স্বৈরশাসন হটাতে ‘জনঐক্য’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান অবস্থা থেকে বেরুনোর উপায় কী? মানবসভ্যতার ইতিহাসে রয়েছে, এর উপায় একমাত্র জনগণের শক্তি দিয়ে এই ধরনের শাসকদেরকে যারা একদলীয় শাসন রক্ষা করতে চায়, যারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চায় তাদেরকে পরাজিত করতে হবে। সেজন্য আমাদের সবচেয়ে বড় যেটা প্রয়োজন ঐক্য, ঐক্য, ঐক্য।’
গত এক দশক বিরোধী দলের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই দেশে বিগত এক যুগেরও ওপরে অত্যন্ত সুপরিকল্পতভাবে সচেতনভাবে জনগণের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চলছে। বাংলাদে্শে যে চিত্র আমরা দেখছি আমাদের সকলের কাছে তা অত্যন্ত পরিচিত একটা চিত্র। ২০০৭ সালে এক-এগারোর সরকার আসার পর থেকে যে নির্যাতন এদেশে শুরু হয়েছে, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিরাজনীতিকরণ, রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে হবে গোটা জাতিকে। আরেকটি, যারা রাজনীতি করছেন তাদের সমাজে হেয় মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে এবং রাজনীতির সুন্দর মানুষদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে এবং সেটা ভয় দেখিয়ে, নির্যাতন করে কর, যৌন নির্যাতন করে।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘গত ১২ থেকে ১৩ বছর ধরে এই দেশে যা চলছে-এটা আমার মনে হয়, সাম্প্রতিককালে বিশ্বে এই ধরনের নির্যা্তন নজিরবিহীন। আপনারা নির্যাতিতদের মুখে শুনেছেন। এখানে বসে আছেন আমাদের ভাই-বোনেরা। ওই কোনায় এক বোন বসে আছেন, যিনি নির্বাচনের পূর্বে একটা দলের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তার চোখ দুইটি চলে গেছে, এখানে এক বোন কথা বলেছেন, তার সম্ভ্রম লুন্ঠিত হয়েছে। অসংখ্য, অসংখ্য চিত্র।’
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রধান দাবি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। এর পরের দাবি হচ্ছে, অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা- এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ বলে আমরা মনে করি। আমরা আহ্বান জানাই, অবিলম্বে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’
রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবস-২০১৯ উপলক্ষে ‘নিরবতাও নির্যাতনের কারণ হতে পারে’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়। সেমিনারের শুরুতে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, বিচারবর্হিভুত হত্যাকাণ্ডের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘রাইট টু লাইভ’ উপস্থাপন করা হয়। মানবাধিকার ডেস্কের প্রতিবেদন তুলে ধরেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী
অনুষ্ঠানে বিএনপির সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শামা ওবায়েদ, শিরিন সুলতানা, এবিএম মোশাররফ হোসেন, শামীমুর রহমান শামীম, হারুনুর রশীদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, মীর হেলালউদ্দিন, কাজী আবুল বাশার, আনোয়ার হোসেইন, মোরতাজুল করীম বাদরু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, আবুল কালাম আজাদ, শাহ নেছারুল হক, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান, ইউএনডিপিসহ কয়েকটি দেশের কূটনৈতিকরা উপস্থিত ছিলেন।