টেনিস বিশ্বের মহারথীদের যত কীর্তি

টেনিস বিশ্বের মহারথীদের যত কীর্তি

টেনিসের বছরের চারটি প্রধান টুর্নামেন্টকে বলা হয় গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্ট। এগুলো ‘মেজর’ নামেও পরিচিত। সবচেয়ে বেশি র‍্যাঙ্কিং পয়েন্ট, প্রাইজ মানি আর তারকাখ্যাতি এই তিনে মিলিয়ে গ্র্যান্ড স্লামগুলো হল টেনিসের সর্বোচ্চ সম্মানজনক আসর।

জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, মে-জুন মাসে ফ্রেঞ্চ ওপেন যেটি রোঁলা গ্যারো হিসেবেও পরিচিত, জুন-জুলাই মাসে উইম্বলডন আর আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ইউএস ওপেন- এই চারটি টুর্নামেন্টকেই বলা হয় গ্র্যান্ড স্লাম। প্রতিটি টুর্নামেন্টই চলে দুই সপ্তাহ জুড়ে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন আর ইউএস ওপেনে খেলা হয় হার্ড কোর্ট বা শক্ত কোর্টে, ফ্রেঞ্চ ওপেনে লাল মাটির কোর্টে আর উইম্বলডনে খেলা হয়ে ঘাসের কোর্টে। এদের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো টুর্নামেন্ট হল উইম্বলডন, যেটি চলছে ১৮৭৭ সাল থেকে। ইউএস ওপেন শুরু হয় ১৮৮১ সালে, রোঁলা গ্যারো ১৮৯১ সালে আর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শুরু হয় ১৯০৫ সালে। ১৯২৪-২৫ সাল থেকে এই চারটি টুর্নামেন্টকে গ্র্যান্ড স্লাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এর আগ পর্যন্ত কেবল উইম্বলডনই ছিল মেজর টুর্নামেন্ট। আর পুরুষদের টেনিস খেলা নিয়ে সার্বিক ভূমিকা পালন করে যে সংস্থা তার নাম এসোসিয়েশন অব টেনিস প্রফেশনালস, যেটি ‘এটিপি’ নামেই পরিচিত।

Tanis

১৯৬৮ সাল থেকে সূচনা হয়েছিল পেশাদারী টেনিসের ‘ওপেন যুগ’ এর, পুরুষদের গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জয়ের রেকর্ডের প্রথম পাঁচের মধ্যে চারজনই এই যুগের। ওপেন যুগের আগের খেলোয়াড় হিসেবে তালিকায় আছেন রয় এমারসন। ১৮ টি গ্র্যান্ড স্লাম জিতে এক নম্বরে আছেন ফেদেরার, ১৪ টি করে জিতে এরপর আছেন পিট সাম্প্রাস ও রাফায়েল নাদাল, আর ১২ টি করে জিতে এই তালিকায় রয়েছেন রয় এমারসন ও নোভাক জোকোভিচ। ওপেন যুগে পুরুষদের গ্র্যান্ড স্লামের এই সেরা চার খেলোয়াড়কে নিয়ে আজকের লেখা, থাকছে চার কিংবদন্তির অসামান্য সব রেকর্ডের কিছু চুম্বকাংশ।

নোভাক জোকোভিচ

নোভাক জোকোভিচকে নির্দ্বিধায় বলা যায় টেনিসের রেকর্ডের বরপুত্র। বিশ্ব র‍্যাঙ্কিঙে এই মুহূর্তে ২ নম্বরে আছেন এই সার্বিয়ান খেলোয়াড়। ১৯৮৭ সালে জন্ম নেয়া জোকোভিচ ডান হাতেই করছেন বিশ্বশাসন, ওপেন যুগে সাফল্যের হারের দিক থেকে এখনও তিনি শ্রেষ্ঠ, জিতেছেন খেলোয়াড়ি জীবনের ৮৩ শতাংশ ম্যাচই।

