আজ রবিবার রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। প্রচার শেষে এখন ভোটের হিসাব কষছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ৫ প্রার্থী। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক ও বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জুরের মধ্যে।
বিগত নির্বাচনগুলোর ফলাফল বলছে, খুলনা মহানগরীতে দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি এগিয়ে। খুলনা-২ নির্বাচনী এলাকায় মুসলিম লীগপন্থিদের প্রভাবের কারণে সংসদীয় কিংবা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপিই বেশি বিজয়ী হয়েছে। তবে কেসিসির আরেক অংশ খুলনা-৩ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রভাব বেশি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে কলকারখানা বন্ধ করে দেওয়া এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেগুলো খুলে দেওয়ায় শিল্পাঞ্চলে দলটি শ্রমিকবান্ধব হিসেবে পরিচিত।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, গত নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ চিহ্নিত করার পাশাপাশি ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কৌশলী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী খালেক। এ ছাড়া বিএনপির সমর্থনে গত নির্বাচনে জয়ী মেয়র মনিরুজ্জামান মনির ব্যর্থতা তুলে ধরছেন তিনি।
অন্যদিকে গত নির্বাচনে মনিরুজ্জামান মনির প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গে আরও নতুন ভোট যোগ করে জয়ের হিসাব কষছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ‘গ্রিন-ক্লিন সিটি’ গড়ার স্লোগান নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন তিনি
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৫ জুনের কেসিসি নির্বাচনে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক পেয়েছিলেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২২ ভোট।
এবার দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত তালুকদার আব্দুল খালেক, বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জাতীয় পার্টির এসএম শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক ও সিপিবির মিজানুর রহমান বাবু।
এবারের কেসিসি নির্বাচনে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন ভোটার। এবার নতুন ভোট বেড়েছে প্রায় ৫২ হাজার। এই ভোটাররা ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমন ধারণা বিশ্লেষকদের। এ কারণে মেয়রপ্রার্থীরা তাদের ইশতেহার, গণসংযোগ ও প্রচারে তরুণ ভোটারদেরও কাছে টানতে কৌশলী হয়েছেন। এ ছাড়া মহানগরীর ১১৯টি বস্তির ১ লাখেরও বেশি ভোটারের দিকে চোখ রয়েছে প্রধান দুই প্রার্থীর। নগরীতে সংখ্যালঘুদের রয়েছে ৭০ হাজার ভোট। এ কারণে প্রধান দুই দল কেন্দ্র থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের এনে প্রচারে নামিয়েছেন। প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক ভোটারকে নিজেদের পক্ষে নিতে মরিয়া খালেক ও মঞ্জু।
এ ছাড়া প্রায় ৩০ হাজার আটকে পড়া পাকিস্তানি ভোটারের ওপর কড়া নজরদারি করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী।তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নারীরাই জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবেন। এই হিসাব মাথায় রেখে নির্বাচনী কাজে প্রধান দুই দল প্রায় ২০ হাজার নারী কর্মীকে মাঠে নামিয়েছে।
নগরবাসী জানান, নির্বাচনে খালেকের পাশাপাশি দলের একাংশের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হচ্ছে বিএনপির মঞ্জুকে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে তালুকদার খালেকের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল দলের একাংশের নীরব বিরোধিতা। এবার তিনি সেই অবস্থা বেশ শক্ত হাতেই নিয়ন্ত্রণ করছেন। তবে দলের একাংশ মঞ্জুর বিরোধিতা করায় তিনি কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন। খুলনা সিটিতে বিএনপির বৃহৎ একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করছেন দলের বহিষ্কৃত নেতা আরিফুর রহমান মিঠু। নির্বাচনে ওই গ্রুপটির ভূমিক এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।
খুলনা-২ আসনের বিএনপির সাবেক এমপি আলী আসগর লবী ও মঞ্জুর মধ্যে বিরাজমান পাল্টাপাল্টি গ্রুপের একটি অংশের নেতৃত্বে যুবদল নেতা আক্কাস আলী। তিনিও অনুসারীদের নিয়ে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে ৩১টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ১৪৮ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে জিততে ঘাম ঝরাচ্ছেন ৩৮ প্রার্থী। আগামী ১৫ মে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে ভোটগ্রহণ।