প্রশাসনকে শতভাগ দলীয়করণ করা হয়েছে বলে অভিযো তুলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চাকরির ক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্টে বিএনপির কোনো গন্ধ থাকলে তার আর চাকরি হয় না। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়ার জন্য আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মী আজ আসামি, এক লাখের ওপরে মামলা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ইন্টারভিউতে পাস করলো তারপরও তার ইন্টারোগেশন হয়, ডিএনএ টেস্ট হয়; বিএনপির কোনো গন্ধ থাকলে তার আর চাকরি হবে না। আমার এলাকার এক ভালো ছাত্র মাস্টার্স পাস করেছে, বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে। ইন্টারভিউতে ভালো করেছে, তারপর যখন এনএসআই তদন্তে গেছে সেখানে দেখা গেল তার চাচা বিএনপি করেন, সেজন্য তার চাকরি হয়নি। এটাই বাস্তবতা, সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রের জন্য কাজ করছি।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়ার জন্য আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মী আজ আসামি, এক লাখের ওপরে মামলা। আমাদের বহু নেতা গুম হয়ে গেছেন, বহু নেতা খুন হয়ে গেছেন। এত কিছু ত্যাগ শুধু গণতন্ত্রের জন্য। রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের গণতন্ত্রের জন্য এগিয়ে আসা দরকার। এক কণ্ঠে আওয়াজ তোলা দরকার- আমাদের অধিকার আমাদের দিতে হবে। আমার যে ভোটের অধিকার, আমার যে সংগঠন করার অধিকার, আমার কথা বলার অধিকার আমাকে ফিরিয়ে দাও।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে মিথ্যা বলার জন্য কয়েকটি চ্যানেল প্রেসিডেন্টকে ব্লক করেছে। দিস ইজ ডেমোক্রেসি। আর এখানে তো মিথ্যা পুরোপুরি নিয়ম হয়ে গেছে। একজন তো সারাদিন বলতেই থাকেন। গতকালও বলেছেন, অন্ধকারে থাকতে থাকতে নাকি আমাদের সংস্কৃতিই অন্যরকম হয়ে গেছে। অন্ধকারে তো আপনারা আছেন। দেখতে পাচ্ছেন না, চারদিকে কী অবস্থা। মানুষের মধ্যে কী চলছে। তাদের চোখের ভাষা আপনারা পড়তে পারছেন না। দেয়ালের লিখন দেখতে পারছেন না। আপনারা একটা অন্ধকার গহবরের মধ্যে বাস করছেন। সেই সাথে দেশ ও জাতিকে টেনে নিয়ে গেছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেই অন্ধকার থেকে আমরা আলোতে ফিরিয়ে আনতে চাই। আমার আহবান থাকবে, এই নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার তৈরি করে, সেই সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আর এই উপ-নির্বাচনগুলোতে এখনও সময় আছে, নির্বাচন কমিশন যদি ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এভাবে বশংবদ, নখদন্তহীন প্রাণী হয়ে বেঁচে থাকার তো কোনো মানে হয় না। তার চেয়ে ভালো যে তারা পদত্যাগ করবেন।
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন বয়কট করা, হরতাল করা, ভায়োলেন্স করা- এটা একটা পলিটিক্যাল কালচার হয়ে গেছে। এই যে বৈধতার প্রশ্ন তুললেন- বার্মাতে এর আগে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে তখন সু চির যে পার্টি সেই পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি? ২০০৯ সালে তারা ভূমিধ্বস জয় পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে। মালয়েশিয়াতে আনোয়ার ইব্রাহিম দুজন নিয়ে শুরু করেছিলেন, সেই দুজন নিয়ে করতে করতে আজকে তারা সরকার গঠন করেছে। নেলসন ম্যান্ডেলা ২৭ বছর জেলে ছিলেন। জেলে থাকা অবস্থায় কোনো নির্বাচন তারা বাদ দেননি। পরবর্তীকালে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে গিয়ে তারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। গণতান্ত্রিক দলের জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনে যেতে হবে, কাজ করতে হবে। প্রতিরোধটা গড়ে তুলতে হবে জনগণের মাধ্যমে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭০ সালে জেলে পুরে নির্বাচন হয়েছিল, বিরোধী দল তখনও গেছে। ১৯৭৩ সালে বিরোধী দল নির্বাচনে গেছে। তখনকার নির্বাচনের অবস্থা একই রকম ছিল। কিন্তু গেছে তো। পরবর্তীকালে সবাই সবসময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তা না হলে আপনি যে একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, উই বিলিভ ট্রান্সফার অব পাওয়ার বাই ইলেকশন। আমরা তো বিপ্লবী দল নই। একটা কথা মনে রাখতে হবে। আমরা বন্দুক-পিস্তল দিয়ে যুদ্ধ করে ক্ষমতা নিতে চাই না। আমরা কোনোদিন কোনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেও নেইনি।