হ-য-ব-র-ল স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ৩ বছরে ৯ কমিটি

বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ - Awami SechchaSebok League
বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ - Awami SechchaSebok League

হ-য-ব-র-ল অবস্থা আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের। সংগঠনটির বর্তমান কমিটির ৩ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১১ জুলাই, শনিবার। অথচ এই ৩ বছরে বর্তমান কমিটি সারাদেশে মাত্র ৯টি ইউনিটের কমিটি গঠন করতে পেরেছে।

তবে সংগঠনের দফতর সূত্র জানিয়েছে, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সারাদেশের ইউনিটগুলোর কমিটি গঠন করতে না পারলেও বাংলাদেশের বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কমিটি গঠন করেছে। দেশের কমিটি বাদ দিয়ে বিদেশে কমিটি গঠন নিয়েও সংগঠনের নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। নেতারা বলছেন, দেশে কমিটির খবর নেই। বিদেশে কিসের লোভে এতো কমিটি করা হয়?

স্বেচ্ছাসেবক লীগের দফতর সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ টুটুল দ্য রিপোর্টকে জানান, ঈদের পর তাদের ২৫-৩০টি কমিটি গঠনের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে এই ৩ বছরে তারা ঢাকা বিভাগে ২টি ঢাকা জেলা ও ময়মনসিংহ; রংপুরে বিভাগে ১টি দিনাজপুর জেলা; সিলেট বিভাগে ৩টি সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার; রাজশাহী বিভাগে ১টি নওগাঁ; চট্টগ্রাম বিভাগে ১টি কক্সবাজার জেলা ও খুলনা বিভাগে ঝিনাইদহ জেলার সম্মেলন করতে পেরেছেন।

সংগঠন সূত্রমতে, কেন্দ্রীয় কমিটি কয়েকদিনের মধ্যে ৪ বছরে পা রাখবে কিন্তু সংগঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন সম্পন্ন করতে পারেনি স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সর্বশেষ ঢাকা মহানগর সম্মেলন হয়েছিল ২০০৭ সালে।

জানা গেছে, সংগঠন পুনর্গঠনের পর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নেতৃত্বাধীন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সারাদেশে যে কমিটিগুলো করে গিয়েছিলেন সেই কমিটিগুলো এখনো রয়েছে। অনেক জেলায় আহ্বায়ক ও ২ জন যুগ্ম-আহ্বায়ক ছাড়া আর কোনো সদস্যই নেই এই সংগঠনে। বেশিরভাগ জেলাই চলছে ৮-৯ বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে।

এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি দেবাশীষ বিশ্বাস দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘নানাবিধ রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বিভিন্ন কারণে আমরা সম্মেলন করতে পারিনি। কেন্দ্র ও নেত্রীর নির্দেশনা পেলে আমরা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা দিব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাংগঠনিক সম্পাদক দ্য রিপোর্টকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দেশের বাইরে কমিটি গঠনে যতটা আগ্রহী, দেশে ততটা নয়। এর পেছনে সংগঠন নয়, অন্য কিছু কাজ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সারাদেশে অনেক কমিটিই গঠন করেছি। তবে সংখ্যা এখন মনে নেই। দফতরে যোগাযোগ করেন।’

জানা গেছে, সংগঠনের এমন বিপর্যস্ত অবস্থা জেনে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৭ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত নাও থাকতে পারেন। এ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ২৭ জুলাই আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আমি বুধবার রাতে আপার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করেছি। আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সম্মেলনের ব্যাপারে কথা বলতে চেয়েছিলাম। তিনি বলেছেন পরে কথা বলবেন। ’

প্রসঙ্গত ২০১২ সালে ১১ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

সংগঠনটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি মোল্লা আবু কাওছার ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথের উদাসীনতায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ এখন কাগুজে সংগঠনে পরিণত হয়েছে। তাদের পার্টিতে একক কর্তৃত্ব ও আধিপত্যের কারণে সাংগঠনিক বিপর্যয়ে পড়েছে সংগঠনটি। এ কারণে এই সংগঠন ছাড়ছেন বেশিরভাগ নেতা। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে অধিকাংশ নেতাই এখন নিষ্ক্রিয়।

জানা গেছে, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের একক আধিপত্যের কারণে সংগঠনের ৭ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে ৫ জনই নিষ্ক্রিয়। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, শেখ সোহেল রানা টিপু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েলসহ অধিকাংশ সাংগঠনিক সম্পাদকই এখন সংগঠনে নিষ্ক্রিয়।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমি এখন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই। আমি কিছু বলতে পারব না।’

রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলিম দলের দুরবস্থা ও সংগঠনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের একক আধিপত্যের অভিযোগ সম্পর্কে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পরপর দু’বার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তারা সাবেক প্রভাবশালী ছাত্রনেতা। এ জন্য তাদের তো একটু প্রভাব থাকবেই।’

কমিটি করতে না পারার কারণ সম্পর্কে আব্দুল আলিম জানান, আসলেই অধিকাংশ জেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও আহ্বায়ক হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাদের প্রতি একটু নমনীয়। এ জন্য কমিটি করতে একটু সমস্যা হচ্ছে।

সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শুভ্রত পুরুকায়স্থ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সিলেট বিভাগের ৪টি জেলা ও মহানগরের মধ্যে ৩টি জেলা সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। সিলেট জেলা ও মহানগরের সম্মেলন ২৮ ও ২৯ জুলাই সম্পন্ন হবে।’

সূত্র: দ্য রিপোর্ট