স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি বলেছেন “সাপের কামড় থেকে আরোগ্য লাভে খুব দ্রুত দেশের সব উপজেলা হাসপাতালে অ্যান্টি-ভেনম দেয়া হবে।”
আজ সকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে রূপসী বাংলা বলরুমে নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম আয়োজিত “সর্প দংশন বিষয়ক সেমিনার” এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সাপের কামড়ে দেশে বছরে ছয় হাজার মানুষের মৃত্যু প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি একথা বলেন ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন, “দেশে প্রতি বছর ৬-৭ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছে। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৬ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে সাপের কামড়ে। হিসাব অনুযায়ী প্রতি দেড় ঘন্টায় ১ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে সর্প দংশনে। বর্তমানে দেশের সব জেলা শহরের হাসপাতালে অ্যান্টি-ভেনম দেয়া হচ্ছে কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে এখনো সব জায়গায় অ্যান্টি-ভেনমের অভাব রয়েছে। একারণে খুব দ্রুত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের সব উপজেলা হাসপাতালে অ্যান্টি-ভেনম দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”
নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম এর লাইন ডাইরেক্টর ডা. নূর মোহাম্মদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “দেশের অ্যান্টি-ভেনম আনা হয় ভারত থেকে। কিন্তু ভারতের সাপের ধরন বাংলাদেশের সাপের ধরন থেকে কিছুটা ভিন্নতর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ কারণে এখন থেকে আমাদের দেশের সাপের ধরনের কথা ভেবে দেশের অ্যান্টি-ভেনম উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে।”
উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথমবারের মত Snakebite Envenoming: A Strategy for Prevention and Control প্রণয়ন করে ৪টি কর্মকৌশলের মাধ্যমে তিন ধাপে ২০৩০ সাল নাগাদ শতকরা ৫০ ভাগ মৃত্যু ও অক্ষমতার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে; কমিউনিটিকে ক্ষমতায়ন ও নিয়োগ করা, কার্যকর নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অধিকতর সফল করা, অংশীদারীত্ব, সমন্বয় ও সংস্থান বৃদ্ধি করা। অনুষ্ঠানে সর্পদংশনের চিকিৎসা গাইড লাইন ২০১৯ মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এন্টি-ভেনম তৈরির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ‘ভেনম রিসার্স সেন্টার’ প্রতিষ্ঠিত হয়। উক্ত সেন্টারে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত নিয়মে বিষধর সর্প দংশনের চিকিৎসার জন্য দেশের প্রধান বিষধর সাপের বিষ সংগ্রহ করে এন্টি-ভেনম তৈরি আবশ্যিক বিবেচনা করে, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষধর সাপ সংগ্রহ করে বিজ্ঞানভিত্তিক সংরক্ষণ, লালন-পালন, বিষ সংগ্রহ, ভেনম-এন্টিভেনমের বিভিন্নমূখী আবশ্যিক পরীক্ষা ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে এন্টি-ভেনম তৈরিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে সর্পদংশনে একটিও অকাল মৃত্যু যেন না হয় তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করণে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত কৌশলপত্রের আলোকে জরুরিভাবে বাংলাদেশে সর্পদংশনের কৌশলপত্র ও অর্থের ব্যবস্থাসহ সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উপর অতিথি ও বক্তারা গুরুত্বারোপ করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিজিওনাল অ্যাডভাইজার ডা. অপর্ণা শাহ, কর্মকৌশল উপস্থাপনা করেন ও ‘ভেনম রিসার্স সেন্টার’ এর কর্মকান্ড উপস্থাপন করেন ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ। লাইন ডাইরেক্টর ডা. নূর মোহাম্মদ এর সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন সেক্টরের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম. এ. ফয়েজ উপস্থিত ছিলেন।