জোকোভিচ গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন মোট ১২ বার। ইতিহাসে ৮ জন পুরুষ খেলোয়াড় ‘ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্লাম’ জিতেছেন, অর্থ্যাৎ প্রতিটি গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্ট অন্তত একবার করে জিতেছেন। জোকোভিচ আছেন এই তালিকায়। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে জিতেছেন তিনবার, উইম্বলডনে তিনবার, ইউএস ওপেনে দুইবার আর ফ্রেঞ্চ ওপেনে জিতেছেন একবার শিরোপা।

১৯৩৮ সালে ডন বাজ, ১৯৬২ ও ১৯৬৯ সালে রড লেভারের করা রেকর্ড ছুঁয়েছেন তিনি ২০১৬ সালে। জিতেছেন একটানা চারটি ভিন্ন ভিন্ন গ্র্যান্ড স্লাম, ২০১৫ তে উইম্বলডন থেকে শুরু করে ২০১৬ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেন পর্যন্ত। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনকে একেবারে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন এর মধ্যেই। এখানে খেলেছেন রেকর্ডসংখ্যক ৬ বার ফাইনাল, রজার ফেদেরারও করেছেন একই রেকর্ড। কিন্তু জেতার রেকর্ডের দিক থেকে এগিয়ে জোকোভিচ। ৬ বারের মধ্যে ৬ বারই ফাইনাল জিতে পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে রেকর্ডসংখ্যক ৬ বার শিরোপা। এখানে আছে তার একটানা ৩ বার শিরোপা আর একটানা ২৫ টি ম্যাচ জয়ের রেকর্ডও।

১৬,৯৫০ পয়েন্ট নিয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী হিসেবে র‍্যাঙ্কিং এর ১ নম্বরে ছিলেন। তিনটা ভিন্ন কোর্টে একটানা ৪ বার গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে। এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুরের অংশ হিসেবে একই সাথে ৪ টি গ্র্যান্ড স্লাম ও বর্ষ সমাপনী টুর্নামেন্ট জেতার রেকর্ড, ২০১৫-১৬ মিলিয়ে একটানা ৩০ টি গ্র্যান্ড স্লামের ম্যাচ জেতা, ৮৭.৬ শতাংশ ম্যাচ জিতে হার্ড কোর্টের শ্রেষ্টত্ব অর্জন- এমন করে জোকোভিচের রেকর্ডের কথা বলতে গেলে অজস্র।

২০০৭ সালেই ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে জোকোভিচ হারিয়েছিলেন তখনকার র‍্যাঙ্কিং এর সেরা ৩ জন, রডিক, নাদাল আর ফেদেরারকে। ২০১১ সালে র‍্যাঙ্কিং এর ১ নম্বরে থাকা নাদালকে হারিয়েছেন একটানা ৫ বার। ২০১৫ সালে এক সিজনেই হারিয়েছেন র‍্যাঙ্কিং এর শীর্ষে থাকা দশজনকে। ৭ টি ভিন্ন ভিন্ন টুর্নামেন্টেই একটানা ৩ বার করে শিরোপা জেতার বিরলতম রেকর্ডও করেছেন জোকোভিচ।

টেনিসের আরেক প্রখ্যাত সিরিজ টুর্নামেন্ট ‘এটিপি মাস্টার্স ১০০০’ এর ইতিহাসে রেকর্ডসংখ্যক ৩০ বার ট্রফি জিতেছেন। তার পরে আছেন নাদাল ২৮ টি ও ফেদেরার ২৪ টি শিরোপা নিয়ে। ২০১৫ সালে এখানে এই সিরিজে এক সিজনেই জিতেছেন ৬ টি শিরোপা। প্রায় ১১ কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কার নিয়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রাইজ মানি অর্জনকারী খেলোয়াড়ের স্থানটুকু দখল করতেও বাকি রাখেননি টেনিসের এই বিস্ময় মানব।

