ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ১৯৫৬ সালের ১১ অক্টোবর বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার (তৎকালীন) কালকিনি থানার রমজানপুর ইউনিয়নের উত্তর রমজানপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো তৈয়ব আলী মিয়া ও মাতা (মৃত) আনারন নেছা। ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে আবদুস সোবহান গোলাপ দ্বিতীয়। ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেত্রী গুলশান আরা খুখু’র সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তিনি ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের মধ্যে জনক। ১৯৮৩ সালে বৃত্তি নিয়ে শেখ হাসিনার নির্দেশে বিদেশ গমন করে নরওয়ের ট্রন্ডহেইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এস ডিগ্রিসহ ভাষাতত্ত্ব ও নরওয়েজিয়ান ভাষার ওপর ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুনরায় এমএস ডিগ্রি নেন।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ এন্ড সোশ্যাল চেঞ্জেস’ এর ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি লেখালেখিও করেন। তার প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ এন্ড সোশ্যাল চেঞ্জেস’, ‘মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা ও বাঙালি জাতির ইতিহাস’, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং ‘ছোটদের শেখ হাসিনা’।
এছাড়াও তার গবেষণা কর্ম দেশি-বিদেশী জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যোদ্ধা তিনি। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হলে তিনি ডাকসুর রাজনীতিতে অবদান রাখেন এবং ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে অবদান রাখেন।
১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তার সংস্পর্শে আসেন। এরপর ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার নির্দেশে নির্বাচনের সার্বিক মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণের নিমিত্তে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে তিনি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে রিপোর্ট প্রদান করেন।
তিনি বরিশালের গৌরনদীর ভিক্টোরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (১৯৭২-৭৩) ছিলেন। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য(৭৩-৭৪), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক (১৯৭৮-৮০), সূর্যসেন হলের সাধারণ সম্পাদক (১৯৭৮-৮০), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক(১৯৭৯-৮০), মাস্টারদা সূর্যসেন হল ছাত্র-সংসদের সাধারণ সম্পাদক (১৯৭৮-৮০), মাস্টারদা সূর্যসেন হল ছাত্র-সংসদের সহ-সভাপতি (১৯৮১-৮৩), ছাত্রলীগের নির্বাহী সদস্য (১৯৮১-৮৩) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (২০০৮), বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য (২০১২), আওয়ামী লীগে দপ্তর সম্পাদক (২০১৩), প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী (২০১৪-বর্তমান) এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকের (২০১৬- বর্তমান) দায়িত্ব পালন করছেন।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রস্তুতি , সদস্য সংগ্রহ অভিযান , দপ্তরের সাফল্য ও নানা ইস্যুতে কথা বলেছেন পলিটিক্সনিউজের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলকের সাথে। আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল
পলিটিক্সনিউজঃ আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি কতটুকু?
ড. আবদুস সোবহান গোলাপঃ আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং তৃণমূল নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। তারা নির্বাচন চায়। আমাদের নেতাকর্মীরা এবারে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধভাবে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে আসবে এবং তৃণমূল থেকে এরকম একটা সাড়া আমরা ইতিমধ্যেই পেয়েছি। আমাদের টিম প্রতিটি জেলা, উপজেলা, মহল্লায়, ইউনিয়নে গিয়ে গিয়ে আমাদের সরকার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা বলছে। আমরা আমাদের উন্নয়নে কথা বলছি, আমাদের অগ্রগতির কথা বলছি, আমরা বিগত সরকারের সাথে তুলনা করছি। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের উন্নয়নের সাথে আমাদের উন্নয়নের তুলনা করলে দেখা যায় তুলনামূলকভাবে আমাদের উন্নয়ন অনেক অনেক বেশি এবং তা জনগণকে বুঝানোর চেষ্টা করছি। জনগণ বুঝে, জনগণ খুশি এবং নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। জনগণ আগামীতে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করবে, আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করবে। আমরা আশাবাদী, বিগত যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে এবার আমাদের জনগণ, তৃণমূল নেতাকর্মী উজ্জীবিত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে, খুব ভালো নির্বাচন হবে এবং ইনশাল্লাহ বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় হবে।
পলিটিক্সনিউজঃ নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানে অগ্রগতি কতটুকু?
