কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার সঙ্গে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যার অদ্ভুত এক মিল রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘এই ঘটনা সবসময় সেই কারবালার ঘটনাকেই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আরেকটি কারবালা ঘটে গেল বাংলাদেশে।’
আজ রোববার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আশুরা তথা মহররমের ১০ তারিখ। এদিনে নবী (সা.) এর নাতি ইমাম হোসেনকে কারবালায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তারা ন্যায়ের পথে ছিলেন। কারবালার এই হত্যাকাণ্ডে নারী-শিশুদের হত্যা করা হয়নি। কিন্তু ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি কিংবা মিন্টো রোডে কোথাও নারী-শিশু রক্ষা পায়নি। তবুও ১৫ আগস্টের এ ঘটনার সঙ্গে কারবালার ঘটনার যেন এক অদ্ভুত মিল রয়ে গেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার অপরাধটা কী ছিল- একটি দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, একটি জাতিকে আত্ম-পরিচয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন? এটাই কী তার অপরাধ ছিল?’
পাকিস্তান নামের যে রাষ্ট্রটি হয়, সেই রাষ্ট্রের সৃষ্টির পেছনেও তো তার (বঙ্গবন্ধুর) অনেক অবদান ছিল জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে তিনি তো পশ্চিম পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছিলেন। শেরে-বাংলা থেকে সোহরাওয়ার্দী সবাই এই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তাদের একজন কর্মী হিসেবে তিনি কাজ করেছেন।’
এ সময় ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (বঙ্গবন্ধুর খুনিরা) এই সাহস কোথায় পেয়েছিল। তাদের নিজের কথায়, বিবিসিকে কর্নেল রশীদ ও কর্নেল ফারুকের দেওয়া ইন্টারভিউ এবং বিভিন্ন বিদেশি পত্রিকায় তারা যে ইন্টারভিউ দিয়েছিল, সেখানে তারা নিজেরা স্বীকার করেছিল- তাদের সঙ্গে জিয়াউর রহমান আছে, জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে তারা সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছিল।’
‘আর সেইসঙ্গে বেইমানি-মোনোফেকি করেছিল মোশতাক, যিনি আবার বাবার কেবিনেটেই বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। সে সম্পূর্ণভাবে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ১৫ আগস্টের পর মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিল। মোশতাকের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ছিল জিয়াউর রহমান’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য, হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (র.) ও তার পরিবারবর্গ কারবালার প্রান্তরে শাহাদত বরণ করেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় তাদের এ আত্মত্যাগ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরের আলো ফোটার আগেই বাঙালি জাতিকে মুক্তির আলো দেখানো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল চক্রান্তকারী কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য। ঘাতকেরা সেদিন নারী ও শিশুদেরও রেহাই দেয়নি, যা ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।