পিট সাম্প্রাস

টেনিসের সর্বকালের সেরাদের একজন হলেন পিট সাম্প্রাস। ১৯৭১ সালে জন্ম নেয়া এই মার্কিন খেলোয়াড় সার্ভ করার ক্ষেত্রে টেনিস ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নাম হিসেবে পরিচিত। এমনকি এজন্য তার ডাকনামও হয়েছিল ‘পিস্তল পিট’। ডানহাতি এই খেলোয়াড়ের ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮- ছয় বছর একটানা বর্ষসেরা থাকার রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি আজও।

সাম্প্রাস গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছিলেন ১৪ বার। তার আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্লামের রেকর্ড ছিল ওপেন যুগের আগে রয় এমারসনের, ১২টি। ওপেন যুগে এসে সাম্প্রাস প্রথমবারের মত ভাঙেন এমারসনের রেকর্ড। উইম্বলডনে ৭ বার, ইউএস ওপেনে ৫ বার আর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ২ বার শিরোপা জিতেছেন তিনি।

১৯৯০ সালে ইউএস ওপেন জিতে হয়েছেন ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ইউএস ওপেন শিরোপাধারী। আবার ইউএস ওপেনের সেরা খেলোয়াড়ও বলা যায় তাকে। এখানে খেলা ৮৮.৮ শতাংশ ম্যাচই জিতেছেন, এদিক থেকে তার পরে আছেন ফেদেরার। ১৯৯৫ থেকে ২০০০ পর্যন্ত সব মিলিয়ে তিনি যে ৮ বার ফাইনালে গিয়েছেন, প্রতিবারই জিতেছেন গ্র্যান্ড স্লাম, আজও যেটি রেকর্ড হয়ে আছে। উইম্বলডনে শিরোপা জিতেছেন একটানা ৪ বার, একটানা ৫ বার জিতে তার চেয়ে এগিয়ে আছেন শুধু বিয়োন বোর্গ আর রজার ফেদেরার।

’৯৩ থেকে ’৯৮ এ টানা ছয়বার বর্ষসেরা খেলোয়াড় হবার রেকর্ডটার কথা শুরুতেই বলেছি। মোট ছয়বার বর্ষসেরা হওয়াটাও কিন্তু আরেকটি রেকর্ড, এই জায়গায় বিয়োন বোর্গ আর ফেদেরার আছেন তার পরে, দুজনে বর্ষসেরা হয়েছেন ৫ বার করে। ঘাসের কোর্টের ইতিহাসের জয়ের হারের দিক থেকে এখনও সেরা তিনিই, এখানে তার সাফল্যের হার ৯০ শতাংশ।

ফেদেরারের সাথে উইম্বলডনে রেকর্ড সংখ্যক গ্র্যান্ড স্লাম জেতার তালিকায় তিনি আছেন একসাথে, দুজনের ঝুলিতেই আছে ৭ টি করে উইম্বলডন শিরোপা। আরও একটা বিরল রেকর্ড আছে সাম্প্রাসের, তবে সেটা কেইন রসওয়েলের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে হয়েছে। তারা দুজনই ইতিহাসের সেই সৌভাগ্যবান খেলোয়াড় যারা গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন একই সাথে টিনেজ বয়সে, বয়স বিশের কোঠায় থাকাকালীন, এবং ত্রিশের কোঠায় আসার পরেও! ২০০২ সালে অবসর নেয়ার আগে প্রায় সাড়ে চার কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কার জিতে পিট সাম্প্রাস আছেন প্রাইজ মানি জেতার রেকর্ড তালিকার ৫ নম্বরে।

রাফায়েল নাদাল

এই স্প্যানিশ কিংবদন্তির পুরো নাম রাফায়েল নাদাল পেরেরা। লাল মাটির ‘ক্লে কোর্টে’ অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিচরণ এর মধ্যেই এই বামহাতি খেলোয়াড়কে এনে দিয়েছে ক্লে কোর্টের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠদের একজনের তকমা। ভূষিত হয়েছেন ‘কিং অব ক্লে’ উপাধিতে। ফ্রেঞ্চ ওপেনে ৯ বার হাজির হয়েছেন ফাইনালে, ৯ বারই জিতেছেন গ্র্যান্ড স্লাম। টেনিস ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের একজন তো বটেই, অনেকেই তাকে মনে করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ।

