‘সাহিত্য চর্চা পারে যুব-সমাজকে সঠিক পথে ধরে রাখতে। বই পারে আমাদের চিন্তা চেতনা বিকশিত করতে। আজ আমরা বিশ্বে অসাম্প্রদায়িক জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি। আর কখনও বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান হবে না। দেশে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কোনো অস্তিত্ব রাখা হবে না।’
শুক্রবার বিকেলে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, শুধু বই কেনাবেচা নয়, বই মেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই মন পড়ে থাকে বই মেলায়। আসি আসি করে আসা হয় না নানান কারণে।
তিনি আরও বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্ব দরবারে উচ্চপর্যায়ে পৌঁছেছে। যতই যান্ত্রিক জীবন হোক না কেন বইয়ের গুরুত্ব কখনও কমবে না। বইয়ের চাহিদা কখনও শেষ হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের শহীদ দিবসই নয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দুইজন প্রবাসী বাংলাদেশি এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে ‘বাংলা’আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার সম্মান লাভ করে।
তিনি আরও বলেন, ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতি বিশ্ব দরবারে খুনি জাতির পরিচিতি লাভ করেছিল। আজ আবারও আমরা আমাদের ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পেরেছি। বিশ্বে বাংলাদেশ আজ অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
বিশ্ব সাহিত্যকে জানতে হলে বেশি বেশি বইয়ের অনুবাদের প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনী মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ এবং মিশরের লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক মোহসেন আল-আরিশির। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন এবং কয়েকটি বই কিনেন।
উদ্বোধনী মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেন বিজয়ীদের হাতে। মোট ১০টি শাখায় এ পুরস্কার দেওয়ার কথা থাকলেও এবার পুরস্কার দেওয়া হয় চারটি শাখায়। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যের জন্য গবেষক-কলামিস্ট আফসান চৌধুরী, কবিতায় কবি কাজী রোজী, কথাসাহিত্যে মনোরোগ চিকিৎসক মোহিত কামাল এবং প্রবন্ধ ও গবেষণায় একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ পুরস্কার গ্রহণ করেন।
বাংলা একাডেমি থেকে জানানো হয়, এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য হচ্ছে-বিজয়: বায়ান্ন থেকে একাত্তর (নবপর্যায়)। পাশাপাশি ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের যাত্রাও শুরু হবে এ মেলা থেকে।
প্রতিবছরের মতো একুশে গ্রন্থমেলা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলা খোলা থাকবে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে। এই দুদিন বইমেলায় শিশু প্রহর থাকবে। বেলা ১১টা থেকে শিশু প্রহর চলবে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এরপর বিকেল ৩টা থেকে শুরু হবে মেলার দ্বিতীয় পর্ব। শুক্র ও শনিবার বাদে অন্যান্য দিন মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টা থেকে। উন্মুক্ত থাকবে রাত ৯টা পর্যন্ত।