বাংলাদেশের আগাম দুর্যোগ সতর্কীকরণ ব্যবস্থা আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল)-এ দুর্যোগ সতর্কীকরণ গবেষণা কেন্দ্রের (ওয়ার্নিং রিসার্চ সেন্টার) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা সমাদৃত হয়েছে ।

৩০ জুন বুধবার রাতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ভার্চুয়ালি এই কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।

আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থায় অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করায় এই অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ মোহসীনকে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় ।

মোঃ মোহসীন তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ত্রাণ নির্ভর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেন । ১৯৭২ সালে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আগাম সতর্কবার্তা প্রচার ব্যবস্থা শুরু করেন । উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ও সম্পদ বাঁচাতে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রচারে সিপিপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে সিপিপি’র যাত্রা শুরু করেছিলেন যাঁরা আগাম সতর্কসংকেত প্রচার এবং সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের জানমাল রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে ।বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক সংখ্যা ৭৬ হাজার ২০ জনে উন্নীত হয়েছে । এই স্বেচ্ছাসেবকদের ৫০% নারী । তিনি আরো উল্লেখ করেন, পুরো দেশ জুড়ে আধুনিক আবহাওয়ার রাডার এবং পূর্বাভাস ব্যবস্থা রয়েছে । উপকূলে ৫ হাজারের বেশি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে । জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় । দুর্যোগে প্রাণহানির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বলেন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারান । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে সাম্প্রতিক কালে একই মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি একক সংখ্যায় নেমে এসেছে ।

দুর্যোগ সতর্কীকরণ গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরিচালক ড. কারিনা ফার্নলি, উপ-পরিচালক অধ্যাপক ইলান কেলমান, ইউসিএল সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডিজাস্টারের পরিচালক অধ্যাপক মওরিন ফর্ডহ্যাম এবং লিভারপুল হোপ ইউনিভার্সিটির আর্লি ওয়ার্নিং বিশেষজ্ঞ এলিস বেনেটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

ড. কারিনা ফার্নলি বাংলাদেশের দুর্যোগ সতর্কীকরণ ব্যবস্থার সাফল্যের কারণ হিসেবে কার্যকর নীতি ও সবল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ মানবসম্পদে সমৃদ্ধ সতর্কীকরণ কেন্দ্র, মানবতার সেবায় বলীয়ান প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক, পর্যাপ্ত সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র ও সমাজের সকলকে সম্পৃক্ত করে কাজ করার নীতির বিষয় উল্লেখ করেন । তিনি বাংলাদেশের আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত ও অনুসরণীয় বলেও মন্তব্য করেন ।

অধ্যাপক মওরিন ফর্ডহ্যাম বলেন, দুর্যোগঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সকল পর্যায়ে নারীর নেতৃত্ব বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি । বাংলাদেশের আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থায় নারীর নেতৃত্ব বিশেষভাবে প্রশংসার যোগ্য ।

আর্লি ওয়ার্নিং বিশেষজ্ঞ এলিস বেনেট বলেন, বিপূল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি একটি বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছে । এই প্রক্রিয়ায় দুর্যোগপ্রবণ দেশসমূহ তাদের দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমাতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে ।