ঘুষ এখন টাকায় নয়, ডলারে লেনদেন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। একজনের নামে আরেকজন কারারক্ষী পদে চাকরি করার অভিযোগ এনে করা রিট শুনানিতে মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) এমন মন্তব্য করেছেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। সঙ্গে ছিলেন মো. আবুল কালাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
চলতি বছরের ৩১ জুলাই ‘চাকরি ফিরে পেতে চান কুলাউড়ার জহিরুল: জালিয়াতি করে কারারক্ষী পদে চাকরি ১৮ বছর পর তদন্তে প্রমাণিত!’ শিরোনামে ঢাকার এক দৈনিক পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে রিটটি করেন ভূক্তভোগী জহিরুল ইসলাম এশু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কারারক্ষী পদে চাকরির জন্য ২০০৩ সালে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিলেন কুলাউড়ার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম এশু। নিয়োগে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশনও হয়েছিল। কিন্তু পরে আর যোগদানপত্র না পাওয়ায় চাকরির আশা ছেড়ে শহরে ব্যবসা শুরু করেন।
কিন্তু দীর্ঘ ১৮ বছর পর জানতে পারেন প্রতারণার মাধ্যমে তার নাম পরিচয় ব্যবহার করে ওই পদে চাকরি করছেন আরেকজন। আর ইতোমধ্যে জালিয়াতির বিষয়টি তদন্তেও সত্যতা পাওয়া গেছে।
সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক কামাল হোসেনের নেতৃত্বে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেলার এজি মাহমুদ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেল সুপার ইকবাল হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছেন।
এর মধ্যে এশু চাকরি ফিরে পেতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক বরাবরে আবেদন করেন। কিন্তু সে আবেদনে সাড়া না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন।
রিটে কারারক্ষী পদে আবেদনকারীর যোগদানপত্র গ্রহণে এবং আবেদনকারীর পদে চাকুরি করা অন্য জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে কেন ৫ বিবাদীকে নির্দেশনা দেওয়া হবে না, মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।
রিটে বিবাদী হিসাবে রয়েছেন, স্বরাষ্ট্র সচিব, কারা মহাপরিদর্শক, কারা উপমহাপরিদর্শক, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ও কারারক্ষী হিসাবে চাকুরিরত জহিরুল ইসলাম।
এ রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, এ রকম একটি স্পর্শকাতর জায়গায় যদি এরকম অনিয়ম হয়, তাহলে কিন্তু এটা একটা অশনি সংকেত। বেশ বড় ধরনের অভিযোগ।
শুনানির এক পর্যায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, গণমাধ্যমে দেখা যায়, বস্তায় বস্তায় টাকা দিয়ে ঘুষ লেনদেন হয়।
তখন আদালত বলেন, এখানে দুদকের আইনজীবী আছেন, তার সামনেই বলি, এখন আর টাকায় নয়, ঘুষ লেনদেন হয় ডলারে। এসব বিষয়ে দুদক তো দেখে না।
শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য আগামীকাল দিন ঠিক করেন।