‘নির্বাচন বানচাল হয়ে গেলে বাংলাদেশে অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে’। অস্বাভাবিক সরকার বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশ আর পেছন দিকে যেতে পারে না।’দেশবাসীকে সতর্ক করে সরকারের মুখপাত্র ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এসব কথা জানালেন।
তিনি বলেন, বিএনপি দেশে ‘অস্বাভাবিক সরকার’ আনার চেষ্টা করছে। কোনোভাবে আগামী নির্বাচন বানচাল হলে সেই অস্বাভাবিক সরকার আসবে। আর সে সরকার কারও জন্য সুখকর হবে না। ‘বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার লক্ষ্য একটা নির্বাচন নয়। একটা অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। সাম্প্রতিক কালে তার লক্ষণ আরও ফুঠে ওঠেছে, যখন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতি দায়ে দণ্ডিত হয়ে কারাগারে।’
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এই সতর্কতা দেন তথ্যমন্ত্রী। এ সময় আগামী নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (বিএনপি) নির্বাচন বর্জন করার একটা পায়তারা করছে। সেই পায়তারার অংশ হিসেবে দণ্ডিত অপরাধীর মুক্তির প্রশ্নটা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন। একটা রূপরেখাহীন সহায়ক সরকারের নামে একটা অস্বাভাবিক সরকারের পায়তারা চালু করার চেষ্টা করছেন।’
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে জাসদ সভাপতি বলেন, ‘২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশ কোন পথে যাবে এই প্রশ্নের মীমাংসার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ টিকবে কি টিকবে না সেটা নির্ধারিত হবে।’
নির্বাচনকে ঘিরে ‘তিন কর্তব্য’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনটি মহাগুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ইনু। বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, অস্বাভাবিক-অসাংবিধানিক সরকারের চাইতে সাংবিধানিক সরকার মঙ্গলজনক। আইন অনুযায়ী যথা সময়, ডিসেম্বরে নির্বাচনটা করতে হবে।’
‘উন্নয়নের যে চমৎকার ধারা চলছে, তাকে অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশের জন্যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে। যে কোনো মূল্যে রাজাকার-জঙ্গিবাদী-আগুনসন্ত্রাসী ও তার সঙ্গী বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়াকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে হবে। এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য সামনে নিয়ে আমরা আগামী ছয়টি মাস অতিক্রম করব।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব, নির্বাচন বানচালের সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত যেটা চালু আছে সেটা মোকাবেলা করতে হবে, নসাৎ করতে হবে। যথা সময়ে নির্বাচনটা অনুষ্ঠান করতে হবে।’
‘খালেদার মুক্তি মানে অপরাধতন্ত্রকে মেনে নেয়া’
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেয়ার শর্তের সমালোচনা করেন তথ্যমন্ত্রী। বলেন, এই শর্ত গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার উপর ‘কুঠারাঘাত’।খালেদার মুক্তির শর্ত মেনে নেয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে ইনু বলেন, ‘দণ্ডিত কোনো অপরাধীর মুক্তির শর্তে যদি কেউ বাজি ধরে, সেই বাজিতে আমরা সায় দেব না। সেই শর্ত একটা অরাজনৈতিক শর্ত। এই শর্ত মেনে নেওয়া মানে হচ্ছে বাংলাদেশে অপরাধতন্ত্রকে মেনে নেওয়া।’
সিটি ভোটে সেনা মোতায়েনের দাবির বিরোধিতা
আগামী ১৫ মে গাজীপুর এবং খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে বিএনপির দাবিরও বিরোধিতা করেন ইনু। বলেন, বিএনপি এই দাবির সঙ্গে অতীতের অবস্থানের কোনো মিল নেই। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে সেনা মোতায়েনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। সেই খালেদা জিয়া ৯৬ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরে সেই ফল না মেনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। ২০০৮ সালে সেনা মোতায়েন ছিল, একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট হয়েছে। সেই ভোটের ফলাফল তারা (বিএনপি) মানেনি।’
‘সুতরাং বিএনপির কাছে ভোট বড় কথা নয়। তাদের এজেন্ডা হচ্ছে, নির্বাচন নয়, গণতন্ত্র নয়। তাদের এজেন্ডা হচ্ছে বাংলাদেশকে বাংলাদেশের পথ থেকে পাকিস্তান পন্থার পথে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। চক্রান্তের পথে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।’
‘বিএনপির অবস্থান বাংলাদেশবিরোধী’
বিএনপির বেশ কিছু জাতীয় দিবস পালন না করার সমালোচনা করেন ইনু। বলেন, এর মাধ্যমে বিএনপি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা, বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা মানেন না, সেই জন্য ৩০ লক্ষ শহীদের সংখ্যা মানেন না। সেই জন্যে ২৫ মার্চের গণহত্যা দিবস মানেন না। সেই জন্যেই সংবিধানের চার নীতি মানেন না।’,‘এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না মানার মধ্য দিয়ে বিএনপি এবং খালেদা জিয়া এটাই প্রমাণ করছেন, যে বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার করেন না তারা। বাংলাদেশবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থান তারা গ্রহণ করেছেন।’
‘সারা বাংলাদেশ ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করেছে। একমাত্র বিএনপি এবং খালেদা জিয়া এই দিবসটি পালন করেননি।’
‘তারা এখনো মৌলিক মীমাংসিত বিষয়গুলোকে অমীমাংসিত করার মধ্য দিয়ে জাতীয় বিতর্ক সূচনা করার চেষ্টা করে তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিকতা, প্রগতিবাদিতা আড়ালে পড়ে যায়। এই রকম একটা পরিস্থিতি মধ্যে আমরা আছি।’
সাংবাদিকদের মহার্ঘভাতা শিগগির
এক প্রশ্নে ইনু জানান, সাংবাদিকদের জন্য আগামী সপ্টেম্বরে ওয়েজবোর্ড দেয়ার সময় আছে। এখন একটা মহার্ঘভাতা দেতার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কাল পরশুর মধ্যে প্রজ্ঞাপন হয়ে যাবে। আর প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে সই করবেন।এবার ইলেকট্রনিক মিড়িয়াকে ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনতে শর্ত দেয়া হয়েছে বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।
‘আমি চাই ইলেকট্রনিক মিড়িয়ার বন্ধুরা যেন এ ওয়েজ বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত হোন। এ জন্য ১৯৭৪ সালে যে আইনের বদৌলতে ওয়েজ বোর্ড হয়, তা সংশোধন করেছি, আশা করি আগামী বাজেট অধিবেশনে তা বাস্তবায়ন হবে।’