প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড

ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার ৩ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া এক মামলায় তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে পাঁচ বছর, আরেক মামলায় মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এসব মামলায় রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার সময় আসামি খুরশীদ আলমকে আদালতে তোলা হয়। এরপর সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। বাকি আসামিরা পলাতক থাকায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

গত রোববার এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আদালত। অপর আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়নি। তারা আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করতে পারেননি।

আদালত সূত্রে জানা যায়, প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক ৬টি মামলা করে দুদক। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকসহ আরও অনেককে আসামি করা হয়।

গত ৩১ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন তিন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। অপরদিকে বাকি ৩ মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক মো. রবিউল আলম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। অযোগ্য হলেও তারা পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন।

রায় ঘোষণার পর দুদক প্রসিকিউটর মইনুল হাসান প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, শেখ হাসিনাকে পৃথক তিন মামলায় ৭ বছর করে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আমরা এ রায়ে খুশি নই। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম প্রত্যেক মামলায় শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। দুদকের সাথে কথা বলে আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাব কি না সিদ্ধান্ত নেব। দোষী প্রমাণিত হলেও সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় আমরা এ রায়ে অখুশি হয়েছি।

মামলার বিবরণ

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের উপ পরিচালক সালাহউদ্দিন। তদন্ত শেষে ১০ মার্চ তদন্তে পাওয়া আরো চারজনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) শফি উল হক, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক মেজর সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, নায়েব আলী শরীফ, সাইফুল ইসলাম সরকার, কাজী ওয়াছি উদ্দিন ও শহীদ উল্লা খন্দকার।

এদিকে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে আসামি করে গত ১২ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। তদন্তে পাওয়া আরো দুই আসামিসহ মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে ১০ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া।

শেখ হাসিনা ও পুতুল ছাড়া অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও শরীফ আহমেদ। শেষের দুজন তদন্তে আসা আসামি।

এছাড়া সজিব ওয়াজেদ জয়ের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে তিনি এবং তার মা শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে ১৪ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। তদন্তে নাম আসা আরো দুজনসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে ২৪ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করেন রাশেদুল হাসান।

অন্য আসামিরা হলেন-গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন ও সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য তন্ময় দাস, (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ), সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য (উন্নয়ন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম, পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।