সংলাপে সমাধান দেখছে না বিএনপি, লক্ষ্য রাজপথ!

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একদফা সংলাপ শেষ করেছে ঐক্যফ্রন্ট। এরই মধ্যে আরেক দফা সংলাপ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে, দ্বিতীয় দফা সংলাপের দিনক্ষণও মিলেছে। তবে এই সংলাপে কোনো সমাধান দেখছে না এক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল বিএনপি। বরং দাবি আদায়ে রাজপথকেই বেছে নিচ্ছে তারা। অতীতের মতো দীর্ঘমেয়াদি না হলেও, স্বল্পমেয়াদি ‘জোরালো’ কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে রাজপথের এই বিরোধী দলটি।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তারা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের ইতিহাস বিরল। দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ সংলাপের নজির বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। সুতরাং দাবি আদায়ে বিএনপিকে রাজপথেই নামতে হবে। সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছে বিএনপি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে ‘রাজি নাও হতে পারেন’— এমন একটা আশঙ্কা থেকেই ডা. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে’ যোগ দেয় বিএনপি। দলটির উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় পর্যায়ের এসব বর্ষীয়ান নেতাকে সামনে রেখে সংলাপের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে একটা সমঝোতায় পৌঁছানো।

কিন্তু প্রথম সংলাপেই প্রচণ্ড ধাক্কা খায় বিএনপি। বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) গণভবনের অনুষ্ঠিত সংলাপে বিএনপির দাবিগুলো মেনে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত ছিল না। বরং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ভোটের মাঠে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন— এই দাবিগুলো মানা হবে না।

ফলে গণভবন থেকে ‘মুখ ভার’ করে বের হয়ে আসতে দেখা যায় বিএনপি নেতাদের। বের হওয়ার সময় অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াতেই বলেন, ‘সংলাপে আমরা সন্তুষ্ট নই।’ পরে রাতে ড. কামাল হোসেনের বাসায় আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়াতেও একই কথা বলেন তিনি।

একদিন পর শনিবার (৩ নভেম্বর) সকালে নয়াপল্টন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সংলাপ ফলপ্রসূ না হলে রাজপথেই সাত দফা দাবি আদায় করা হবে।’ আরেক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সংলাপে সংকটের সমাধান না হলে রাজপথই বেছে নেবে জনগণ।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিএনপির নেতারা ধরেই নিয়েছেন, এই সংলাপ মূলত কালক্ষেপণের জন্যই। ক্ষমতাসীন দল সংলাপের নামে কালক্ষেপণ করে তাদের সুবিধামতো সময় তফসিল ঘোষণা করবে। বিএনপির দাবির প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ করবে না সরকার। সুতরাং রাজপথই বেছে নিতে হবে তাদের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো চাই সংলাপের মাধ্যমেই সংকটের সমাধান হোক। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তারা সেটা চায় না। সুতরাং দাবি আদায়ে শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে রাজপথেই নামতে হবে। জনগণকে নিয়ে আমরা রাজপথেই নামব।’

জানা গেছে, সংলাপের পর নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠকে বসেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এসব বৈঠকে রাজপথে আন্দোলনের একটা খসড়া রূপরেখা তৈরি করেছেন তারা। সংলাপ পর্ব শেষ হলে নতুন রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে ওই খসড়া রূপরেখা নিয়ে বসবেন বিএনপি নেতারা। তাদের সম্মতি পেলে আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘটনা যাই ঘটুক, তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বিএনপি। দাবি-দাওয়া মেনে না নিয়ে তফসিল ঘোষণা করলেই ধারাবাহিক কর্মসূচিতে যাবে তারা। সেই কর্মসূচি দীর্ঘমেয়াদি না হলেই কঠোর ও জোরালো হবে। তবে আলোচনা, সংলাপ, সমঝোতার পথ খোলা রেখেই কর্মসূচি নির্ধারণ করবে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘একদফা সংলাপ হয়েছে, সে সংলাপে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। সংলাপ চেয়ে ফের চিঠি দেওয়া হয়েছে। দেখি তারা কেমন সাড়া দেয়। সংলাপের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা যদি সংকট নিরসন না করে, তাহলে রাজপথের আন্দোলন অনিবার্য হয়ে উঠবে।’

সূত্র ঃ সারা বাংলা