‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’র আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘কারও প্রতি প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে নয়, শান্তির বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা সকলে এখানে এক মঞ্চে উপস্থিত হয়েছি। আমরা দেশের মানুষের শান্তি ও স্বস্তি নিশ্চিত করতে চাই। জনগণের বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে সূচনা বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ড.কামাল বলেন, ‘আপনারা অনেক কষ্ট করে এখানে হাজির হয়েছেন। এজন্য আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই।’
দেশের চলামান অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একসময় এখানে উপস্থিত হয়েছি যখন দেশে গণতন্ত্র নেই। জনগণ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নেই। দেশে কার্যকর গণতন্ত্র নেই। দুর্নীতি ও দুঃশাসনে ভরে গেছে দেশ।’
দেশ থেকে দুর্নীতি ও দুঃশাসন দূর হলে বাংলাদেশে শান্তি দৃশ্যমান হবে বলেও মন্তব্য করেন গণফোরাম সভাপতি।
ড. কামাল আরও বলেন, ‘জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক। জনগণের মত প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। সেই লক্ষ্যে সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রণয়নের জন্য আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। এখানে অনেক নেতা উপস্থিত হয়েছেন। আশা করি জনগণকে অনুপ্রাণিত করে নিজেদের বক্তব্য পেশ করবেন তারা।’
সমাবেশের শুরুতে শ্লোগান ও বসার জায়গা সংকটে কিছুটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হলেও পরে তা স্থিতিশীল হয়।
অনুষ্ঠান পরিচালক বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওঠে গিয়ে মাইক্রোফোন হাতে বলেন- ‘আমরা জাতীয় ঐক্যের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছি। শ্লোগান বন্ধ করে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান করে সহযোগিতা করবেন অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য।’ মির্জা ফখরুলের এ আহ্বানের পর নেতাকর্মীরা শান্ত হন।
এদিকে সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
মান্না বলেন, ‘দেশ এখন গভীর সংকটে। সাড়ে তিন মাস পর জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। যদি এ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে আবারো ২০১৪ সালের মত ৪২০ মার্কা নির্বাচন হবে। পুরো দেশের মানুষের মধ্যে একটাই আতঙ্ক ও শঙ্কা- আমরা কি ভোট দিতে পারবো? নাকি পুলিশ দিয়ে ভোট বাক্স ভরে সরকার আবারও ক্ষমতায় আসবে?’
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবে না সে নির্বাচন কমিশন আমাদের দেশে দরকার নেই।’
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিনের পরিচালনায় ও ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে মঞ্চে উপস্থিত রয়েছেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন ও নিতাই রায় চৌধুরী।
এছাড়াও সমাবেশে উপস্থিত আছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, জাসদ (জেএসডি) একাংশের সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির পক্ষে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ডা. জাফরুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসিন মন্টু, আওয়ামী লীগের সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মনসুর আহমদ, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের প্রমুখ।