সরকারের গার্মেন্টস ও মার্কেট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন প্রণোদনা দেওয়া সত্ত্বেও গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হলো গার্মেন্টস মালিকরা তাদের অর্ডার পূরণ করার জন্য শ্রমিকদের আবার বিপদে ঠেলে দিল, এদিকে সংক্রমণের হার বাড়ছে প্রত্যেক দিনই পত্রপত্রিকায় দেখা যাচ্ছে শিল্পাঞ্চল গুলোতে সংক্রমণের হার বাড়ছে, কোথাও সামাজিক দূরত্ব নেই ।গত ১২ বছরে ক্ষমতাসীনরা দেশটাকে তলিয়ে দিয়েছে । সরকারের এরকম সিদ্ধান্ত খুবই আত্মঘাতী এবং সাংঘর্ষিক, এই ভীতিকর অবস্থার জন্য সরকার দায়ী ।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি রুমিন ফারহানা বলেছেন ন্যূনতম দায়িত্ববোধ ছাড়াই সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা নেই বললেই চলে । সরকারের এই প্রণোদনা তো একটা ঋণ গার্মেন্টস শিল্পে প্রণোদনা কারা পাবে, কারা পাবে না এটা তো সরকার পরিষ্কার করেনি ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছে জনগণকে ।সবকিছুতেই সরকার সমন্বয়হীনতার পরিচয় দিয়েছে ।
বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন , জীবন-জীবিকার কথা বলে সরকার জীবিকাকে সামনে এনেছে জীবনকে ভুলে গেছে এতে প্রতীয়মান হয় যে তারা কোনোভাবেই এটা চায় না তাদের চেয়ারে হাত পড়ুক হাজার হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়ে তারা সবকিছু খুলে দিয়েছে । যেখানে সংক্রমণের হার বাড়ছে এখানে সরকার চালাকি করেছে যাতে পরবর্তীতে কেউ তাদেরকে কিছু না বলতে পারে যে জীবিকার পথে সরকার রুখে দাঁড়িয়েছে । আর মানুষ মরলে তারা বলবে এখন উন্নত দেশেও এটা ঘটছে আর এদিক দিয়ে মানুষকেতো তারা বুঝ দিয়ে রেখেছে ওই যে কাজ করার সুযোগ দিয়ে । সরকারের এরকম সিদ্ধান্তে কোন মৌলিকত্ব, মানবিকতা, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা কিছুই নেই তারা শুধু তাদেরকে নিরাপদ ও চেয়ারে রাখার জন্যই এরকম সূচকীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
সরকারের তীব্র নিন্দা করে সাবেক এই সাংসদ বলেন , বাংলাদেশে গত ১২ বছরে যে নব্য ধনী শ্রেণী গড়ে উঠেছে তারা বেশিরভাগই যেই গার্মেন্টসের মালিক সেই ব্যাংকের মালিক আবার যেই ব্যাংকের মালিক সেই আবার ঋণখেলাপি আবার সেই অর্থ পাচারকারী । কথা ছিল ৩০ ভাগ কারখানা খুলবে এবার সেখানে বিজিএমইএ পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে ৮৬ ভাগ কারখানা সেখানে খুলেছে । এক নারায়ণগঞ্জেই কারখানা খোলার পরপরই ব্যাপক পরিমাণে লোক সংক্রমিত হয়েছে সুতরাং এটাই প্রতীয়মান হয় যে এই প্রণোদনা তো শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য না যদি তাই হত রাস্তায় রাস্তায় শ্রমিকেরা মার্চ-এপ্রিলের বেতনের জন্য কেন বিক্ষোভ করছে । এই প্রণোদনার শুধুই আওয়ামী লীগ কে ক্ষমতায় রাখার জন্য যে নব্য ধনী শ্রেণী তাদের শাসনামলে গড়ে উঠেছে তাদের জন্যই এই প্রণোদনা । প্রণোদনার কথা বলে নব্য ধনী শ্রেণীকে আরও বিত্তবান শক্তিশালী করার জন্যই তারা জনগণের জীবন বাজি রেখে এই খেলা খেলছে ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন সরকারকে এটা কোনও লকডাউন করেছে কোন প্রটোকল নেই কোন নিয়ম শৃঙ্খলা নেই সব জায়গায় শিথিল অবস্থা তারা করে রেখেছে দেশের এই সংকটময় সময়ে, কোথাও তারা কোনও প্রটোকল সৃষ্টি করতে পারেনি কোন জেলাতেই না , বাংলাদেশের মানুষ তো আর আইল্যান্ডে বসবাস করে না ।একবার শুনলাম গার্মেন্টস খুলল আবার বন্ধ করলো আবার গার্মেন্টস খুলল এটাকে তো লকডাউন বলা যেতে পারে না, এটা একটা বিশৃঙ্খলা পরিবেশের পরিচয় দিয়েছে ,এই সংকটময় সময়ে সবকিছুর একটা দিক নির্দেশনা থাকতে হবে ,কারা জরুরি অবস্থায় ঘরে থাকবে আর কারা একান্তই জরুরি অবস্থায় বাইরে থাকবে ।সবকিছুর একটা সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা থাকতে হবে যা সরকার লকডাউন বলে কিছুই করতে পারেনি যার জন্য চতুর্দিকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে । এটাকে লকডাউন বলা যেতে পারে না সরকার কোন প্রোটোকলই সৃষ্টি করতে পারেনি জনগণের জন্য, সরকারি মহামারীতে জনগণকে অন্ধকারে রেখেছে জাতিকে কিছু পরিষ্কার করতে পারেনি সরকারের এই দায়িত্বহীন আচরণ মোটেই কাম্য নয় ।
এর আগে গার্মেন্টস খুলে দিয়ে ক্ষমাহীন অপরাধ করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে প্রতিটি মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এ যে গার্মেন্টসগুলোকে তারা (সরকার) খুলে দিলেন, গার্মেন্টস খুলে দিয়ে কী করলেন? বাইরের এলাকাগুলো থেকে সব চলে এলো যারা সংক্রমিত হয়ে চলে গিয়েছিল আবার সংক্রমিত হয়ে ফেরত এলো। পত্রিকায় নিউজ আছে যে, কুমিল্লায় সংক্রমিত হয়ে গেছেন তিন দিন আগে, তাকে তার বাসায় ঢুকতে দেয়নি তার সন্তান-স্ত্রী, তার বোনের বাসা গেছেন, সেখানে সে মারা গেছেন। এ যে ভয়াবহ পরিণতির দিকে তারা (সরকার) গোটা জাতিকে ঠেলে দিচ্ছেন-এটা ক্ষমাহীন অপরাধ। আমি তো মনে করি যে, দিস ইজ এ ক্রিমিনাল অফেন্স। এ ধরনের ভুল, এটা ভুল নয়, এগুলো হচ্ছে ক্রিমিনাল অফেন্স।’
পাশাপাশি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন শপিংমলে সামাজিক দূরত্বের নির্দেশ দিয়ে খুলে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও খুলে দেওয়া হয়েছে। যেখানে ছোঁয়াচে এমন একটি রোগ একজনের কাছ থেকে অন্য জনের শরীরে গেলে জীবননাশের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে সরকার শপিং মল খুলে দিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন- খুলে না দিলে কীভাবে চলবে। তাদের কথায় মনে হচ্ছে মানুষের জীবনের চেয়ে অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ। অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধায় সরকার মানুষের জীবনকে পরোয়া করছে না।’