাদেরকে কৌশলে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। কদমতলী থানার পশ্চিম ও পূর্ব কদমতলীর ওয়াসা বটতলা, সিএনজি স্টেশন, মোহাম্মদবাগ সিএনজি স্টেশন, মোহাম্মদবাগ পানির পাইপ, পোস্তখলা, ওয়াসা পাম্পসহ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা চালানো হচ্ছে।
সরকার দলীয় নেতা-কর্মী পরিচয়ে এই মাদক ব্যবসা ও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছে। তার মধ্যে পারুল আক্তার পারুলী, খোকন, শাহাবুদ্দিন, মালেক মাদক ব্যবসা করছেন। আর সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী, মাকসুদা, আখী, লাভনী কতিপয় পুলিশ সদস্যের সহযোগিতায় এসব এলাকায় মাদক ব্যবসা করছেন। তারা গভীর রাত পর্যন্ত এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে থাকে। আর অবৈধ ভিওআইপির ব্যবসাও চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি সাহাবুদ্দিনের আত্মীয় রনিকে স্থানীয় হাতে নাতে আটকের পর গণপিটুনী দিয়ে পুলিশের সোপর্দ করেছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দা কামাল আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তি এসব তথ্য জানিয়েছেন।
অপর সূত্র জানায়, ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকায় মাদকের ব্যবসা আবারো শুরু করা হয়েছে। দিনে রাতে অনেকটা প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হোরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য। এ কাজে প্রধান ভূমিকা পালন করছে থানা পুলিশের কতিপয় সোর্স, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা, ছাত্রনেতাসহ কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসা তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা।
গেন্ডারিয়া এলাকার এক মাদক ব্যবসায়ী জানান, এক সপ্তাহ আগে পুলিশ ব্যস্ত ছিল মাদক ও জঙ্গি বিরোধী অভিযান নিয়ে। তখন ঢাকার বাইরে থেকে বড় বড় মাদকের চালান আসা বন্ধ ছিল। মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের কারণে অনেকেই ঝুঁকি নিতে সাহস করছে না। তবে এই অভিযানের সময়ও খুচরা বিক্রি বেড়েছে।
মাসুম নামের এক রিকসা চালক জানান, আগে গাঁঞ্জার পুটলা পাওয়া যেত ৩০ থেকে ৪০ টায়। এখন একটি স্টিকও পেতে কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। এখন একটি স্টিক কিনতে ১০০ টাকা লাগে। তাও আমার পুলিশের ভয়ে দিতেও চায় না।
আবার রাজধানীর লালবাগ থানার শহীদনগর, আমলীগোলা, আমলীগোলা বালূরঘাট, নবাবগহ্জ পার্ক, কিল্লার মোড়, বাশপট্টি, লবন কারখানা, কামরাঙ্গীর চরের বড় গ্রাম, রসুলপুর, হাসান নগর, আলী নগর, খোলা মোড়া, কমিল্লাপাড়া, হুজুরপাড়া, কয়লার ঘাট, লবন ফ্যাক্টরী, চকবাজারের বিভিন্ন এলাকায় আবারো মাদক ব্যবসা চলছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আর এসব এলাকায় লালবাগের মাদক সম্রাট বাদল ওরফে সুকানি বাদল সরবরাহ করছেন। তার স্ত্রী সাথী ও নাজিরা নানা কৌশলে মাদক খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পৌছে দিচ্ছেন বলে অভিযোগে জানা গেছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চারু কলার পাশে প্রকাশ্যে গাঁজা বিক্রি ও সেবন করা হচ্ছে। পার্কের বিভিন্ন গেটে আনসার সদস্যরা ডিউটি করলেও মাদক ব্যবসায়ী বুক ফুলিয়েই গাঁজার ব্যবসা করা হচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন পেশার লোকজন এসে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাদক সেবন করছে। আর পার্কের দক্ষিণ পাশের আনসার ক্যাম্পের পেছনেই ইয়াবা সেবন ও ব্যবসা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওই মাদকের স্পট চালাচ্ছে। পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না । এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) আবু হাসান সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পর্যায়ক্রমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় হচ্ছে।