‘প্রহসনের সরকারকে’ জনগনের কাছে গ্রহণযোগ্য করতেই গণভবনে চা-চক্রের আয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
রবিবার(২৭ জানুয়ারি)সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মঈন খান বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচনের প্রহসন আমরা দেখেছি, তার মাধ্যমে আমরা এদেশে যে একটি প্রহসনের সংসদ দাঁড় করিয়েছি এবং যে সংসদের মাধ্যমে এদেশে একটি নতুন করে সরকারও গঠিত হয়েছে। সেই সরকারের সত্যিকারের অবস্থান কোথায়- সেটা আমরা যদি নাও জানি, সরকার নিজে কিন্তু ঠিকই জানে।’
তিনি বলেন, ‘আর নিজে ঠিকই জানে বলেই আজকে সরকার ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে কীভাবে তাদের এই যে প্রহসনের সরকারকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়। মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য করার এই যে প্রচেষ্টা, সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই চা-চক্রের(গণভবনে) আয়োজন করা হয়েছে। এটাই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করে। তারা জানে ২৯ ডিসেম্বর রাতে ও ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে কী নাটক ঘটেছিলো, তা সকলে অবহিত আছেন।’
একাদশ নির্বাচনের ভোট কারচুপির সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি তুলে ধরে মঈন খান বলেন, ‘এটা কোনো নির্বাচন হয়নি, এটা হচ্ছে একটা প্রহসনের নির্বাচন, একটা ভুয়া নির্বাচন। সেই ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ আজকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে সেই সংসদ বাংলাদেশের জনগনের প্রতিনিধিত্ব করে না। কার প্রতিনিধিত্ব করে সেটা আপনারাই বুঝে নিতে পারেন, আমার অধিকতর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নাই।’
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘এই সংসদ আজকে প্রতিনিধিত্ব করে সন্ত্রাসীদের, যে সন্ত্রাসীরা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে সারা বাংলাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে তারা ভোট জালিয়াতি করে নিজেদের বিজয়ী বলে ঘোষণা করেছে।’
মইন আরও বলেন, ‘আমাকে কয়েকজন রাষ্ট্রদূত প্রশ্ন করেছিলেন আচ্ছা বিএনপির তো পাঁচজন নির্বাচিত হয়েছেন, পরে আরেকজন নির্বাচিত হয়েছেন। আমাকে যখন রাষ্ট্রদূতরা জিজ্ঞাসা করেছেন তখন ৫জন নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাহলে সেই পাঁচজন কী সংসদে যাবে না? আমি বললাম কেউ যদি নির্বাচিত হয় সংসদে যাবে না কেনো? কিন্তু আপনারা (রাষ্ট্রদূত) কী জানেন না? বিএনপির পাঁচজন তো নির্বাচিত হয়নি, তাদেরকে নির্বাচিত দেখানো হয়েছে। যাদের নির্বাচিত দেখানো হয়েছে তাদের সংসদে যাওয়ার কী রাইট রয়েছে? সেই প্রশ্নের জবাব দেন তাহলে নিশ্চয় বিএনপির পাঁচজন সংসদে যাবেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আসলে এই নির্বাচনে কে জয়ী কে বিজয়ী সেটা কোনো প্রশ্নই নয়। নির্বাচনে যাদেরকে জয়ী দেখানো হয়েছে তারা জয়ী হয়েছেন, এই নির্বাচেন যাদেরকে পরাজিত দেখানো হয়েছে তারা পরাজিত হয়েছেন। সেটা করা হয়েছে শুধু ভোট রিগিংয়ের মাধ্যমে নয়, এটা করা হয়েছে সন্ত্রাসের মাধ্যমে।”
১১ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রচারনার প্রথম দিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তার ওপর হামলার ঘটনা তুলে ধরে মঈন বলেন, ‘আমার ওপরে, মহাসচিবের ওপরে এভাবে বাংলাদেশে যে কত জায়গায় আক্রমণ হয়েছে এবং সেই আক্রমণ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত অব্যাহতভাবে চলেছে। এখানে কোনো নির্বাচন হয়নি বাংলাদেশে। এভাবে কোনো দেশে নির্বাচন হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘শুধু বিএনপি নয়, যারা বিএনপির সমর্থক তারা নয়, আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে জিজ্ঞাসা করুন তাকে বলুন আপনারা বুকে হাত দিয়ে বলুন দেখি- এটা কেমন নির্বাচন হয়েছে? তারা নিজেরাই উত্তর দেবে, গোপনে আপনার কানে কানে বলবে, প্রকাশ্যে বলবে না। প্রকাশ্যে বলবে চমৎকার নির্বাচন। চমৎকার নির্বাচনে কী ধারা আপনারা দেখেছেন ১৯৭৩ সালে ২৯৩টি আসন পেয়েছিলো এবং পরবর্তীতে আমরা দেখলাম এই ৩০ ডিসেম্বরের তথাকথিত নির্বাচনে আবারো ২৯৩টি আসন। চমৎকার। এই ধরনের সমীকরণ বিএনপির করার যোগ্যতা নাই, আমরা এসব ভোট জালিয়াতির দক্ষমতায় পারদর্শি নই, আমরা এটা কখনো করিনি।’
সরকারের সমালোচনা করে সাবেক মন্ত্রী মঈন খান বলেন, ‘আজকে যত উন্নয়নের কথা বলা হোক না কেনো, উন্নয়নের নামে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি, এই নতুন সরকারের বয়স চার সাপ্তাহ হয়েছে। সংসদ এখনো বসেনি। দুইটি মন্ত্রিসভার বৈঠক সম্ভবত হয়েছে। কিন্তু দেখুন- এই ৪ সাপ্তাহের ভেতরে ১০/১৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিভাবে হলো, কারা নিলো, কোন দায়িত্বে নিলো? উত্তর হচ্ছে- মেগা প্রজেক্ট, মেগা দুর্নীতি।’
দেশের এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মঈন খান বলেন, ‘যেখানে অলিখিত বাকশাল চলে, সেখানে সুশাসনের কথা, মায়া-মমতার কথা, হৃদয় বেদনার কথা বলে কোনো লাভ নেই। অনেক বক্তা বলেছেন, যে আমাদের এখন নতুন করে ভাববার, নতুন করে কৌশল নেয়ার সময় এসেছে। আমি বলতে চাই, অন্যায়-নির্যাতন করে কোটি কোটি মানুষকে হয়ত সাময়িকভাবে স্তব্ধ করে রাখা যাবে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে চিরকালের জন্য কোনো অপশক্তি স্তব্ধ করে রাখতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে তারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। সেই সংগ্রাম স্তব্ধ করে দিতে পারেনি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। সেই কথা স্মরণ করে আজকে আমাদের নতুন করে জোর গলায় বলতে হবে যদি প্রয়োজন হয়, বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের জন্য স্বাধীনতার যুদ্ধ করতে হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, স্বাধীনতার পাশাপাশি যে অর্থনৈতিক মুক্তির যে আন্দোলন ছিলো তাকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে আজকে। এখন বাংলাদেশে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ছে। তার অর্থ স্বাধীনতার অর্থনৈতিক মুক্তির যে আন্দোলন তা সফল হয়নি সেই্ সেই আন্দোলনে আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
আয়োজক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রশিক্ষন বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, স্মৃতি সংসদের শামীম তালুকদার, আলমগীর হোসেন, শাহিন খন্দকার, রেজাউল করীম রেজা, জিনাফের সভাপতি মিয়া মো. আনোয়ার, শাহবাগ থানা কৃষকদলের সভাপতি এম জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।