সরকারের কারসাজিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ইন্টানেটের গতি কমানো নিয়ে সিইসির চিন্তাভাবনা সরকারের মাস্টারপ্লানের অংশ।
আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ইন্টারনেটের গতি কমবে কেন? ইন্টারনেটের গতি তো ফার্স্ট হওয়ার কথা। আপনারা কি দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ফ্রান্সে নির্বাচনের সময় ইন্টারনেটের গতি কমিয়েছে। নির্বাচন কমিশন গণতন্ত্রকে সঙ্কুচিত করছে নিজেদের স্বাধীনতা খর্ব করে। সিইসির এ চিন্তাভাবনা সরকারের মাস্টারপ্লানের অংশ।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশে সর্বগ্রাসী স্বৈরতন্ত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানই তার স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারছে না। সরকারি সন্ত্রাসের প্রকোপে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গগুলি সাচ্ছন্দে তাদের কর্তব্য পালন করতে পারছে না। মানুষের বেঁচে থাকার সকল অবলম্বনকে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এক ঘোর অন্ধকারের মধ্যে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডুবে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘জনবিচ্ছিন্ন অবৈধ সরকার সারাদেশে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার দেখে পুলিশকে দিয়ে নির্বাচনে কারচুপির নীল-নকশা বাস্তবায়ন করতে মাঠে নেমেছে। পুলিশের সদরদপ্তরে দিনে-রাতে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। আমাদের কাছে বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে খবর আছে, নৌকার বিজয় ছিনিয়ে দিতে পারলে পুলিশের এসি, এডিসি, ওসিদের প্রমোশন এবং নগদ অর্থের প্রলোভন দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নির্দেশনা কার্যকরের তদাররি করার জন্য পুলিশ হেড কোয়ার্টারে মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে।’
অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনকে কীভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে নেওয়া যায়, কীভাবে কারচুপি করা যাবে- সে বিষয়ে নীল নকশার সাধারণ সূত্র উদ্ভাবন করে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ ও র্যাবের কাছে পাঠানো হয়েছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ছাত্রলীগের বাছাই করা দশ হাজারের বেশি ক্যাডারকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে- ভোটের সময় ডিবি পুলিশের সাথে কাজ করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আজ আমরা জানতে পেরেছি, ডিএমপি ডিবির জয়েন্ট কমিশনার, এডিসি ও তার অধীনস্থ এসিদের বলেছেন যে, যদি তারা তাদের দায়িত্বাধীন কেন্দ্রে নৌকাকে বিজয়ী করতে পারে, তবে প্রত্যেককে পাঁচ লাখ করে টাকা দেয়া হবে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘এটা ভয়াবহ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয়। অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য পুলিশ প্রশাসনের দল অনুগত কর্মকর্তাদের ভূমিকায় সারাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ। পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আমাদের অনুরোধ- ব্যক্তিগত লাভ ও প্রলোভনে পড়ে দেশ ও গোটা জাতিকে ধ্বংস করে দিবেন না। শুধু নিজেদের স্বার্থের জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিশ্চিহ্ন করবেন না। মানুষের পাশে দাঁড়ান। অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর কথা শুনে মানুষের বাক-স্বাধীনতাকে গলাটিপে ধরার যন্ত্র হিসেবে কাজ করবেন না। নাগরিক স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করুন। আপনার দেশপ্রেম প্রমাণের সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর।’
রিজভী দাবি করেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ন্যূনতম নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন চাইলে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে আজই মাঠে নামাতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে জোরাল দাবি, পুলিশের সদরদপ্তরে বসে যারা কুপরিকল্পনা করছে, তাদেরকে অবিলম্বে সরিয়ে দিতে হবে।
রিজভী আরও বলেন, ‘আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশ বাহিনীকে ৬৩ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, আনসার বাহিনীকে ১৬৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা, কোস্টগার্ডকে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, বিজিবিকে ৩৩ কোট ২ লাখ এবং র্যাবকে ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা অগ্রিম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গুঞ্জন আছে, সেনাবাহিনীর নামে কোনো বরাদ্দ না দিয়ে তাদেরকে ব্যারাকেই রাখা হবে। এটি একটি অশুভ মহাপরিকল্পনার নির্বাচন করারই পূর্বলক্ষণ।’