ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, নিউমার্কেটের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রায় তিন ঘণ্টা নিষ্ক্রিয় ছিল। কোন কারণে আপনারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন? দেশের মানুষ নিহত হবে সে কারণে? একটি সমস্যা তৈরি হবে সে কারণে? যখন বিএনপির ছোট-খাটো একটি কর্মসূচিকে প্রতিরোধ করার জন্য মুহূর্তের মধ্যে হাজার হাজার পুলিশ সেখানে জড়ো হয়।
বুধবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শহীদ, গুম ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের মাঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার’ বিতরণের জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের কাজ হচ্ছে টিকে থাকতে মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করা। তাদের ক্ষমতায় থাকার বড় উৎস গোটা সমাজে, গোটা রাষ্ট্রে একটি ভীতির ত্রাসের সঞ্চার করা। এই ব্যর্থ-অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার সেভাবেই এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে রয়েছে।
তিনি বলেন, গুম-খুনের প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করেছি। গুম হয়ে যাওয়া পরিবারগুলো আন্দোলন করেছে। এমনকি অনেকে হিউম্যান রাইটস কমিশনে জেনেভা পর্যন্ত গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেভাবে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা করতে পারেনি। তবে এরা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে, তা হলো র্যাবের ৭ জন কর্মকর্তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর নিষেধাজ্ঞা। তার প্রমাণ হচ্ছে ইউএস হিউম্যান রাইটসের যে রিপোর্ট, সেই রিপোর্টসে প্রত্যেকটি ঘটনায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরা। একই সঙ্গে দেশে কোনো বিচারব্যবস্থা নেই, সম্পূর্ণভাবে হরণ করা হয়েছে। সেটার প্রমাণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাকে কারাগারের নেওয়ার বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিকভাবে উল্লেখ করা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। প্রমাণিত যে বাংলাদেশ একনায়কতন্ত্র চলছে, স্বৈরাচার চলছে। অবৈধ সরকার জবরদখল করে ক্ষমতায় বসে আছে। প্রমাণিত সত্য আজকে এখানে গুম করে খুন করে নির্যাতন করে মানুষকে কারাগারে পাঠিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে। এখন সময় এসেছে রুখে দাঁড়াবার।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমানের ১৫ বছরের আগের দুদকের একটি মামলা গতকাল রুজু করা হয়েছে। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একটি মামলাও একইভাবে রুজু করা হয়েছে। যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
‘বাংলাদেশে এখন ছদ্মবেশী একদলীয় শাসনব্যবস্থা চলছে। এখন তাদের (আওয়ামী লীগ) লক্ষ্য আগামীকাল নির্বাচনে কী করে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবে, কী করে তারা আবার ক্ষমতায় আসবে। সেই লক্ষ্যে তারা সব কাজ করা শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, আমাদের যারা খুন হয়েছে, তাদের আমরা ফিরে পাবো না। তাদের পরিবার কষ্ট পাচ্ছে। আর যারা গুম হয়েছে, তাদের পরিবার আরও বেশি কষ্ট পাচ্ছে। কারণ তারা জানে না তাকে খুন হয়েছে নাকি বেঁচে আছে। এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানো এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। এই ভয়াবহ দানবীয় শক্তি, এই অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে একটি বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য আমাদেরকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এটার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ সবসময় তাদের আন্দোলনের মধ্যদিয়ে এসব কিছু অর্জন করেছে।
অনুষ্ঠানে ৬টি পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজয় কান্তি সরকার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার ও শাহরুল কবির খান প্রমুখ।