সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের যেভাবে গুম করছে সেভাবে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাকেগুম করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) রাজধানীর তোপখানা রোডে শিশু কল্যাণ পরিষদের সামনে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সংস্থা (জাসাস) এর উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘চীনে যখন করোনা শুরু হয়েছিল তখন থেকে আমাদের দেশে করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিলে এত মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল হতো না। অন্যান্য দেশের দৃষ্টান্ত আছে আগাম প্রস্তুতি নেয়া সেসব দেশে তেমন আক্রান্ত হয়নি। আর আমাদের দেশের সরকার তখন অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল। এর পরিণতি দেখছি প্রতিদিনই লাশের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। একটি বিশেষজ্ঞ দলের জরিপে আসছে ৯২৯ জন লোক করোনা উপসর্গের মারা গেছেন। আর সরকার বলছে- ২৬৯ জন করোনা উপসর্গ মারা গেছে। এই সরকার মৃত্যু আক্রান্ত সংখ্যাকে গুম করছে যেভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম করে।’
করোনা মহামারী মধ্যে দেশের মধ্যে যা ঘটছে তাকে আড়াল করার জন্যই বিএনপি নেতা-কর্মীদের গুম করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে সবকিছু পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু এই সরকারে কোন পরিবর্তন দেখছি না। সরকারের পূর্বের আচরণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করছে। এই মহামারীর মধ্যেও আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হচ্ছে। মামলা দেয়া হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে। ছাত্রদল নেতা রিপনকে তার বাড়ি থেকে মধ্যরাতে তুলে নেওয়া হয়েছে। তারপর স্বীকার করা হয়নি। গতকাল তাকে থানায় দেয়া হয়েছে। এটা কিসের নমুনা। সবাই বলছে ঐক্যবদ্ধভাবে গরিব, দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াই।কিন্তু সরকার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের কোন ত্রাণ পাই না। আজকে জাসাসের নেতারা নিজেদের টাকায় ত্রাণ দিচ্ছে। তাহলে আপনারা কেন এত ক্ষুব্ধ হলেন। যারা ত্রাণ দিয়েছে তাদেরকে আপনারা কেন গুম মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করছেন। এখানে আপনাদের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি।’
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘একজন চিকিৎসক বলছেন দশ দিন পরে যারা করোনায় আক্রান্ত হবেন তাদের আর সেবা দেয়া যাবে না। চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। করোনা রোগীদের সেবা দিতে সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে মৃত্যুর সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সরকার উন্নয়নের ফ্লাইওভার দেখাচ্ছেন। মানুষের জীবন বাঁচানোর পদক্ষেপ তো বড় উন্নয়ন। আপনারা মানুষের জীবন না বাঁচিয়ে ফ্লাইওভার দেখাচ্ছেন।’
‘আজকে যদি ভালো ভালো হাসপাতাল তৈরি করতেন, ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করতেন তাহলে এত মানুষ মারা যেত না। আপনারা ফটকা বাজার রাজনীতি করছেন। বিদেশে টাকা পাচার করছেন। আমরা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি পুঁজিবাজার অর্থনীতি বিশ্বাস করি। আর আপনারা তৈরি করেছেন ক্যাসিনো সম্রাট। ক্যাপিটালিজমের কারণে দুই-একটি ফ্লাইওভার দেখিয়ে সম্রাট খালেদ বাহিনী তৈরি করেছেন। ভালো হাসপাতাল তৈরি করে করোনা মোকাবেলায় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য।’
ত্রাণ বিতরণের সময় রিজভী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মহামারির মধ্যে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। দিন আনে দিন খায় এমন মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করছেন। যতই মামলা হুমকি-ধমকি দেওয়া হোক না কেন বিএনপির নেতাকর্মীদের ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।’
ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে জাসাসের সভাপতি মামুন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং জাসাসের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন খোকনের পরিচালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি ইথুন বাবু, জাহাঙ্গীর আলম রিপন, শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা, ডাক্তার আরিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম স্বপন, জাসাস নেতা শামসুল হক, এনামুল হক জুয়েল, ফারজানা, আহসান হাবীব, নোয়াব মিয়া, আশরাফুল ইসলাম, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুদ্দিন ভূঁইয়াসহ নেতৃবৃন্দ।