মংলা ও বুড়িমারী বন্দরে সেবা দিতে সবক্ষেত্রে শতভাগ দুর্নীতি হয় বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এছাড়াও এই দুই বন্দরে সেবা দিতে বছরে প্রায় ৩১ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয় বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
রবিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে “মংলা বন্দর ও কাস্টম হাউজ এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন : আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়” শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দীর্ঘ অনুসন্ধান ও গবেষণায় আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। বন্দর দুটিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং কাস্টমসের সব পর্যায়ে শতভাগ দুর্নীতি রয়েছে। এর পক্ষে আমাদের কাছে শত শত তথ্য-প্রমাণ থাকলেও তা আইনিভাবে প্রমাণের কোনও সুযোগ টিআইবির নেই।’
তিনি বলেন, ‘যোগসাজশের মাধ্যমে বন্দরে যে দুর্নীতি হয় তা কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। কর্তৃপক্ষ যদি দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তা সম্ভব। শুধু যেটা দরকার তা হলো সদিচ্ছার। যারা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দেয়া যে দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হয়।’
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মংলা কাস্টম হাউজ থেকে ৩ হাজার ৯৯ কোটি টাকা এবং বন্দর থেকে ২২৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। আর বুড়িমারী কাস্টম হাউজ থেকে ৪৫ কোটি এবং বন্দর থেকে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বুড়িমারী বন্দরে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাপে বিল অব অ্যান্ট্রি প্রতি গড়ে কমপক্ষে ২ হাজার ৫০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। একইভাবে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১ হাজার ৭০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়।
একইভাবে মোংলা বন্দরের কাস্টম হাউজে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও কমপক্ষে ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা হিসাব বহির্ভূতভাবে আদায় করা হয়। অন্যদিকে গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৪ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বন্দরের এই দুর্নীতি আইনের চোখে প্রমাণিত না, যে কারণে আমরা এটাকে অভিযোগ বলছি। যারা প্রত্যক্ষভাবে দুর্নীতির শিকার হয়ে, নিজেরাও দুর্নীতির অংশীদার হয়ে যাচ্ছে তাদের তথ্য এবং অন্যান্য অংশীজন থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করেছি। আমাদের ম্যাথলজি অনুযায়ী প্রমাণিত বিধায় আমরা এটাকে (দুর্নীতি) বলছি।’
টিআইবির এ গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেন খোরশেদ আলম, মাহমুদ হাসান তালুকদার ও মনজুর-ই-খোদা।