বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনমতকে তাচ্ছিল্য করে একতরফা নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর এ মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয় সেই ব্যর্থ বাকশালে ফিরে যেতেই যত আয়োজন করা হচ্ছে। শনিবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে আওয়ামী লীগ সবসময় উল্টো পথে হাটে। এটা নতুন কিছু নয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অর্থই হচ্ছে স্বচ্ছ নির্বাচনী ব্যবস্থার বারোটা বেজে যাওয়া। সন্ত্রাসীদের দূর্গ আওয়ামী লীগ কখনোই প্রতিযোগিতামূলক অবাধ নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। নিজেদের স্বার্থে যখন যা ইচ্ছা তাই তারা করতে পারে। তারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করেছে, আবার তারাই সংবিধান থেকে সেটি মুছে দিয়েছে। কোন আধুনিক সভ্য রাজনৈতিক দল একের পর এক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বখাটে আচরণ করতে পারে না। এই যে জনমতকে তাচ্ছিল্য করা, এর মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয় সেই ব্যর্থ বাকশালে ফিরে যেতেই যত আয়োজন করা হচ্ছে। সংলাপ, নির্বাচন, তফশীল ঘোষণা সবই তামাশার নামান্তর মাত্র।’
তিনি বলেন, ‘অবৈধ ক্ষমতাসীনরা জনগণের দাবি মানছে না। ৭ দফা দাবিকে অগ্রাহ্য করেই একতরফা নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্যই বছরের পর বছর ধরে মিথ্যা মামলা,মোকদ্দমা, গ্রেফতার,হত্যা, গুপ্তহত্যা, ক্রসফায়ারের মতো পৈশাচিক নির্মমতাকে কাজে লাগানো হয়েছে বিরোধী দল দমনে। ওরা জনগণকে ভয় পায় বলেই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে রেখেছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রহমানকেও বানোয়াট মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। বিবেকশূন্য সরকার ও সরকারপ্রধানের নির্দেশে বেগম জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়েই জরাজীর্ণ, পরিত্যক্ত ও বাসানুপযোগী নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বাড়িঘরসহ তার বেঁচে থাকার সমস্ত অবলম্বনকে কেড়ে নিয়ে, তার চিকিৎসা পাবার অধিকারকে হরণ করেছে। নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই নির্বাচনের বছরে অনুগত আদালতকে দিয়ে সাজা দিয়ে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। মামলায় আদালতে হাজিরাসহ বন্দীশালায় চালানো হচ্ছে নানামুখি নির্যাতন-নিপীড়ন। বিরোধী নেতাকর্মীদেরকে বিনা কারণে নিপীড়ন করার জন্যই দেশের কারাগারগুলো এখন শেখ হাসিনার প্রতিশোধ গ্রহণের পার্সোনাল খোয়াড়ে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম চালাতেই নিম্ন আদালত পার্টি ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে উত্তাল আন্দোলনকে বিজয়ের পথে ধাবিত করবেই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতেই নির্বাচন কমিশন যাবতীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। এইজন্য আগামী নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার বা নির্বাচনী মাঠ সমতল করার কোন গরজ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নেই। আর সেজন্যই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার স্বার্থে একতরফা নির্বাচনের জন্য তাড়াহুড়ো করে কমিশন তফশীল ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণায় সারাদেশের ভোটারদের মুড-অফ, দেশের জনগণ নির্বিন্ন ও হতাশ। প্রাণী হত্যা করার পর আদিম বন্য উৎসবের ন্যায় এখন গণতন্ত্র হত্যার উৎসব চলছে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রির মাধ্যমে। আসলে একতরফা তফশীল ঘোষণার পর সারাদেশে বিষাদঘন পরিবেশ বিরাজ করছে।’
রিজভী বলেন, ‘ইতোমধ্যে নির্বাচন নিয়ে সংলাপের নামে সরকারি প্রতারণায় দেশবাসী বিস্মিত ও হতবাক। সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি কিভাবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন ! তিনি বলেছিলেন-নতুন মামলা দেয়া হবে না ও গ্রেফতার করা হবে না, যেদিন বলেছেন ঠিক সেই রাত থেকেই আরও বেশি মামলা ও গ্রেফতার শুরু হয়েছে। এমনকি সিইসি তফসিল ঘোষণার সময় বলেছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার হয়রানি না করতে, রাজনৈতিক মামলা না দিতে, শুধুমাত্র গতকালই বিরোধী দলের ৩০০’র অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দায়ের হচ্ছে নতুন নতুন মামলাও। বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক,যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল,খায়রুল কবির খোকন,সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ,সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।