শেখ হাসিনা। এবার আর আওয়ামী লিগের নেতৃত্বে থাকতে চাইছেন না। গত দেড় বছরে একাধিকবার দলের নেতাদেরকে জানিয়েছেন সে ইচ্ছা। বলেছেন, বিকল্প ভাবার কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটময়। এখন দলের নেতৃত্বের জন্য নতুন কাউকে ভাবার বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মনে করেন, বড় দল হিসেবে পরবর্তী নেতা কে হবেন, সেটি আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে হয়। তার ধারণা, শেখ হাসিনা হয়ত সেই বিষয়টিরই ইঙ্গিত দিচ্ছেন।তবে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগে বঙ্গবন্ধু কন্যার বিকল্প নেই, সেটি মানছেন এই শিক্ষাবিদও। ২০২৪ সালের পর শেখ হাসিনাকে চাইলেও নেতৃত্বে রাখা কঠিন হবে বলেও মনে করেন তিনি। এর কারণ, তার বয়স।
শেখ হাসিনা সরে গেলে নেতা তার পরিবার থেকেই আসবে বলেই মনে করেন মনজুরুল ইসলাম। কারণ, এ ছাড়া দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা কঠিন হবে বলেই মনে করেন তিনি। আর যাকেই সামনে নিয়ে আসা হোক, তাকে এখনই তৃণমূল রাজনীতি শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
২০১৬ সালের অক্টোবরে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে একাধিক দিন এমনকি ২৩ অক্টোবর কাউন্সিল অধিবেশনে নেতৃত্ব নির্বাচনের আগে আগে অন্য কাউকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচনের তাগাদা দেন শেখ হাসিনা। কিন্তু কাউন্সিলররা আবারও শেখ হাসিনাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত করেন।
গত ১৭ মে আবারও শেখ হাসিনা দলের নেতাদেরকে তার বিকল্প হিসেবে কাউকে বেছে নেয়ার কথা বলেন। এখন দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। তবে ২০১৯ সালের অক্টোবরে শেষ হচ্ছে বর্তমান কমিটির মেয়াদ। ফলে আওয়ামী লীগে নতুন সভাপতি আসলে সেটা আসবে সে সময়েই।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ভারত সরকারের নিরাপত্তায় ছিলেন শেখ হাসিনা। সেখানে থাকার সময়ই ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ তাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আর ওই বছরের ১৭ মে তিনি দেশে ফেরেন।
দেশে ফেরার ৩৭ বছর পূর্তির দিন দলীয় নেতাদেরকে শেখ হাসিনা বলেন,‘একটা দলের সভাপতি হিসাবে ৩৭ বছরের বেশি থাকা বোধ হয় সমীচীন হবে না। নতুন নেতৃত্বের কথা ভাবা উচিত।’এ সময় গণভবনে উপস্থিত সবাই ‘না’ বলে সমস্বরে জবাব দেন। তারপরও শেখ হাসিনা একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন।
শেখ হাসিনা কী চাইছেন?- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘উনি বলেছেন ৩৭ বছর ধরে একটা দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন, এখন তাঁর বয়স হয়েছে। এখন হয়তো তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন আমরা ভবিষ্যতে তাকে পাব না ’, ‘কিন্তু আওয়ামী লীগ একটা বিশাল রাজনৈতিক দল, আমাদেরতো দল চালাতেই হবে। এটাই তিনি ‘মিন’ করেছেন। এর বাহিরে তিনি দল ছেড়ে দিচ্ছেন কালই সেটা বলেন নাই। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন ভবিষ্যতের জন্য আমাদের বিকল্প নেতৃত্ব ঠিক করতে হবে, এটাই ঠিক।’
শেখ হাসিনার বিকল্প কে হতে পারে-এমন প্রশ্নে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নাই। আমরা মনে করি যে শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত আছেন, তাঁর নেতৃত্বেই আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের জন্য কাজ করব।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘তিনি যতদিন সুস্থ থাকবেন এবং তাঁর কার্যক্রম থাকবে ততদিন তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকবেন। এটা সারাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা এবং দাবি। তাই উনি (শেখ হাসিনা) চাইলেও অবসরে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই।’দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিকল্প দলের মধ্যে নাই। দলে তিনিই একমাত্র অপরিহার্য, আর অন্য কেউ না। অন্য কেউ আপরিহার্য নয়, তাঁর বিকল্প এখন পর্যন্ত পার্টিতে নাই। তিনি (শেখ হাসিনা) যেই সিদ্ধান্ত দিবেন সেটাই চূড়ান্ত।’
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার বিকল্প আওয়ামী লীগে পাওয়াটা মুসকিল। যতই সমালোচনা থাকুক না কেন, শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি একজন ক্যারিশম্যাটিক নেতা। তাঁর পর্যায়ে দাঁড়ানোর মতো দেশে কোনো নেতা নেই।’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক বলেন, ‘কিন্তু আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে একটা বিকল্প তৈরি করতে হবে। কিন্তু তিনি কাকে তৈরি করবেন, সেটা তার নিজের ব্যাপার। আমার মনে হয়, দুই জনকে মাথায় রেখে তাঁর সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত। তাদের সময় দিয়ে নেতৃত্ব বিকশিত হওয়ার প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত।’
‘শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে থাকবেন, কিন্তু হয়তো বলতে চাচ্ছেন ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি দাঁড়াবেন না। তত দিনে হয়তোর তাঁর শরীর-স্বাস্থ্যের একটা দুর্বলতা আসবে।’
‘তাঁর (শেখ হাসিনা) বিকল্প সজীব ওয়াজেদ জয়কে এখনও সেভাবে হয় নাই, তাঁকে (সজীব ওয়াজেদ জয়) দেশে ফিরে এসে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতি করা উচিত। না হয় দেশের মানুষের পালসটা ধরতে পারবে না। শেখ হাসিনার সঙ্গে সঙ্গে তাকে থাকতে হবে। তবে তাকে কম কথা বলতে হবে এবং আড়ালে থাকতে হবে। যাতে করে নেগেটিভ কোন প্রচার না হয়।’সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা কখনো রাজনীতি ছেড়ে দিলে, তাঁর পরিবার থেকে নতুন নেতৃত্ব না আসলে দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হবে। প্রত্যেকই একজন নেতাকে সামনে নিয়ে রাজনীতি করবে।’