দেশে এখন কন্ট্রাক্ট গুম চলছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘দেশ আজ মগ দস্যু ও ঠগীদের অভয়ারণ্য। মানুষের জীবন-যাপন ও বেঁচে থাকা নির্ভর করছে ঠগীদের ওপর। যেকোন মুহূর্তে যেকোনও মানুষ অথবা যেকোনও পরিবারের যেকোনও সদস্য গুম হয়ে যেতে পারে ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট কোনও ব্যক্তির সাথে যদি তার ন্যুনতম মনোমালিন্য হয়। দেশে এখন কন্ট্রাক্ট গুম চলছে। প্রভাবশালীরা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে যারা গুমের দায়িত্বে আছে তাদের সাথে কন্ট্রাক্ট করে প্রতিপক্ষকে অদৃশ্য করাচ্ছে।’
বুধবার (১৯ জুন) নয়াপল্টনে দলের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সরকারেরই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’র ভাগ্নে ও মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নাতির গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনা গোটা জাতিকে আতঙ্কিত ও শিহরিত করে তুলেছে। এমনিতেই দেশব্যাপী গুম হওয়া পরিবারের হাহাকারে বাতাস ক্রমশ ভারী হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীনদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকেই যদি গুমের ন্যায় করুণ পরিণতির শিকার হতে হয় তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপদে বেঁচে থাকার আর কোন অবলম্বনই থাকবে না। কত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও রাস্তায় নামতে হয়। দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনকে আওয়ামী বাক্সে বন্দী করে রাখার জন্যই গুমকে জাতীয় জীবনের অংশ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) উচ্চ আদালত কথিত মানহানির অভিযোগে করা বানোয়াট দুই মামলায় ছয় মাসের জামিন দিয়েছে জনগণের প্রাণপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। কারণ এই দুইটি ভূয়া মামলা সরকারী দলের যে ব্যক্তি করেছে সে মামলাবাজ ও মানুষের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা করেই সে আনন্দ লাভ করে। তাকে সবাই চেনে ও জানে। যে অভিযোগে মামলা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণরুপে অসত্য এবং মামলারই যোগ্য নয়। তা কেবল প্রতিহিংসামূলক। তার প্রমান হলো- গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনন বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত জামিন দিলে সেক্ষেত্রে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না’
‘কিছুদিন আগে লন্ডন সফরকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্য আর ওবায়দুল কাদেরের এই কথায় বুঝা যায়, জামিনযোগ্য হলেও সরকারের কারণেই খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না। অর্থাৎ সরকার যদি খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে কোনো হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে খালেদা জিয়ার জামিন হবে এবং তিনি মুক্তি পাবেন।’
‘কালবিলম্ব না করে সামনে আর দুইটি বানোয়াট মামলায় দেশনেত্রীর জামিন নিশ্চিত হলে উচ্চতর আদালতের ওপর মানুষের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে। উক্ত দু’টি মামলায় নিম্ন আদালতকে প্রভাবিত করে সরকার বেগম জিয়াকে সাজা দিয়েছে। নিম্ন আদালতের সেই সাজার ওপর আপিল করা হলেও এখনও পর্যন্ত তাঁকে জামিন দেয়া হয়নি। আইনের শাসন ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা থাকলে বেগম জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া যেতো না। আমরা আশা করবো উচ্চতর আদালত সকল চাপকে উপেক্ষা করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন এবং জনগণের নেত্রী জনগণের মাঝে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা আরও আশা করবো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে সরকার আর কোন কারসাজি করবে না, বাধা দিবে না।’
পঞ্চম ধাপের উপজেলা নির্বাচন নিয়ে রিজভী বলেন, ‘গতকাল অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোট গ্রহণে আওয়ামী সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা ন্যাক্কারজনক ভুমিকা পালন করেছে। ২০টি উপজেলার প্রায় সবখানে পুলিশের ভুমিকা ছিল দলীয় ক্যাডারের মতো। নৌকা প্রার্থী ছাড়া অন্যরা যারা প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন তাদের ঠেকানোর জন্য মাঠে সক্রিয় ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগ। ’