র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় কারাগারে গেছেন সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম। কারাগারে তিনি ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।
গতকাল সোমবার পুরান ঢাকার সাংসদ হাজি সেলিমের বাসায় প্রায় ৭ ঘন্টার অভিযান শেষে রাতে গ্রেপ্তারের পর আজ মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে তাকে র্যাব হেফাজত থেকে কারাগারে পাঠানো হয়।
র্যাব-৩’র অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল রকিবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ইরফানকে রাত দেড়টার পরে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাকে মদ্যপান ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করার অপরাধে সাজা দিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ দুপুরের মধ্যে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করতে যাচ্ছে র্যাব।
ইরফানকে কেরানীগঞ্জের কারাগারে নেওয়া হয়েছে। ঢাকার জেলার মাহবুবুল ইসলাম জানান, করোনাভাইরাস মহামারিকালে কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো নতুন বন্দিকে একটি সেলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। সে অনুযায়ী ইরফান কারাগারে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।
গতকাল দুপুরে চাঁন সরদার দাদা বাড়ীতে অভিযান চালায় র্যাব। সাড়ে সাত ঘণ্টা ধরে চলা এ অভিযানকালে ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদুলকে আটক করে র্যাব। ইরফান সেলিমের কাছ থেকে গুলিসহ লাইসেন্সবিহীন একটি বিদেশি পিস্তল ও ৬ লিটার বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। তার দেহরক্ষী জাহিদুলের কাছ থেকে একটি এয়ারগান, গুলি ও ৪০০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। এছাড়া ওই বাসা থেকে একটি ব্রিফকেস, একটি হ্যান্ডকাফ, একটি ড্রোন, ৬লিটার বিদেশি মদ, ৩৮ থেকে ৪০টি অবৈধ ওয়াকিটকি, ওয়াকিটকির বেজ স্টেশন, ৩টি ভিএইচএফ সেট (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি), দূরবীনসহ এ সংক্রান্ত সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। যোগাযোগ প্রযুক্তির এসব সরঞ্জামের সবই অবৈধ। এছাড়া অভিযানকালে র্যাব দেখতে পায়, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার দুটি ফ্লোরেই রয়েছে মদ ও ইয়াবা সেবনের ব্যবস্থা। জানা গেছে, ইরফানের এই কন্ট্রোল রুমে মানুষকে ধরে আনা হতো হ্যান্ডকাপ পরিয়ে। এখানে টর্চার সেলও রয়েছে। ওয়াকটকির জন্য ছয় মাস এবং বিদেশি মদ রাখার জন্য ছয় মাস মিলিয়ে মোট এক বছরের জন্য ইরফান সেলিমকে কারাদণ্ড দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। ইরফানের মতো একই সাজা প্রদান করা হয় জাহিদুলকেও। অভিযান শেষে রাত ৮টার দিকে তাদের দুজনকে র্যাব-৩ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ এবং মামলার এজহার সুত্রে, ওই গাড়ি সাংসদ হাজী সেলিমের। তিনি গাড়িতে ছিলেন না। তার ছেলে ও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। পুলিশ সাংসদের গাড়ি ও নৌবাহিনীর কর্মকর্তার মোটরসাইকেল রাতেই ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, আহত এক ব্যক্তি নিজেকে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ বলে পরিচয় দেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, তিনি স্ত্রীসহ মোটরবাইকে ফিরছিলেন। ওই গাড়ি তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। তিনি তখনই মোটরসাইকেল থামান এবং নিজের পরিচয় দেন। গাড়ি থেকে নেমে দুই ব্যক্তি তাকে মারধর করেন।
ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন- ইরফান সেলিম, এ বি সিদ্দিক দীপু, জাহিদ, মীজানুর রহমান ও অজ্ঞাতনামা আরও দু-তিনজন ব্যক্তি।