নাদাল গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল খেলেছেন ২১ বার, জিতেছেন ১৪টিতে। ৯ বার ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে নিয়ে যে কোনো একটি গ্র্যান্ড স্লামে সর্বোচ্চ সংখ্যক জয়ের রেকর্ড করেছেন তিনি। ২০০৫ থেকে ২০১৪ এই ১০ বছরের প্রতি বছরেই একই সাথে অন্তত একটি গ্র্যান্ড স্লাম ও একটি এটিপি মাস্টার্স ১০০০ টুর্নামেন্ট জেতার বিরলতম রেকর্ডও তার। ২০১০ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেন, ইউএস ওপেন ও উইম্বলডন জিতে তার একই বছরে তিন ধরনের কোর্টেই গ্র্যান্ড স্লাম জেতার রেকর্ডটিও টেনিসের ইতিহাসে অনন্য।

২০০৮ এর বেইজিং অলিম্পিকে একক টেনিসে আর ২০১৬ তে রিও অলিম্পিকে দ্বৈত টেনিসে জিতেছেন স্বর্ণপদক। ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্লাম জেতা ৮ জন পুরুষ খেলোয়াড়ের একজন নাদাল। আর তার রেকর্ডটি হল সবচেয়ে কমবয়সী হিসেবে, মাত্র ২৪ বছর বয়সেই ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন তিনি।

ফ্রেঞ্চ ওপেনে একটানা ৩৫ ম্যাচ জয়, একটানা ৫ বার গ্র্যান্ড স্লাম জয়, ৯৭.৩ শতাংশ জয়ের হার, সর্বমোট ৭২ টি ম্যাচ জয় আর সর্বোচ্চ ৯ বার গ্র্যান্ড স্লাম জয় তো আছেই- এমন সব রেকর্ডের জন্ম দিয়ে নাদাল লাল মাটির কোর্টে তৈরি করেছেন নিজের একচ্ছত্র আর অতুলনীয় অ্যাধিপত্য।

মন্টে কার্লো মাস্টার্সে একটানা ৮ বার জয় নিয়ে কোনো একক টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চবার একটানা শিরোপা জয়ের রেকর্ডও করেছেন নাদাল। বয়স ২০ পেরুনোর আগেই জিতেছেন ১৬ টি টুর্নামেন্টের শিরোপা, তার এই রেকর্ডের সাথী শুধু একজন, আরেক ইতিহাস সেরা খেলোয়াড় বিয়োন বোর্গ।

ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্লামের সাথে এককে অলিম্পিক স্বর্ণপদক জেতায় তার এবং কিংবদন্তি আন্দ্রে আগাসি’র অর্জনকে বলা হয় ‘ক্যারিয়ার গোল্ডেন স্লাম’। প্রায় ৮১ লক্ষ মার্কিন ডলার পুরস্কার নিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রাইজ মানি প্রাপ্তি তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন রাফায়েল নাদাল।

রজার ফেদেরার

অনেক টেনিস খেলোয়াড় এবং বিশেষজ্ঞের মতেই সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড় হলেন রজার ফেদেরার। এই সুইস তারকার জন্ম ১৯৮১ সালে। এটিপি’র র‍্যাঙ্কিং অনুযায়ী পুরুষদের টেনিসে এই তার র‍্যাঙ্কিং এখন ১০। ১৯৯৮ সাল থেকে পেশাদারি টেনিস শুরু করা ডানহাতি খেলোয়াড় ফেদেরার পুরুষদের টেনিসের ইতিহাসে একক খেলায় সর্বোচ্চ ১৮ বার গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন।

