জনগণ সঙ্গে থাকলে কেউ নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রাজনীতিক জোট হোক। সবাই নির্বাচনে আসুক। নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। জনগণর ওপর আমার আস্থা আছে। নির্বাচন ঠেকানোর কারও কোনেও শক্তি, ক্ষমতা নেই। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হবে। জনগণের ভোট চুরি করতে আসিনি। জনগণ চাইলে থাকবো না চাইলে থাকবো না।’
রবিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
‘আদৌ নির্বাচন হবে কিনা’- সংবিধান প্রণেতা ড. কামালের এ মন্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ড. কামাল এবং তাদের গং আদৌ নির্বাচন চান কিনা; এটা আমার প্রশ্ন। দেশে একটা শ্রেণি বসেই থাকে, তারা মনে করে দেশে যদি কোনো অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতা দখল করতে পারে তবে তাদের গাড়িতে একটা পতাকা উঠতে পারে। তাদের গুরুত্ব কিছুটা বাড়ে। আমার এসব অভিজ্ঞতা আছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ঠেকানোর হাজার চেষ্টা করে পারলো না। দেশের মানুষই তাদের প্রতিহত করলো এবং নির্বাচনও হলো।’
বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও বিনাভোটে জয় প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে কি বলবেন ‘আনকন্টেসড’। এটা তো সংবিধানেই আছে। কেউ যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে তো আনকন্টেসড’ই হবে। ড. কামাল হোসেনও আনকন্টেসড জিতেছিলেন। জাতির পিতার ছেড়ে দেয়া আসন থেকে আনকন্টেসড নির্বাচিত হয়েছিলেন। উনি নিজেকে আবার সংবিধান প্রণেতা বলেন। এখন দেখি উনার প্রণীত সংবিধানও উনি মানতে চান না।’
‘বিএনপি খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না’- দলটির নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সরকারপ্রধান বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করা হয়নি। তিনি দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আদালতের বিষয়। তিনি দ্রুত মুক্তি পেতে চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। খালেদার দুর্নীতির মামলা তো আমরা দেইনি। বিএনপির এত নামি-দামি আইনজীবীরা কেনো তাঁকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলো না। নির্বাচনে কে আসবে না আসবে সেটা তাদের দলেন সিদ্ধান্ত। তারা (বিএনপি) যদি মনে করে নির্বাচনের যাবে না, না যাবে। তবে আমি এটুকু বলতে পারি- বিএনপির সঙ্গে অন্তত আমার আলোচনার প্রশ্নই আসে না।’
বিএনপির সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আর তো ওদের সঙ্গে কথা বলব না। তাঁর (খালেদা জিয়া) যারা আমার বাড়িতে এসে বসে থাকত, তারা আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আমার তো একটা আত্মসম্মান বোধ আছে। আমি বারবার অপমানিত হতে কেন যাব?’
এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানের নতুন সরকার দেশ গঠনে কোনও ধরনের সহযোগিতা চাইলে তা করা হবে। তবে ষড়যন্ত্রকারীদের নয়, সে দেশের সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে যে কোনও পরার্মশ চাইলে আমরা দিতে প্রস্তুত।’
বিমসটেকের সম্মেলনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিমসটেকে আঞ্চলিক সহায়তার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুও উঠে এসেছে। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের ছবি ব্যবহার করে রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণা চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এটা নিয়ে বলতে চাই, আমাদের দেশেও এই ধরনের ছবি নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে। এখন কথাটা হচ্ছে, শিখলো কার কাছ থেকে এরা? আমাদের বিএনপি-জামায়াতের কাছ থেকে এগুলো শিখলো কি-না তারা? বিভিন্নভাবে জামায়াত-বিএনপিও কিন্তু এ ধরনের প্রচার চালিয়েছিল। মিয়ানমার যেটা করেছে এটা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ করেছে।’
বহুল আলোচিত ইভিএম প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জোর করে তাড়াহুড়া করে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। এটা প্র্যাকটিসের বিষয়। তবে পরীক্ষামূলক তা ব্যবহার করা যায়। বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হোক।’