জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রেফতারের অভিসন্ধি নিয়ে সারা দেশে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার আগাম মামলা দিয়ে রাখছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘সারা দেশ আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ আসলে এখন নরক হয়ে গেছে। প্রতিটি গ্রাম, ইউনিয়নে আগাম মামলা দিয়ে রাখা হচ্ছে। ঢাকার সব থানায়, ওয়ার্ডে আগাম মামলা দিয়ে রাখছে। নির্বাচন আসলে এসব মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হবে। কি কাপুরুষ…! কি কাওয়ার্ড…!’
শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
কাজী জাফরকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কাজী জাফর আহমেদের মধ্যে নেতৃত্বের সব গুণাবলি ছিলো। রাজনীতির বাইরেও তিনি শ্রমিক নেতা হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন জায়গায় থাকলেও জনগণের কাছ থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি। তিনি কিংবদন্তি নেতা। বাংলাদেশের রাজনীতির বাঁকে বাঁকে যখনই প্রয়োজন হয়েছে তিনি সামনে চলে আসতেন। তার শূন্যতা অপূরণীয়।’
ফখরুল বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এরশাদ সরকারের প্রলোভনে সারা দিলেও কাজী জাফর আহমেদ এতে সারা দেননি। জাতীয় ক্ষেত্রে তাকে খুব প্রয়োজন ছিলো। তার অনুপস্থিতি আমরা অনুভব করি।’
কারাবন্দি বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়া প্রচণ্ড অসুস্থ। এরমধ্যেও তিনি আন্দোলন না থামিয়ে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকে বিজয়ী করার কথা বলছেন। দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন।’
ফখরুল বলেন, ‘কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে বাতিস্তা সরকার সাজা দেয়ার পর তিনি বলেছিলেন, ‘ইতিহাস আমাকে ধারণ করবে, তোমরা আমাকে সাজা দিতে পারো’। কাজী জাফর আহমেদকে ইতিহাস ধারণ করে আছে। বেগম খালেদা জিয়াকে ইতিহাস ধারণ করছে।’
সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘সরকারের লোকেরা বহু কথা বলছেন। কিছুদিন আগে তারা ছবক দিতেন। নির্বাচনের কথা বলছেন। আসেন না নির্বাচনে, ভয় কেন? সুষ্ঠু নির্বাচনের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন। কোথাও সভা, সমাবেশ করতে দেবেন না, ফেসবুকে লিখলে ৫৭ ধারা, কাগজে লিখতে দিচ্ছেন না। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের জানিয়ে দিয়েছে, শেষ রক্ষা হবে না।’
বিদ্যুৎ উৎপাদন উদযাপনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের ফুলঝুরি ছড়ানো হচ্ছে। কাল দেখলাম অন্ধকার আকাশে আতসবাজি করা হচ্ছে। এতে কাজ হবে না। আওয়ামী লীগ প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে। সামনের নির্বাচনে পরাজয় ঠেকাতে অন্যায়, অগণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করছে সরকার। ক্ষমতায় টিকে থাকতে সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে।’
ইদানিং ভারতের পত্রপত্রিকাগুলো ভিন্ন সুরে কথা বলছে দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক রাষ্টদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী লিখেছেন, যদি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তবে আওয়ামী লীগের লজ্জাজনক পরাজয় ঘটবে। এটাই বাস্তবতা।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ যখন হবে তখন নির্বাচন। নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচন কমিশন ভেঙে যোগ্য মানুষকে দিয়ে কমিশন গঠন করতে হবে, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে। এগুলোর মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘কিন্তু কোনও কিছু পরিবর্তন না করে পুলিশ দিয়ে নেতাকর্মীদের কারাগারে আটকে রাখবেন আর একা একা হেলিকপ্টারে করে ঘুরে বেড়াবেন, ভোট নেবেন- এটা তো দেশের মানুষ হতে দেবে না। মানুষ গ্রহণ করবে না।’
স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী।
এসময় আরও বক্তব্য দেন- মোস্তফা জামাল হায়দার, জাফর আহমেদের মেয়ে কাজী জয়া, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, খন্দকার গোলাম মোর্তজা, ড. রেদওয়ান আহমেদ, আহসান হাবিব লিঙ্কন, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, খন্দকার লুৎফর রহমান, গোলাম মোস্তফা ভুইয়া ও প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে তাসমিয়া প্রধান প্রমুখ।