বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা)’র লিখা আত্মজীবনীমূলক বই-ই প্রমাণ করে সরকার বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।’
বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম আয়োজিত “অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ভূমিকা ও আমাদের করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিচার বিভাগ তখনও নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছিল। আজকেও আইন প্রশাসনের অধীনে না। ষোড়শ সংশোধনী সকল বিচারক একমত হয়ে বাতিল করলেন, সে রায়ের ব্যাপারে কিছু মন্তব্য করার জন্য প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ ও দেশত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। সম্প্রতি তিনি একটা বই লিখেছেন, বইয়ে লেখা কথাগুলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রমাণ করে না, প্রমাণ করে সরকার এবং তার দলের লোকেরা বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করছে।’
১৯৭৫ সালে যা আইন করে করা হয়েছিল এখন তা কৌশলে করা হচ্ছে দাবি করে নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘কিন্তু বাস্তবতা একই, বিরোধী রাজনীতিক দল থাকতে পারবে না, স্বাধীন মিডিয়া থাকতে পারবে না, স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকতে পারবে না। এরকম হলে গণতন্ত্র থাকবে কোথায়?’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের ফলে স্বাধীন সাংবাদিকতা হারিয়ে গেছে দাবি করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করায় রাজনীতিক দল, সুশীল সমাজ, লেখক, সাংবাদিক সবাই এর প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। আইন সংসদে পাস হয়ে গেছে।’
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আপনারা ছবি নিচ্ছেন, কথা রেকর্ড করছেন। কতটা প্রকাশ করতে পারবেন সেটাই বিষয়। অর্থাৎ বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার অধিকার হারালো, যা ৭৫’র পূর্বে করা হয়েছিল। বহু মানুষের ওপর অন্যায়-অনাচার আজ মিডিয়া তুলে ধরছে। যদি মিডিয়া না থাকতো বর্তমান সময়ের বহু আন্দোলন সফল হতো না। সেই মিডিয়ার হাতটাই বেঁধে দিচ্ছে সরকার।’
রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার কারাবন্দি করে রেখেছে- এমন দাবি করে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে। সরকারের নতুন কায়দায় হলো- যখনই একটা আন্দোলন সফল হওয়ার পথে তখনই আরেকটা নতুন ইস্যু শুরু করা, যাতে একটা রেখে আরেকটা নিয়ে দৌড়াতে হয়। তারই প্রেক্ষিতে সরকার তারেক রহমানকে গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়িয়ে রায় দিতে যাচ্ছে। এতে কোনও কাজ হবে না। মানুষ দেখতে দেখতে এখন সব বুঝে গেছে।’
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেও খালেদা জিয়া বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ে গেছেন। তাঁর বাম হাত, বাম পা অবশ হয়ে গেছে। তিনি হাঁটতে পারেন না, চলতে পারেন না। তাঁর চোখের অবস্থা এতো খারাপ হয়ে গেছে যে, দ্রুত চিকিৎসা না নিলে অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। এতো কিছু জানার পরও সরকার সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীর সুচিকিৎসার ব্যাপারে কোনও উদ্যাগ নিচ্ছে না।’
আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এক বক্তব্যে বলেছেন নির্বাচনে হেরে গেলে আওয়ামী লীগ নাকি রোহিঙ্গা হয়ে যাবে। তোফায়েল বলেন, এক লাখ মানুষ মারা যাবে- আওয়ামী নেতাদের এসব বক্তব্য ভুল। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কেউ হারবে, কেউ জিতবে এটাই নিয়ম। আমরা কেউ কারোর শত্রু নই। আমরা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। আমরা কারোর ক্ষতির চিন্তা করি না। রাজনীতি করি তো আবেগ থেকে, দেশকে ভালোবেসে। কারো ক্ষতির জন্য তো নয়।’
বাংলাদেশ আবার ’৭৫ পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে দাবি করে নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সব সময় সরকার একভাবে হয় না। তৎকালীন সময়ে যারা সরকারে ছিলেন, যারা সরকারপ্রধান ছিলেন তারা বর্তমান সরকারের চেয়ে বহুগুণে সৎ ছিলেন। আমি রাজনৈতিক সততার কথা বলছি। তারা আইন করে বলে দিয়েছেন যে দেশে আর কোনও রাজনৈতিক দল থাকবে না। তারা আইন করে বলে দিয়েছেন যে বিচার বিভাগ প্রশাসনের অধীন থাকবে। এটা কোনও গোপন কিছু ছিলো না। তারা যা করেছেন প্রকাশ্যে করেছেন, লিখিতভাবে কনস্টিটিউশন অ্যামেন্ডমেন্ট করেছেন। আজকে যা ঘটছে সেটার মধ্যে সততা নাই। রাজনৈতিক দলগুলোকে কাজ করতে না দেয়া কি নিষিদ্ধ করে দেয়ার শামিল নয়?’