পাহাড়ের রক্তপাতে বিএনপি জড়িত বললেন ওবায়দুল কাদের

আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন পাহাড়ে রক্তপাতের মধ্যে ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিএনপির এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান দলের এই শীর্ষ নেতা।

শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ‘তৃণমূল বর্ধিত সভায়’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তারা আন্দোলনে ব্যর্থ। লন্ডন থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যেও ঢুকে পড়ে তারেক জিয়া। আল্লাহর রহমতে কোটা সমস্যারও সমাধান হয়েছে। এখন তারা গিয়ে পাহাড়কে ধরেছে, পাহাড়ে রক্তপাতের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, এরকম ইঙ্গিত আমরা পাচ্ছি।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি বলছে বেগম জিয়াকে ছাড়া নাকি তারা নির্বাচনে যাবে না। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে কি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের উপর আকাশ ভেঙে পড়বে? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেয়নি, জ্বালাও-পোড়াও করেছে। মানুষ হত্যা করেছে। তাকে কি গণতন্ত্রের সূচিতা, গণতন্ত্রের সম্ভ্রম এতটুকু নষ্ট হয়েছে? বিএনপি নির্বাচনে না এলেও সংবিধান পরিবর্তন হবে না। নির্বাচন যথাসময়ে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বের মূল টার্গেট কিন্তু আওয়ামী লীগ নয়, তাদের মূল টার্গেট দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নাম শুনলেই বিএনপি নেতাদের গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায়। কারণ বিএনপি জানে নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে হটানো যাবে না। শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে গত ৯ বছর আন্দোলন করে ৯ মিনিটও তারা সাফল্য পায়নি। বিএনপি জানে আগামী নির্বাচনে আবারও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে। কারণ ৭৫ পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার মতো এমন সৎ দক্ষ, বিচক্ষণ কূটনৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন নেতা বাংলাদেশে আর আসেনি।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাম্প্রতিক সাক্ষাতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘মোদি সাহেবের সময় পাওয়া খুব ডিফিকাল্ট। অথচ তিনি আমাদের ৩২ মিনিট সময় দিয়েছেন। আমাদের নেত্রীর (শেখ হাসিনা) ওপর তার যে আস্থা আছে সেটি তিনি আমাদের বলেছেন। আমাদের নেত্রী যে রোহিঙ্গা সমস্যার মতো একটা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছেন সেই বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে মোদি সাহেবের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। কোনো নালিশ করিনি। নিজের দেশকে ছোট করিনি। আমরা বলেছি, আমাদের উত্তর জনপদ শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির জন্য হাহাকার। তিস্তা নদীর পানিবণ্টন যে আমাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার সেটা বলেছি।’

আওয়ামী লীগের চলমান সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির বিষয়ে কাদের বলেন, ‘দল ভারী করার জন্য সন্ত্রাসী, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, চিহ্নিত ধর্ম ব্যবসায়ী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, চিহ্তি চাঁদাবাজদের দলে জায়গা দেবেন না। যে কর্মীর কারণে এলাকায় আওয়ামী লীগের উপর সাধারণ মানুষ অসন্তুষ্ট হচ্ছে তাকে দলে জায়গা দেবেন না। দুর্নীতিবাজদের দলে জায়গা দেবেন না। তাদের বলবেন, বিএনপিতে যান। কারণ বিএনপি এখন একটি আত্মস্বীকৃত দণ্ডপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজদের দল। রাতের আঁধারে গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বাদ দিয়ে তারা এখন উন্মাদের দলে পরিণত হয়েছে।’

তবে অযৌক্তিকভাবে বিএনপিকে গালিগালাজ না করার জন্যও নেতাকর্মীদের পরামর্শ দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘পড়াশোনা করেন। ক্লাস-টাস করেন। না হলে বিএনপির বিরুদ্ধে মাঠে কী বলবেন ? বিএনপিকে মুখস্ত গালিগালাজ করা যাবে না, কথা বলতে হবে যুক্তি দিয়ে।’

চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিভিন্ন সাংগঠনিক থানা ও ওয়ার্ডে দ্বৈত কমিটি এবং অপূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি একমাস সময় দিলাম। এর মধ্যে কমিটিগুলো ঠিক করুন। একজন দুই পদে থাকতে পারবেন না।’তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য হাতে সময় আছে আর মাত্র ৫ মাস। কোরবানির ঈদের আগে কেন্দ্র কমিটি করে ফেলুন। পোলিং এজেন্ট চূড়ান্ত করে ফেলুন। তাদের ট্রেনিং দিতে হবে। আর ভেতরের সমস্যা যেগুলো আছে, সেগুলো সমাধানের জন্য একমাস সময় দিলাম। সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে।’

বর্ধিত সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম এবং মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সংসদ সদস্যে ডা. আফছারুল আমিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনসহ দলীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।