দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের প্রতিবাদে অভিভাবক সমাবেশে পুলিশি হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৪ জুলাই) দুপুরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্য মঞ্চের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। পরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কলা ও মানবিকী অনুষদের সামনে এক সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. দিদারের সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ‘শুরু থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকার ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কোটাবিরোধী আন্দোলন বলে আখ্যা দিয়ে সরকার কোটাধারীদের উস্কে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অপচেষ্টা রুখে দাঁড়াবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে বেকারত্ব দূর করা সরকারের দায়িত্ব। তারা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ছাত্ররা যখন তাদের দাবির জন্য আসছে তখনই সরকার ছাত্রদের বাধা দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সেদিন জাতীয় সংসদে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি বরং রাগ প্রকাশ করছেন। সেই রাগের জায়গা থেকে এখনকার এই দমন নিপীড়ন চালাচ্ছেন তিনি। গতকাল অভিভাবকদের উপর যে নিপীড়ন চালানো হয়েছে জনগণ কখনোই তা মেনে নিবে না। জনগণের প্রতিবাদ করবে। এই প্রতিবাদ অন্যায়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ও বাংলাদেশকে রক্ষার প্রতিবাদ।’
এসময় জাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্য মঞ্চের আহ্বায়ক এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, ‘জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ নিয়ে বলুক আর যে উদ্দেশ্যেই বলুক কোটা সংস্কার করা প্রয়োজন। এটা তাঁর কাছেও পরিষ্কার। কোটা বাতিল করা সম্ভব নয় এটা আমরাও জানি। এ জন্যই চাই কোটা সংস্কার করা হোক। শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্যতার মাধ্যমে দেশের সেবা করতে চায়। তাদের সেই সুযোগটা দেন। কোটার নামে অবিচার বন্ধ করে অতি দ্রুত সংস্কার করুন।’
তিনি প্রেসক্লাবের সামনে অভিভাবকদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশী হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে আরও বলেন, ‘সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা কখনো দেশ থেকে সুবিধা নেয়ার জন্য অস্ত্র ধরে নাই। বরং দেশের প্রতি ভালবাসা থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো।’
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, সহযোগী অধ্যাপক জহির রায়হান, অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, জাবি সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মো. আশিকুর রহমান, ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মাহাথির মুহাম্মদ, ছাত্র ইউনিয়নের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আতাউল হক চৌধুরী প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অভিভাবকদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা করে। এ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদসহ ঢাবির অধ্যাপক ফাহমিদুল হক ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী কর্তৃক হামলার শিকার হয় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।