বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, ২৮ নির্বাচনী আসনে গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলায় ধানের শীষের ১৯ প্রার্থীসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ তথ্য জানান।
সোমবার ২৮টিরও বেশি আসনে ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘গতকাল ছিল সবচেয়ে ভায়োলেন্ট দিন। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের টেক্কা দিয়ে পুলিশই সন্ত্রাসী আক্রমণে থেকেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষের প্রার্থীদের প্রচারণা ও সমাবেশে সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে গতকাল। একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গতকাল ছিল বিএনপি প্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন। হামলা করে গুলি করে বিএনপি প্রার্থীদের রক্তাক্ত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।’
তিনি বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতা মওদুদ আহমদের গাড়িতে ভয়ঙ্কর হামলা করা হয়েছে। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান তিনি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানের ওপর গতকালও সশস্ত্র হামলা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনের ওপর আবারও হামলা করা হয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থী শহীদ উদ্দিন চৌধুরির ওপর হামলা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। কিশোরগঞ্জে ধানের শীষর প্রার্থী মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান ও শরীফুল আলমের ওপর গুলি চালিয়েছে পুলিশ। তাদের পরিধেয় পোশাক রক্তে ভিজে গেছে। শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন আহমেদ অপুর প্রচারণায় সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। গুরুতর আহত ও মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে চিকিৎসার জন্য। তার অবস্থা গুরুতর। শেরপুরে ধানের শীষের প্রার্থী ডা. সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকার ওপর হামলা করা হয়েছে। হামলায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। বরিশালে সরদার সারফুদ্দিন আহমেদ সান্টু হামলায় আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুল আজিম, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সেলিম রেজা হাবিব, আজহারুল ইসলাম মান্নান ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।’
রিজভী আরেও বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজার-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী হাসিনা আহমেদ অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। সন্ত্রাসীরা গোটা এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। গতকাল রাতে সপরিবারে মিজানুর রহমান সিনহা হামলার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়াও হামলায় খাগড়াছড়িতে ব্রাশফায়ারে মারা গেছেন দুই ব্যক্তি।’
তিনি বলেন, ‘ভোটে আওয়ামী লীগের পক্ষে মাঠে কাজ করার জন্য ডিসি, এসপি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত সর্বস্তরের পুলিশ সদস্যদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রচুর নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি অপারেশনাল ইউনিটে নগদ অর্থ পৌঁছানো হয়েছে। বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও সদস্যদের জন্য ব্যাপক টাকা ছড়ানো হচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘ভোটের ময়দান ফাঁকা করতেই ধানের শীষের প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চলছে। সারাদেশে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যারা মানুষকে নিরাপত্তা দেবে সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই মানুষকে নিরাপত্তাহীন করে তুলছে। সারাদেশে এখন ভয়ঙ্কর আতঙ্কের নাম পুলিশ-র্যাব-বিজিবি। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন সিইসিসহ কতিপয় কমিশনার।’
তিনি বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় সহকারী পুলিশ সুপার আবু রাসেলের গাড়িতে বোমা হামলাকারী গুলিবিদ্ধ যুবক খালিদুজ্জামান টিটু (২০) ছাত্রলীগ নেতা। অথচ ওই ঘটনায় দায়ে করা মামলায় আসামি করা হলো- চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওহিদুল আলম বিশ্বসকে। তাকেসহ অনেক নেতাকর্মীকে ধানের শীষের প্রার্থী শরিফের বাসায় আটকে রাখা হলো।’
রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা ততই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট মারতে দলে দলে প্রস্ততি নিচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। গতকাল সাভারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমানুর রহমান ঘোষণা দিয়েছেন- প্রতিটি কেন্দ্রে তার ২০০ জন করে যুবক দরকার। নাটোরে নৌকার প্রার্থী শিমুল ঘোষণা করেছেন- যারা নৌকায় ভোট দিবেন তারা কেন্দ্রে আসবেন যারা নৌকায় ভোট দিবেন না তাদের কেন্দ্র আসার দরকার নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী জানান, এ পর্যন্ত ১৭টির মতো আসনে বিএনপির প্রার্থী শূন্য করা হয়েছে সেখানে প্রার্থী নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে।