উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বামজোট

বিএনপি-জামায়াতসহ সরকার বিরোধী গুলোর পর এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটে।

মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মুক্তিভবনে মৈত্রী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শাসকশ্রেণি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কীভাবে নির্বাচনের ইতিহাসে বিকৃতির এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। ভোট কারচুপি, জালিয়াতি, ইঞ্জিনিয়ারিং, মিডিয়া ক্যু ইত্যাদি সকল বিষয়কে ছাপিয়ে এটি ছিল ভোটের আগের রাতে ভোট বাক্স ভরে রাখার এক নতুন কীর্তি।’

‘এই কলঙ্কিত নির্বাচনের দগদগে ঘা শুকানোর আগেই এবং জনগণের ভোটাধিকার কোনরূপ নিশ্চিত না করেই এখন উপজেলা নির্বাচনের আয়োজন চলছে। পর্যায়ক্রমিক দিন তারিখও ঠিক হচ্ছে। এ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, গত একাদশ সংসদ নির্বাচন যেভাবে হয়েছে আগামী নির্বাচনও সেভাবেই অনুষ্ঠিত হবে। পিলে চমকে যাবার মতো কথা! আমরা আরও একটি প্রহসন ও তামাশার খেলায় সামিল হতে চাইনা বিধায় এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, জনগণের অংশগ্রহণে স্থানীয় স্বশাসনের বিভিন্ন স্তরের সংস্থার প্রচলন আমাদের সমাজে দীর্ঘদিনের। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা এসব সংস্থাকে বারবার ব্যবহার করেছে তাদের ক্ষমতার ‘খুঁটি’ হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য। সংবিধানে স্বশাসিত ‘স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা’ লিখিতভাবে স্বীকৃতি পেলেও, স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও শাসক শ্রেণি এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন করেনি। সংবিধানের ৩য় পরিচ্ছেদের অনুচ্ছেদ ৫৯/৬০ ধারা মতে ইংরেজিতে Local Government বলা হলেও বাংলা করা হয়েছে ‘স্থানীয় শাসন’। তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের ক্ষমতায়ন সম্ভব করার জন্য প্রয়োজন স্থানীয় সরকার। কিন্তু বিভাগীয় পর্যায়ে কোনো জনপ্রতিনিধিত্ব নেই। জেলায় প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নাই। উপজেলায়, ইউনিয়নে নির্বাচিত শাসন কাঠামো অসম্পূর্ণ এবং স্বায়ত্ত্বশাসিত হওয়ার বদলে আমলানির্ভল। এগুলো পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সঙ্গেও অসঙ্গতিপূর্ণ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, একদিকে স্থানীয় সরকারের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট পাওয়া যায় না। অন্যদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আমলা-প্রশাসন-এই দুই তরফের খবরদারি-নিয়ন্ত্রণ এসব সংস্থার কর্তৃত্বকে জরবদখল করে রেখেছে। স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন ও স্থানীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জাতীয় বাজেটের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ স্থানীয় সরকারের জন্য সংবিধিবদ্ধভাবে বরাদ্দ রাখার বিধান করা, সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণের মতামত নিয়ে তৃণমূল থেকে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রক্রিয়া চালু করা, সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং কঠোর হাতে সব স্তরে দুর্নীতি বন্ধ করার মধ্য দিয়ে স্থানীয় সরকার-ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে। জনগণের প্রকৃত ক্ষমতায়ন ও রাষ্ট্র-প্রশাসনের গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের জন্য এসব পদক্ষেপ অপরিহার্য।

সংবাদ সম্লেনে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

উপস্থিত ছিলেন আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, রুহীন হোসেন প্রিন্স, রাজেকুজ্জামান রতন, শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, আকবার খান, বাচ্চু ভূইয়া, হামিদুল হক, লিয়াকত হোসেন, নজরুল ইসলাম, মানস নন্দী, জুলফিকার আলী, নজিব সরকার রতন, মজিবুর রহমান প্রমুখ।