উন্নত চিকিৎসার জন্য গণতন্ত্রের লড়াকু সৈনিক বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবে না এ বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তার কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন।
রোববার দুপুরে রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে গত শনিবার আয়োজিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, আইনের কোথাও একথা বলা নেই যে সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিতে পারবেন না। যেখানে খুনের মামলায়, ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি অথবা আজীবন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুক্তি নিয়ে বিদেশে চলে যেতে পারে। সেখানে এদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য যিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মানবিক কারণে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া যাবে না, এটা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সংসদে দেশনেত্রীর বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ শালীনতা বিবর্জিত বক্তব্যে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানানো হয়। সভা মনে করে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সাংবিধানিক এবং প্রচলিত আইনের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তার পাপ্য জামিন পর্যন্ত তাকে দেয়া হয়নি। অথচ একই ধরনের মামলায় অন্যান্য প্রায় সকল অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে আইনের বলে সরকার নির্দেশ দিয়েছেন সেই আইনে আবার তাকে নতুন নির্দেশে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। আসলে তারা (সরকার) নিজেদের ক্ষমতা নিজেরাই খর্ব করছে। এর একমাত্র উদ্দেশ্যে যে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে একটা বৈরী মনোভাব প্রদর্শন করা। স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, সরকার নেতিবাচক মনোভাব থেকে বেরিয়ে এসে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও আজীবন সংগ্রামী বাংলাদেশের জনগণের প্রিয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে সকল ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহন করবেন।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংসদে সংসদ নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার বক্তব্য অনভিপ্রেত এবং রাজনৈতিক শালীনতা বিবর্জিত দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা রুচিহীন ও কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়। সংসদ নেতা তার মনগড়া কল্পকাহিনীর মধ্য দিয়ে একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা, গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী এবং জনগনের আস্থাভাজন প্রিয় নেতাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন। এই ধরনের বক্তব্য সংসদ নেতার কাছ থেকে জাতি আশা করে না। এটা জাতিকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা মনে করি, সংসদ নেতার এই ধরনের মন্তব্য খারাপ নজির স্থাপন করেছে।
করোনা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য এই অযোগ্য সরকারের অযোগ্যতা, দুর্নীতি এবং উদাসীনতা দায়ী। প্রায় ১৫ মাস সময় নিয়েও সমস্যাগুলো সমাধান করতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। অবিলম্বে দিন আনে দিন খায়, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, দোকান শ্রমিক, হকার, প্রান্তিক কৃষকদের জন্য এককালীন ১৫ হাজার টাকা প্রদানের আহবান জানান তিনি।
একই সঙ্গে বন্যা দুর্গত এলাকায় অবিলম্বে সরকারি ত্রাণ বিতরণ এবং বীজতলা ধবংস হয়ে যাওয়ায় নতুন বীজ সরবারহের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব, দলের নেতা-কর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপদ্রুত এলাকায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহবানও জানান।
‘বিএনপি থেকে অনেকে তলে তলে আওয়ামী লীগে যোগাযোগ করছে’- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, এগুলো তাদের দিবাস্বপ্নের মতো। বিএনপিকে বারবার চেষ্টা করা হয়েছে নিশ্চিহ্ন করার, ভেঙে ফেলার। তারা চেষ্টা করেছে জনগণকে এই দল থেকে বিচ্ছিন্ন করার। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে প্রায় তিন বছর কারাগারে আটক রেখে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত রেখে, আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা ও গায়েবী মামলা দিয়ে বার বার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা বিএনপিকে ভেঙে ফেলতে পারেনি। বিএনপি একটা বহমান বিশাল স্রোতস্বীনি নদী। এখান থেকে কখনো কখনো খড়কুটো এসে পড়ে, আবার খড়কুটো এসে চলে যায়। তাতে করে বিএনপির কোনো ক্ষতি হয়নি, ক্ষতি হয় না। বিএনপি এদেশের জনগণের দল। আমি সবসময় বলি, ইটস এ প্ল্যাটফরম অব পিপলস।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য টিকার ব্যবস্থা না করে সরকার ছলনা ও প্রতারণা করছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তাদেরকে বিশেষ ব্যবস্থায় টিকা দেয়া নিশ্চিত করার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।