তালাক প্রদানের পদ্ধতি
তালাক কার্যকর করার ক্ষেত্রে মুখে উচ্চারণের পাশাপাশি চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত নোটিশ পাঠাতে হয়। নোটিশের একটি অনুলিপি তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে পাঠাতে হবে। চেয়ারম্যান বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে- ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা প্রশাসক, সেনানিবাস এলাকায় এই অধ্যাদেশের অধীনে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের জন্য সরকারের নিয়োগ করা ব্যক্তি, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশনের স্থগিত থাকলে অধ্যাদেশের অধীনে চেয়ারম্যানের কাজ সম্পাদনকারী সরকারের নিয়োগ করা ব্যক্তি। নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সালিশি কাউন্সিল তৈরি করে দুই পক্ষের পুনঃমিলনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যদি দুই পক্ষের মধ্যে কোনোভাবেই পুনঃমিলন সম্ভব না হয়, তবে তালাকের নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে ৯০ দিনের মধ্যে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। এই ৯০ দিন পর্যন্ত স্ত্রীর ভরণপোষণ ও অন্যান্য খরচ স্বামী বহন করবেন। যদি তালাক দেওয়ার সময় স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে থাকে, তবে সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না।
মুসলিম আইনে স্ত্রীর তালাক দেওয়ার কোনও ক্ষমতা নেই, যদি না কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া থাকে। তবে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী, বিবাহিত কোনও মহিলা নিচের এক বা একাধিক কারণে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবেন।
১। চার বছর পর্যন্ত স্বামীর কোনও খোঁজখবর পাওয়া না গেলে।
২। দুই বছর যাবত স্বামী কর্তৃক অবহেলিত এবং স্বামী ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে।
৩। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১’র বিধান লঙ্ঘন করে স্বামী অন্য স্ত্রী গ্রহণ করলে।
৪। স্বামী ৭ বছর বা তার বেশি মেয়াদের জন্য কারাদণ্ড প্রাপ্ত হলে।
৫। স্বামী কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর ধরে বিবাহিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।
৬। বিয়ে করার সময় স্বামী পুরুষত্বহীন হলে এবং এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে।
৭। দুই বছর ধরে স্বামী অপ্রকৃতিস্থ থাকলে, কুষ্ঠ রোগ বা সংক্রামক যৌন ব্যাধিতে ভুগলে।
৮। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই যদি অভিভাবকের মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হয় এবং স্বামী-স্ত্রী সহবাস বা বসবাস না করে, তাহলে ১৯ বছর বয়স হওয়ার আগেই এই বিয়ে প্রত্যাখ্যান করলে।
৯। স্ত্রীর প্রতি স্বামী নিষ্ঠুর আচারণ করলে। এক্ষেত্রে নিষ্ঠুর আচরণগুলো হল:
(ক) স্বভাবগতভাবে তাকে মারপিট বা, শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও নিষ্ঠুর আচরণ করে স্ত্রীর জীবন দুর্বিষহ করে তুললে।
(খ) খারাপ চরিত্রের মহিলাদের সঙ্গে মেলামেশা করলে বা অনৈতিক জীবনযাপন করলে।
(গ) স্ত্রীকে অনৈতিক জীবনযাপানে বাধ্য করার চেষ্টা করলে।
(ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করলে বা, তার স্ত্রীর সম্পত্তির অধিকারে বাধা প্রদান করলে।
(ঙ) স্ত্রীর ধর্মকর্ম পালনে বাধা দিলে।
(চ) একাধীক স্ত্রী থাকলে পবিত্র কোরআনের বিধান মোতাবেক সমভাবে আচরন করতে ব্যর্থ হলে।
এসব নিষ্ঠুর আচরণের জন্য কাবিননামায় তালাকের ক্ষমতা না থাকা সত্বেও স্ত্রী, তার স্বামীকে তালাক প্রদান করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, উল্লেখিত যে কোনও একটি কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে হলে স্ত্রীকে আদালতের মাধ্যমে যেতে হবে। তালাক স্বামী বা স্ত্রী যেই দিক না কেন, স্ত্রী তার প্রাপ্য মোহরানা যে কোনও সময় দাবী করতে পারবেন। মনে রাখতে হবে যে, তালাক নিবন্ধন বাধ্যতামূলক আর যে এলাকায় তালাক কার্যকর করা হয়েছে, সেই এলাকার নিকাহ রেজিস্ট্রার দিয়ে তালাক নিবন্ধন করাতে হবে।
কোন তালাকপ্রাপ্ত নারী পুনরায় বিবাহ করতে চাইলে, সেই নারীর গর্ভে তার পুর্ব স্বামীর সন্তান আছে কিনা, সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাকে পরপর ৩টি পূর্নাঙ্গ ঋতুকালীন সময় ইদ্দত পালন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে যদি কোনো গর্ভ সঞ্চার হওয়ার লক্ষণ প্রকাশিত না হয়, তাহলে তিনি ইদ্দত শেষ করে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবেন।
সৌজন্যেঃ ল্যান্ডরেজিস্ট্রেশনবিডি