খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি। বুধবার নয়া পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘ভোট ডাকাতি, ভোট সন্ত্রাস, জাল ভোট, ভোট কেন্দ্র দখল এবং অবৈধ অস্ত্রের আস্ফালন ছাড়া আওয়ামী লীগের বিজয় নিশানে হাওয়া লাগে না। গতকালের ভোটে নিরস্ত্র ভোটারদের ওপর অবৈধ সরকারের অবৈধ ক্ষমতা প্রদর্শন হয়েছে। আমি দলের পক্ষ থেকে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করছি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করছি।’
তিনি বলেন, ‘ভোট শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার লজ্জায় গণমাধ্যমের সামনে না এলেও ইসি সচিব গণমাধ্যমে বলেছেন, “খুলনায় চমৎকার ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। উনি ঠিকই বলেছেন। কেসিসি ভোটের পরিবেশই হচ্ছে ‘শেখ হাসিনা মার্কা’।
‘যে নির্বাচনে দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে বাবার সঙ্গে ভোট দিতে পারে, কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই ভোটারদের ভোট দেওয়া হয়ে যায়, পুলিশের সহায়তায় ভোট কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির উৎসব চলে, ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও ব্যালট পেপার আগেই শেষ হয়ে যায়, কেন্দ্র দখল করে আধা ঘণ্টায় ১২০০ ভোট দেওয়া হয়, কেন্দ্র দখল করে লাইন ধরে জালভোটের উৎসব চলে— সে রকম নির্বাচনকে তো চমৎকার বলবেনই নির্বাচন কমিশন’বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘ইসি থেকে বলা হয়েছে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ৬৫ শতাংশের ওপরে। মূলত, সেখানে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৩০ শতাংশেরও কম। সন্ত্রাসীদের বাধা ও সন্ত্রাসী হামলার মুখে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের অধিকাংশকেই কেন্দ্র থেকে ভোট দিতে না পেরে ফিরে গেছেন।
‘ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা নেই, সামর্থ্য নেই, যোগ্যতাও নেই’বিএনপির এই নেতার।
রিজভী বলেন, ‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এক নজীরবিহীন ভোট ডাকাতির দক্ষ যজ্ঞ জনগণ প্রত্যক্ষ করলো। ভোট দিতে গিয়ে ধানের শীষের ভোটার ও সমর্থকরা যেভাবে নিগৃহীত হয়েছেন তা কোনো সুস্থ নির্বাচন পদ্ধতি হতে পারে না।’
‘ভোটের দিন নৌকার প্রার্থীর লোকজনদের ছিল সীমাহীন আধিপত্য ও বেপরোয়া চলাফেরা। গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা লাইন ধরে বিভিন্ন কেন্দ্রে জালভোট প্রদান করে। অনেক কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসাররা আওয়ামী ঝটিকা বাহিনীকে একচেটিয়া ‘ভোট কাস্টিং’ এ সহায়তা করে’’বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘তারা কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্যালট পেপারের বান্ডিলে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে। কোথাও কোথাও অবশ্য আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের বল প্রয়োগ করে বের করে দেয় এবং কোথাও কোথাও মারধরও করে। পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটরা এসব দেখেও না দেখার ভান করে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমীনুল ইসলামসহ অন্যরা।
মঙ্গলবার খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক।
তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯০২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৯৫৬ ভোট। ২৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে ভোট স্থগিত হওয়া তিন কেন্দ্র বাদে বাকি ২৮৬টি কেন্দ্রের ফলে ৬৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে খালেক বিজয়ী হয়েছেন।