বিএনপি এই মুহূর্তে কোনো সংঘাতে যেতে চায় না বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার পূর্ব ঘোষিত বিএনপির শোভাযাত্রা পুলিশ করতে না দেওয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
আজ সকাল থেকে বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়। বিপুল সংখ্যক পুলিশের সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে দেখা যায়। পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপির কার্যালয় থেকে বের হতে বারবার নিষেধ করতেও দেখা গেছে।
পরে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আমাদের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটা শোভাযাত্রা হওয়ার কথা ছিল। সেইভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নেতাকর্মীরা কার্যালয় থেকে নিচে নামলে আমাদের ব্যবস্থা আমরা নেবো। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ যুদ্ধাবস্থা তৈরি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্তে আমরা কোনো সংঘাতে যেতে চাই না। আমাদের অধিকারগুলোর কথা বলছি। আপনারা দেখেছেন, সভা-সমাবেশ করতে হলে অনুমতি নিতে হয়। এমনকি সাংগঠনিক কার্যক্রম করতেও অনুমতি নিতে হয়।’
সারা বিশ্বে স্বীকৃত মানবাধিকার দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সেই মানবাধিকার রক্ষা করার জন্য আজকে শোভাযাত্রা করার কথা ছিল। আমাদের দেশে একটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আছে। যারা বয়স ১০ বছর, এই সময়ে তারা একটি মামালার তদন্ত নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’
এ সময় বিএনপির আমলে সংখ্যালঘুদের কোনো নির্যাতন করা হয়নি বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ভারতের সংসদে বলা হয়েছে – বিএনপির সরকারের আমলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। আমার এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা জোর গলায় বলতে পারি, বিএনপির আমলে এখানে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। সংখ্যালঘুর ওপর আওয়ামী লীগের আমলে যতটা হয়েছে, তা আর কখনো হয়নি।’
বাংলাদেশে এখন প্রতি মুহূর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী গত ১০ বছরে ১৫ শত ৯৯ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে। তারা এর নাম দিয়েছি বন্দুকযুদ্ধ। বিএনপির হিসাবে মতে, এটি ২ হাজারও বেশি। ১ লাখের ওপর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মামালা দেওয়া হয়েছে। আজকে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে যে ব্যক্তি ভিন্ন মত পোষণ করে তারে হয় গ্রেপ্তার করা হয়, না হয় গুম করা হয়। অনেক নেতা, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক গুম হয়েছে।’
এ সময় পাকিস্তান আমলের চাইতেও গত ১০ বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে দাবি করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ থেকে বারবার বাংলাদেশকে ডাকা হয়েছে। চার বছর আগে মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ যে অঙ্গীকার করেছিল, তার একটিও রক্ষা করেনি। এর জন্য গতবার সরকারের প্রতিনিধিদের তিরস্কার করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রক্রিয়া গ্রহণ করছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিক, বিদেশে নারী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, কিন্তু সরকার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।’
ভারতের নাগরিকত্ব আইন এনআরসির প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তাদের সংসদে খুব পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে। এটা নাকি বিএনপির আমলে হয়েছে। নতুন নাগরিকত্ব বিলে বলা হয়েছে, অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু মুসলিমদের দেওয়া হবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।