এর মধ্যে তিনি উইম্বলডন জিতেছেন ৭ বার, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ৫ বার, ইউএস ওপেন ৫ বার ও ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতেছেন ১ বার। ২০০৩ এর উইম্বলডনে তার প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল খেলা, জিতেছিলেন সেটিতে। এবং এরপর ২০০৬ পর্যন্ত তার খেলা প্রতিটি ফাইনালেই শিরোপা জিতে খেলোয়াড়ি জীবনের প্রথম ৭ টি গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল একটানা জেতার অনন্য রেকর্ড আছে তার। আছেন ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্লাম অর্জন করা ৮ পুরুষ খেলোয়াড়ের তালিকায়। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে দ্বৈত টেনিসে জিতেছেন স্বর্ণপদক।

Roger Federer

ফেদেরার রেকর্ড সংখ্যক ২৮ বার গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল খেলেছেন। একটানা ১০ টি গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনাল খেলার বিরল রেকর্ডটিও তার, যেটা তিনি করেছিলেন ২০০৫ থেকে ২০০৭ এর মধ্যে। একটানা ৬৫ বার গ্র্যান্ড স্লামে অংশগ্রহণ, উইম্বলডনে ১০ বার ফাইনাল খেলে যে কোনো একটি গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফাইনাল খেলা, প্রতিটি গ্র্যান্ড স্লামে অন্তত ৫ বারের বেশি ফাইনাল খেলা, চারটি গ্র্যান্ড স্লাম মিলিয়ে ৬৫ টিরও বেশি ম্যাচ জেতা, দ্রুততম খেলোয়াড় হিসেবে ৬ বছরে ১৫ টি গ্র্যান্ড স্লাম জেতা, হার্ড কোর্টে ১০ বার গ্র্যান্ড স্লাম জেতা, সব মিলিয়ে ৩১৪ টি গ্র্যান্ড স্লাম ম্যাচ জেতা- গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্টগুলোতে এমন রেকর্ডের পর রেকর্ডই শুধু করে গেছেন ফেদেরার।

এটিপি র‍্যাঙ্কিং এ ফেদেরারের রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি আজও। খেলোয়াড়ি জীবনে এখন পর্যন্ত মোট ৩০২ সপ্তাহ র‍্যাঙ্কিং এর ১ নম্বর খেলোয়াড় ছিলেন। একই সাথে একটানা ২৩৭ সপ্তাহ ১ নম্বরে থাকার রেকর্ডটিও তার। ২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পর্যন্ত একটানা ১৪ বছর বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং এর শীর্ষ দশের মধ্যে ছিলেন তিনি।

হার্ড কোর্টে একটানা ৫৬টি ম্যাচ জিতেছেন, মোট জিতেছেন ৬৭৫ বার, দুটোই রেকর্ড। আর ঘাসের কোর্টে একটানা ৬৫ টি ম্যাচ জেতার রেকর্ডও গড়া হয়েছে তার। এ পর্যন্ত ৩৯৬ বার টাইব্রেকারে ম্যাচ জিতেছেন তিনি, বলা বাহুল্য, সেটাও একটা রেকর্ড। শীর্ষ দশের ভেতরে থাকা খেলোয়াড়দের বিপরীতে খেলে সবচেয়ে বেশিবার জয় পাওয়ার রেকর্ডটিও করেছেন ফেদেরার, ২০২ বার। এটিপি মাস্টার্স ১০০০ টুর্নামেন্টে জিতেছেন রেকর্ডসংখ্যক ৩৩০ টি ম্যাচ।

খেলোয়াড়ি জীবনে প্রায় সোয়া ১০ কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে রজার ফেদেরার আছেন প্রাইজ মানি জেতার তালিকার দ্বিতীয়তে, তার চেয়ে বেশি পেয়েছেন একজন, নোভাক জোকোভিচ। এখনও খেলেই চলেছেন ফেদেরার, কোনো একটি খেলার ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেকর্ড করার রেকর্ডটাও করে যাবেন কিনা, সময়ই বলে দেবে। তথ্যসূত্রঃroar.media