করোনা ভাইরাসের বিষয়টি সরকার গোপন করতে চেয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান সরকার করোনা ভাইরাস নিয়ে এতোদিন কিছু বলেননি। তারা খুঁজে পায়নি, কী কারণে পাইনি তা জানি না। হঠাৎ করে কালকে খুঁজে পেয়েছে। যখন বিদেশি অতিথিরা (মুজিববর্ষ উপলক্ষে) বাংলাদেশে আসতে অপারগতা প্রকাশ করলেন তখনই এই তিনজনের নাম আসলো।’
সোমবার (৯ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দুটি গ্রন্থ ‘প্রগতি ও সত্যের সন্ধ্যানে’ ও ‘মূল্যবোধ অবক্ষয়ের খণ্ডচিত্র’ প্রকাশনা উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার ধারণা তারা পুরোপুরি জিনিসটাকে গোপন করার চেষ্টা করেছেন। এ ব্যাধিটি বাংলাদেশে অনেক আগেই এসেছে বলে অনেকের ধারণা। এই ধারণাগুলো সত্যিকার অর্থে এখন প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি এই বিষয়ে সরকারের যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সেই ব্যবস্থাগুলো এখনও নেয়া হয়নি। অবিলম্বে সমস্ত এয়ারপোর্টগুলোতে, নৌ বন্দর, স্থলবন্দরগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা জাগাতে হবে। চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্ধারণ করে দেয়া দরকার।’
খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে এ ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মুক্ত আছেন, জামিন পেয়েছেন। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, একই মামলায় বিচার বিভাগ যখন অন্যদের মুক্তি দেন তখন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন না কেন?’
পিরোজপুরের জজ বদলির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘কোথায় বিচার বিভাগ? আইন সকলের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করে। সে অধিকারগুলো আজ কোথায়? গণতন্ত্রই যদি না থাকে, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি ধ্বংস করে দেয়া হয় তাহলে সেখানে কিছুই গড়ে উঠে না। আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলাম সেই স্বপ্ন সম্পূর্ণভাবে চুরমার হয়ে গেছে।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এগুলো কী ধরনের অশালীন কথাবার্তা। স্বয়ং একজন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪০০ টাকার মেজর তার একদিনের একটা বাঁশির ফুঁতে স্বাধীনতা আসেনি’। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, একজন মেজরের বাঁশির ফুঁতে সমগ্র জাতি স্বাধীনতার জন্য এগিয়ে এসেছিল। যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আপনারা তখন কেউ পলায়ন করেছিলেন, কেউ আত্মসমর্পণ করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘অন্যকে অপমান করার মধ্য দিয়ে মহত্ব গড়ে উঠে না। আজকে স্বাধীনতাযুদ্ধে যাঁদের অবদান আছে তাদেরকে স্বীকার করে নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি দুর্ভাগ্যক্রমে তারা (আওয়ামী লীগ) অন্য কাউকে স্বীকার করতে চায় না। না স্বীকার করতে চান তাজউদ্দিন আহমেদকে, জেনারেল ওসমানীকে, না শহীদ জিয়াউর রহমানকে। অন্যান্যদের কথা বাদই দিলাম।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সাবেক উপচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, প্রফেসর ড. মুসতাহিদুর রহমান, ডেইলী ফিন্যান্সিয়াল হেরাল্ড’র সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।