ড. আবদুস সোবহান গোলাপঃ খুবই ভালো অগ্রগতি এবং আমরা অসাধারণ সাড়া পেয়েছি। সদস্য সংগ্রহ অভিযানে প্রতিটা বিভাগে, প্রতিটি জেলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে যাওয়া হয়েছে । কয়েকটি জেলায়, কয়েকটি বিভাগে জনাব ওবায়দুল কাদের সাথে আমারও যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সেখানে দেখেছি নেতাকর্মীদের আগ্রহ। তারা সদস্য হতে চায় এবং সেখান যারা তরুণ, নতুন প্রজন্ম তাদের আগ্রহ খুব বেশি। যারা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ সেই তরুণদের মাঝে আমরা যে আগ্রহ দেখেছি, যে সহযোগিতা পেয়েছি, তারা যেভাবে আমাদের দিকে এগিয়ে এসেছে, সাড়া দিয়েছে, আমার খুবই আশাবাদী। আমার মনে হয় আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে, ডিজিটাল বাংলাদেশের পক্ষে তরুণরাই ভোট দেবে। আমরা যে ভিশন নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, জননেত্রী শেখ হাসিনা যে ভিশন জাতির সামনে দিয়েছেন, আমার মনে হয় তরুণরা তা লুফে নিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি, মহাকাশ বিজয় করেছি। তরুণরা এটা আরও বেশি পছন্দ করেছে। আমার মনে হয় সারা বাংলা ডিজিটালাইজড বলা চলে, ডিজিটালাইজেশনের ৭৫ শতাংশ আমরা ইতিমধ্যে সম্পন্ন করতে পেরেছি। আমরা আশাবাদী ২০২০ সালের মধ্যেই সারা বাংলাদেশ ডিজিটালাইজড হয়ে যাবে। যেখানে তরুণদের আগ্রহ, তরুণরা পছন্দ করে, যেখানে কর্মসংস্থান আছে, তরুণদের ভবিষ্যতে আছে, চাকরির নিশ্চয়তা আছে , সেখানেই তরুণরা ভোট দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তরুণরা বিশ্বাস করে দেশ ডিজিটালাইজড হচ্ছে এবং তাদের কর্মসংস্থান এদেশে হচ্ছে। প্রজন্ম আমাদের সাথে আছে। আগামী নির্বাচনে প্রবীণদের চেয়ে নবীনদের ভোট বেশি পাবো বলে আমরা বিশ্বাস করি।
পলিটিক্সনিউজঃ আপনার সময় দপ্তরের সাফল্য নিয়ে কি বলবেন?
ড. আবদুস সোবহান গোলাপঃ দপ্তরের সাফল্য নিয়ে সাংবাদিক বন্ধুরা এবং আমাদের সাধারণ নেতাকর্মী যারা নিয়মিত অফিসে আসেন তারা ভালো বলতে পারবেন। সাংবাদিক বন্ধু হয়ে বিচার করে দেখবেন কতটা অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পেরেছি, কতটা ভালো করতে পেরেছি। আমাদের অফিস আমরা সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজড করেছি, ওয়াইফাই রয়েছে। এখানে আইটি রুম আছে, প্রতিটা রুমে কম্পিউটার আছে। সাংবাদিকদের জন্য আলাদা আইটি রুম আছে। সাংবাদিকরা যে কোন সময় তা ব্যবহার করতে পারেন। আপনারাই বিবেচনা করতে পারবেন এই দপ্তর কতটা ডিজিটালাইজড হয়েছে। আমি মনে করি শেখ হাসিনা যে ভিশন দিয়েছেন, তার সাথে এই অফিস সম্পূরক বলা যায়।