ধেয়ে আসা দুর্ভিক্ষেও বিএনপি ক্ষুধার্ত ও নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, দুর্যোগকালীন সময়ে দেশে যখন দুর্ভিক্ষ ধেয়ে আসছে তখন ক্ষুধার্ত ও নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। কিন্তু আমাদের ত্রাণ বিতরণে বাধা দেয়া হচ্ছে। হামলা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। মামলা-গ্রেফতারও করা হচ্ছে। এই বর্বরোচিত হামলা করোনাক্রান্ত দেশকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে করোনাভাইরাসের মরণছোবল থেকে মানুষকে উদ্ধার নয়, বরং সারাদেশে সন্ত্রাস চালিয়ে সরকার নিজেদের লুটপাট ও গদি সামলাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্স তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগকালে গত ২১ মে সাতক্ষীরা জেলায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামনগর উপজেলার অসহায়, গরীব ও ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য জগলুল হায়দারের নির্দেশে তার সন্ত্রাসী পুত্র উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক রাজিব হায়দারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা দফায় দফায় বর্বরোচিত হামলা চালায়। এমপি পুত্রের নেতৃত্বে ন্যাক্কারজনক এই সহিংস হামলার ঘটনাটি সকল পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং প্রতিটি মানুষ ক্ষোভ ও ধিক্কার জানায়। হামলাকারী ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। আমরা এই নারকীয় হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করেছি।
অথচ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, কোথায় কে বাধা দিয়েছে আপনারা স্পষ্ট করুন, তথ্য-প্রমাণ দিন। অভিযোগ সত্য হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। মানবিক কাজে বাধা প্রদান আওয়ামী লীগের নীতি নয়।
দেশের প্রতিটি মানুষ গণমাধ্যমে ও টেলিভিশনের ফুটেজে দেখেছেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কিভাবে ত্রাণ বিতরণের বহরে তাণ্ডব চালিয়েছে। তথ্য প্রমাণ প্রতিটি মিডিয়ায় আছে। কিন্তু কে বাধা দিয়েছে তা কাদের সাহেবরা জানেনও না, দেখেনও নি। সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে দিবানিদ্রায় গেলে জানবেন কীভাবে, দেখবেন কীভাবে? দেশের মানুষের ঘোরতর সন্দেহ, এই হামলা সরকারের উপর মহলের ইঙ্গিতে ও জ্ঞাতসারেই হয়েছে।
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এমনিভাবে ইতোপূর্বেও নারায়ণগঞ্জের মহিলা কাউন্সিলর ও মহিলা দল নেত্রী আয়শা আক্তার দীনা এবং ফেনীতে কৃষক দল নেতা আলমগীর চৌধুরী এবং ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন কমান্ডার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে গরিব ও দুস্থদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। একই সঙ্গে ত্রাণ সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। রাজশাহীর তানোর ছাত্রদল নেতা আবদুল মালেককে ত্রাণ বিতরণের সময় গ্রেফতার করে ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এই ভয়াবহ দুর্দিনে সরকার যখন বেছে বেছে আওয়ামী লীগের লোকদেরকে ত্রাণ দিচ্ছে তখন বিএনপি প্রকৃত সাধারণ দুস্থ ও অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে ত্রাণ সামগ্রী। আর তাতে হামলা ও লুটপাট চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা। কোন কোন স্থানে আওয়ামী লীগের বি-টিমের ভূমিকা পালন করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া শুধু নিজের মত প্রকাশের জন্য আইসিটি আইনে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীকে কয়েকদিন গুম করে রাখার পর মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাকালে আওয়ামী লীগ চরিত্র বদলায়নি। ত্রাণ লুট-চুরিতে তারা রেকর্ড করেছে। কয়েকদিন আগেই ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ নেতার গ্যারেজ থেকে ১২’শ বস্তা চাল উদ্ধার হয়েছে। এই করোনাকালে ক্ষমতাসীনদের এধরনের অসংখ্য ঘটনা মানুষের মুখে মুখে। ফলে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা ত্রাণ দিতে গেলে বিনাভোটের মিডনাইট সরকারের গাত্রদাহ হওয়াটাই স্বাভাবিক।