আওয়ামী লীগের চেয়ে সরকারের মন্ত্রীদের চেয়েও পেঁয়াজ এখন অনেক বেশি শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সাবেক যুবদল সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ এখন কাল নিকষ অন্ধকারে ঢেকে গেছে মন্তব্য করে আলাল বলেন, ‘জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে। জিয়া পরিবারকে যদি আমরা সূর্যের আলোর মত দেখি তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আমাদেরকে আমাবস্যার মতো দেখতে হবে।’
সাবেক যুবদলের এই সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আজকে জাতীয়তাবাদ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। পাসপোর্টে সিল মারা হচ্ছে জাতীয়তা ‘বাংলাদেশি’ উল্লেখ করে। এছাড়া স্মার্ট কার্ডেও বাঙালি না, জাতীয়তা লিখা হচ্ছে ‘বাংলাদেশি’। আর বাঙালি বাঙালি বলতে বলতে যে আওয়ামী লীগ নেতারা যে মুখে ফেনা তোলেন তারাই এখন আমাদের কাছ থেকে আইডিয়া নিয়ে চলেন।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্র ছিল মুক্তবাজার অর্থনীতি আর আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র শেখ মুজিবের সময় ছিল ‘সমাজতন্ত্র’। সেটাকে তারা মাটিচাপা দিয়ে বিএনপি ও জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করেছে। বিএনপির রাষ্ট্র পরিচালনার মূল উদ্দেশ্যের একটি ছিল বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা, আধুনিকায়ন করা। অথচ যে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সবসময় কথা বলেছে আজ সেই সেনাবাহিনীকে খুশি রাখার জন্য তারা যা যা করার সব করছে।’
আলাল আরও বলেন, ‘বিএনপির রাজনৈতিক দর্শন ও সম্পদগুলো একে একে আওয়ামী লীগ চুরি করে নিজেরা স্বার্থ হাসিলে প্রচার করছে। কিন্তু আমরা তাদের থেকে কিছু চুরি করিনি। কারণ আমাদের চুরি করার প্রয়োজন হয়নি। মনে রাখতে হবে- আমাদের দলটার বয়স ৪১ বছর।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজকের এই দেশ তো সেই বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশে কোথায় আজ? ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময় ও ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছিলাম সেই বাংলাদেশে কোথায়? এই বাংলাদেশ আজ আমাদের কাছে অচেনা। যে বাংলাদেশে মা-বোনেরা কখন ধর্ষিত হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না এবং সে ধর্ষণকারীরা হবে সরকারের আশ্রিত এবং কোলে থাকা লোকজন- এরকম বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম। যে বাংলাদেশে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীরা মারা যায়, সড়ক আইন নিয়ে শ্রমিকরা ধর্মঘট ডাকে এবং সেই ধর্মঘটে সমর্থন থাকে আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানের- এরকম বাংলাদেশ তো আমরা চাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে, কিন্তু ঘণ্টা পর ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও পেঁয়াজের দাম কমে না। পেঁয়াজের দাম আজও ২০০ টাকা কেজি, কোথাও কোথাও ২৫০ টাকা। মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের চেয়ে সরকারের মন্ত্রীদের চেয়ে পেঁয়াজ অনেক বেশি শক্তিশালী। পেঁয়াজের যে লোমগুলো আছে আমাদের মা-বোনেরা যেগুলো ফেলে দেয় সেগুলো লোম না হয়ে হাত হলে এতদিনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির গলা টিপে ধরতো এই বলে যে- ‘তোর কোনও ক্ষমতা নাই, তোর চেয়ে আমি পেঁয়াজের ক্ষমতা বেশি।’
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘এমন বাংলাদেশে বাস করছি আমরা যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে বলতে হয়- ‘রডের বদলে বাঁশ দেবেন না, সিমেন্টের বদলে বালি দেবেন না’। এমন বাংলাদেশ যে দেশে চোর-বাটপারদের পদায়ন করা হয় আর ভিন্নমতের লোকদের নামে মামলা দিয়ে অত্যাচার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘ক্যাসিনো সম্রাটকে অসুস্থতার কথা বলে আদালতে না নিয়ে হসপিটালে নেয়া হয়েছে। অথচ বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, তিনি আজ হাঁটতে পারেন না, হুইল চেয়ারে মাথা নিচের দিকে দিয়ে থাকতে হয়, তাঁকে জোর করে আদালতে হাজিরা দিতে নিয়ে যাচ্ছে। দেশে গণতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনতে পারলেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরে আসবে।’
সংগঠনের সভাপতি মাহফুজুল কবীরের সভাপতিত্বে ও কৃষকদলের সদস্য এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, কৃষকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লায়ন মোহাম্মদ আনোয়ার, আলহাজ্ব খলিলুর রহমান ভিপি ইব্রাহিম ও কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।