একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বর্তমান সরকারকে পদত্যাগের দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে। নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে এবং নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচারিক আদালত পুরাতন ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরের প্রতিবাদে সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। আমরা কোনো দয়া ভিক্ষা করছি না। একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। পরিষ্কারভাবে আমরা বলতে চাই – সমস্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তাকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সব অর্জনগুলোকে তারা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। পার্লামেন্টকে তারা প্রহসণে পরিণত করেছে। প্রশাসনকে পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ করেছে। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করার ষড়যন্ত্র করছে।’
তিনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের ভৌতিক মামলা তৈরি করে এ মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেফকার করছে সরকার। ইতিমধ্যে এক লাখের বেশি নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয়া হয়েছে। এক লক্ষ মামলা তৈরি করেছে। ১২ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। প্রত্যেকটি গ্রামে ও ইউনিয়নে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। এইভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে অত্যাচার-নির্যাতন করে, গুম করে, হত্যা করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল পত্রিকায় দেখেছেন- গ্রাম থেকে ছেলেরা এসেছে কোচিং করতে। তাদের তুলে নেয়া হয়েছে। গুম করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নেয়ার পর তাদের কোনো খোঁজ মিলছে না। এর আগে কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের গ্রেফতার করেছে। তাদের নির্যাতন করা হয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের মায়েদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। এই সরকারের ভয়াবহ নির্যাতন থেকে আমাদেরকে মুক্ত হতে হবে। সমগ্র দেশের মানুষকে ক্ষুব্ধ হয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সরকারকে হঠাতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকার সন্ত্রাস করছে। জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে। এখন এই সরকারকে চলে যেতে হবে। এই সরকারকে হঠাতে এখন আমাদের ঐক্য দরকার। ইস্পাত কঠিন ঐক্য দরকার। একটা জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ দানব সরকারকে সরাতে হবে। যারা আমাদের বুকের ওপর চেপে বসেছে তাদের সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একটা মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখেছে। তিনি অসুস্থ এবং গুরুতর অসুস্থ। কিন্তু তাকে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছেনা। তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার আবার ৫ জানুয়ারির মতো একটি যেনতেন নির্বাচন করতে চায়। এইজন্য দেশনেত্রী খালেদা কারাগারে রেখেছে। আদালত থেকে জামিন হওয়ার পরও তাকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না।’
এসময় তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন হবে না। হতে পারে না। তফসিল ঘোষণার আগে আমাদের দাবি পূরোণ করতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’
মানববন্ধনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড.আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।