জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জনগণের ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। জনগণকে সাথে নিয়ে সেই ঐক্যের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে, করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্বৈরশাসকরা জনগণের ঐক্যের সামনে দাঁড়াতে পারে না।
বৃহস্পতিবার ‘একুশ মানে অধিকার আদায়ের অঙ্গীকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এ আলোচনার সভার আয়োজন করে গণফোরাম।
এতে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি প্রফেসর আবু সাঈদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলির সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. হেলাল উদ্দিন, গণফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ ও প্রচার সম্পাদক খান সিদ্দিক।
ড. কামাল বলেন, বিভেদ সৃষ্টির কম চেষ্টা করা হয়নি। সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় নিয়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা সফল হয়নি। সামনে জাতীয় মুক্তির জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে নিরাশ হওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এই রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করা, জনগণের ঐক্য, মৌলিক অধিকারকে বাস্তবে রূপ দেয়া। জনগণ যেন তাদের অধিকার-প্রাপ্যটা আদায় করতে পারে, সেজন্য আমাদের ঐক্যকে সুসংহত করতে হবে। সেজন্য পাড়ায়-মহল্লায় থানায় জেলায় এবং সারা দেশে ঐক্যবদ্ধতার ওপর জোর দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি স্বৈরশাসকরা কখনও জনগণের ঐক্যের সামনে দাঁড়াতে পারে না। কারণ ঐক্যবদ্ধ হলে দাবিয়ে রাখা যায় না। এ জন্যই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ড. কামাল বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে যাচ্ছে এই রাষ্ট্রকে কিন্তু আমরা ধরে রেখেছি। এটা কিন্তু কম অর্জন নয়। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতিকে কাজে লাগিয়ে। সে রাষ্ট্রগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও অনেকবার হয়েছে কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয়নি, জনগণ সফল হয়েছে। এখনও বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে আমরা জিইয়ে রেখেছি। বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, জনগণ হচ্ছে শক্তি ক্ষমতার উৎস। মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, কায়দা করে, সত্যিকার অর্থে মানুষের রায়কে তাদের পক্ষে নেয়া যায় না, গত ৪৮ বছরেও সেটা কেউ পারেনি, এটাই আমাদের ৪৮ বছরের বড় অর্জন। জোর করে ক্ষমতা দখল করা যায়, কিন্তু জনগণকে দখল করা যায় না।
নির্বাহী সভাপতি প্রফেসর আবু সাঈদ বলেন, দেশের অনেক বুদ্ধিজীবীও ভাষা আন্দোলনকে শুধুমাত্র ভাষা আন্দোলনের লড়াই হিসেবে বিবেচনা করেন। বাস্তবিক অর্থে এটা অনেক বড়। তৎকালীন বিরাজমান অবস্থার প্রেক্ষিতে অন্তর্নিহিত শক্তি অর্জন করেছিল ভাষার আন্দোলন, যা স্বাধীনতার সংগ্রাম পর্যন্ত নিয়ে গেছে। ভাষা সবসময় অসাম্প্রদায়িক। কারণ সবার মুখের ভাষা অসাম্প্রদায়িক। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের ভাষাও অসাম্প্রদায়িক। সার্বিক মুক্তি, অধিকারের নাম একুশ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আর্থসামাজিক মুক্তির সঙ্গে কিন্তু সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা বলেছিলেন। আজকে সাংস্কৃতিক মুক্তি দূরের কথা অর্থনৈতিক মুক্তি আশাও অনক দূরে। বরং সব শেষ হয়ে যাচ্ছে, সাংস্কৃতিক মুক্তি অপসংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে।
আবু সাঈদ বলেন, ভাষার লড়াই করতে গিয়ে আমরা একটি আত্মনিয়ন্ত্রিত জাতিতে পরিণত হয়েছি। ১৯৪৭ সালে আমরা মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, পরবর্তীকালে দেখা গেল মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে গড়া পাকিস্তান সর্বদিক থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ধ্বংস করার নানা ধরনের চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করছে। আমরা দ্বিজাতিতত্ত্বের সেই চেতনাকে ছিন্ন করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়েছিলাম। আর যেটা শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলন মধ্য দিয়ে।
তিনি আরও বলেন, আজকে ভয় ও ভেলকিবাজির মাধ্যমে নির্বাচনকে ক্ষমতাসীনরা দখল করেছে। আজকে তাই বার্তা হচ্ছে, জনগণের অধিকার আদায় ও সত্যিকারের মালিকানার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, সেই প্রত্যয় নিয়ে আমাদের এগিয়ে চলতে হবে। একুশের চেতনা আমাদের সেটি শেখায়।