বছর ঘুরে আবারও দরোজায় কড়া নাড়ছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। প্রতিবছরই এই সময়গুলোতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও উৎসবের ছোঁয়া লাগে। দেখা যায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। তবে বিএনপির রাজনীতিতে এবার আর সেই উদযাপনের মাত্রা নেই। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। সেখানেই দলীয় প্রধানকে টানা তৃতীয়বার ঈদ করতে হচ্ছে। আর এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই দেশের বৃহত্তম ও অন্যতম জনপ্রিয় এই রাজনৈতিক দলটির নেতাকর্মীদের মনে ঈদের খুশিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি, তাঁর উপর তিনি গুরুতর অসুস্থ। বারবার বিএনপি নেতারা আইনি পথে বেগম জিয়ার জামিন আবেদন করলেও জামিন পাচ্ছেন না তিনি। বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করছে বিএনপি। বলা হচ্ছে, গণআন্দোলন ও গণরোষের ভয়েই সরকার আদালতকে নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে।
অপর দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক যুগেরও বেশি সময় ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তাই দলের প্রধান দুই নেতার একজন কারাগারে অন্যজন দেশের বাইরে থাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ঈদের আনন্দ কিছুটা ফ্যাকাসে হয়ে উঠেছে।
প্রতিবছর দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মীদের। বেগম জিয়া কারাগারে থাকায় গত বছরের মতো এবারও তা আর হচ্ছে না। তবে নেত্রীর অনুপস্থিতিতে এবার ঈদের নামাজের পরপরই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
এরপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের সিনিয়র নেতারা কারাবন্দি দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করবেন।
তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই ঈদের সময় নিজ নিজ এলাকায় চলে যাবেন। আবার শীর্ষ নেতাদের অনেকেই থাকবেন ঢাকায়।
একনজরে বিএনপি নেতারা কে কোথায় ঈদ করবেন:
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঈদ করবেন ঢাকায়। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঈদ করবেন ঢাকায়। তবে ঈদের নামাজ পড়ে নিজ নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লায় যাবেন তিনি। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ নিজ নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী এবং ড. আব্দুল মঈন খানও নিজ নির্বাচনী এলাকা নরসীংদিতে ঈদ করবেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়া লে.জেনারেল (অব:) মাহবুবুর রহমান এবং ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ঢাকায় ঈদ করবেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিজ নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামে ঈদ করবেন। মির্জা আব্বাস এবং নজরুল ইসলাম খান ওমরা হজ্ব পালনের জন্য সৌদিতে অবস্থান করছেন। স্থায়ী কমিটির এই দুই সদস্য সৌদি আরবে ঈদ করবেন। স্থায়ী কমিটির অরেক সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভারতে আছেন। অনুপ্রবেশের দায়ে সেখানে তাঁর নামে মামলা চলছে। সালাহ উদ্দিন জামিনে থাকলেও দেশ ত্যাগে নিষেজ্ঞা থাকায় তাকে ভারতেই ঈদ করতে হবে।
এদিকে এবার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, বেগম সেলিমা রহমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ ও অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান ঢাকায় ঈদ করবেন। আলতাফ হোসেন চৌধুরী নিজ এলাকা পটুয়াখালী,এম মোর্শেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন তাদের নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামে ঈদ করবেন। ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বরিশালে এবং শামসুজ্জামান দুদু চুয়াডাঙ্গায় ঈদ করবেন বলে জানিয়েছেন।
ঢাকার সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা এ মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আছেন। সপরিবারে তিনি সেখানেই ঈদ করবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আমেদ, রিয়াজ রহমান, সুকোমল বড়ুয়া থাকছেন ঢাকায়।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গত বছরের মতো এবারও নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঈদ করবেন। যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী ও হাবিব উন নবী খান সোহেলকে কারাগারে ঈদ করতে হচ্ছে। যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ঢাকায়, মজিবুর রহমান সরোয়ার বরিশালে, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকায়, খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী ও হারুন-অর রশিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঈদ করবেন।
এছাড়া দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহে এবং শামা ওবায়েদ ফরিদপুরে ঈদ করবেন। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ঢাকায়, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ঢাকায় এবং যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু কারাগারে ঈদ করবেন।